রাজশাহী: গেল কয়েক বছর ধরে লোকসান গুনতে গুনতে সোনালী আঁশ খ্যাত পাট নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু এ বছর ফলন ও দাম দুটোই ভালো হওয়ায় কৃষকের মলিন মুখে হাসি ফুটেছে।
এরই মধ্যে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারে নতুন পাট ওঠতে শুরু করেছে। বাজারে নতুন পাট বিক্রির শুরুতেই বাড়তি দামে সোনালী স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। তবে চারিদিকে এখনও সবুজের সমারোহ। মাঠে মাঠে পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার ১১ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু ১৩ হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে।
অর্থাৎ দুই হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ বেশি হয়েছে এবার। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১০ হাজার ৫১৭ হেক্টর। তবে পাট চাষ করা হয়েছিলো ১১ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, দুই সপ্তাহ ধরে পাট কাটা শুরু হয়েছে। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে পাট কাটা শুরু হবে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিলো। পাট ক্ষেতে পোকার আক্রমণও কম হয়েছে। তাই ফলন ভালো হয়েছে।
একই উপজেলার বজরপুর গ্রামের কৃষক মোবারক আলী বাংলানিউজকে জানান, সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে পাটের চাষ প্রতি বছরই বাড়ছে। এবার পাটের আবাদও ভালো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে পাটের দামও ভালো রয়েছে। পাটের দাম না কমলে তারা লাভের মুখ দেখবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, গতবছর শুরুতেই বাজারে পাটের দাম ছিলো ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা মণ। কিন্তু বর্তমানে ১৭শ’ থেকে ১৯শ’ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে পাট কাটা ও জাগ দেওয়া পুরোদমে শুরু হবে। তাই সেই পাট বাজারে আসতে আসতে দাম আরও বাড়বে।
চলতি সপ্তাহ থেকে যারা পাট কাটছেন তারা এখন তা জাগ দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শ্রাবণের বর্ষণ চলছে। বৃষ্টির পানিতে পুকুর, ডোবা ও খালগুলো টই-টম্বুর। তাই পাট জাগ দেওয়া নিয়েও কোনো দুশ্চিন্তা নেই। এখন বাড়তি দাম পেলে পাটে ভাগ্য ফিরবে কৃষকের।
রাজশাহীর পবা উপজেলার মনসুর জুটমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুনসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এবার পাটের ব্যবসা নিয়ে তারা প্রচণ্ড আশাবাদী। গত মৌসুমের শুরুতে ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হয়েছে। ভরা মৌসুমে তার দাম বাড়তে বাড়তে ২৪শ’ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে ছিলো।
এবার শুরুতেই যদি পাটের দাম ১৭শ’ থেকে ১৯শ’ টাকা মণ হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তা ২৮শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা বা তার চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে কৃষক, ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা সবাই লাভবান হবেন। তবে পরিস্থিতি বুঝতে আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেব দুলাল ঢালী বাংলানিউজকে জানান, এ বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। এটা ভালো লক্ষণ। গত বছরের চেয়ে বাজার দরও ভালো। তাই পাটের দাম বেশি পেলে চাষিরা পাট চাষে আরও আগ্রহী হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৬
এসএস/ওএইচ/