ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

আলুতে হাসির ঝিলিক চাষির চোখে-মুখে

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
আলুতে হাসির ঝিলিক চাষির চোখে-মুখে আলুতে হাসির ঝিলিক চাষীর চোখে-মুখে- ছবি: আরিফ জাহান

গ্রামীণ জনপদ ঘুরে: আকাশটা যেন গোমড়া মুখ করে বসে আছে। মেঘের ভেলা ভাসছে আকাশজুড়ে। মাঝেমধ্যে চলছে মেঘ-সূর্যর লুকোচুরি। বাতাসে হিমেল হাওয়া বইছে এখনো। বিকেল থেকে সকালের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শীত অনুভূত হচ্ছে। ফাগুনের শেষ ভাগে এসেও বিরাজ করছে অনেকটা বৈরি আবহাওয়া।

কিন্তু কর্মজীবী মানুষের বসে থাকার সুযোগ নেই। কাকডাকা ভোরেই কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠেন তারা।

গ্রামীণ জনপদের চিত্রটা বেশ ভিন্ন। কেউ করকরা (রাতের বাসী ভাত) নুন-মরিচে মেখে খেয়ে ছোটেন খেতের দিকে।

আবার অনেকেই ভাত-তরকারি গামলায় ভরে গামছায় মুড়িয়ে নিয়ে জমিতে যান। কাজের ফাঁকে জমির আইলে বসে সুযোগ-সুবিধামত খেয়ে নেন। কোনো কোনো শ্রমজীবী মানুষের কাছে বাড়ি থেকে সকালের খাবার পৌঁছে দেন অন্যরা।
 
বগুড়ায় চলতি মৌসুমের আলু তোলার কাজে ব্যস্ত বিভিন্ন গ্রামীণ জনপদ ঘুরে শ্রমজীবী নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা হয়। তাদের কাছ থেকেই পাওয়া এসব তথ্য।
আলুতে হাসির ঝিলিক চাষীর চোখে-মুখে- ছবি: আরিফ জাহান
এবার জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও বেশ ভাল। বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ মণ। বর্তমানে প্রতিকেজি আলু প্রায় ১০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সব খরচ বাদে প্রতিবিঘায় ১৮ থেকে ২২হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষক পর্যায়ে লাভ হচ্ছে। তবে নিজস্ব জমির মালিকদের বেলায় লাভের পরিমাণটা আরো বেশি। সবমিলিয়ে আলুতে হাসির ঝিলিক খেলছে চাষির চোখে-মুখে।
 
প্রায় ১৭ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছিলেন আজগর আলী। প্রতি বিঘা জমির বিপরীতে খরচ হয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে জমির বর্গাবাবদ গুণতে হয়েছে ৭ হাজার টাকা। বাকিটা বীজ, সার, ওষুধ, চাষ, পানি, বাঁধাই, লাগানো, উত্তোলন বাবদ ব্যয় হয়েছে।
 
আজগর আলী বাংলানিউজকে জানান, তার প্রতিবিঘায় ফলন হয়েছে প্রায় ১৩০ মণ। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ১০ টাকা কেজিদরে কিছু আলু বিক্রি করা হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতিবিঘায় প্রায় ২২ হাজার টাকা করে লাভ হয়েছে।
আলুতে হাসির ঝিলিক চাষীর চোখে-মুখে- ছবি: আরিফ জাহান
আরেক চাষি আবু সাঈদ বাংলানিউজকে জানান, তিনি সাড়ে ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তার প্রতিবিঘায় ফলন হয়েছে ১২০ মণ। নিজের জমি হওয়ায় তার লাভ কিছুটা বেশি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে এ জেলায় ৬৭হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। এসব জমিতে চাষ করা হয়েছে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্যানোলা, লাল পাকড়ী, হাগড়াইসহ বেশ কয়েক জাতের আলু।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুই নারী পাশাপাশি বসেছেন আলুর জমিতে। গাছ টেনে তুলছেন। মাটির নিচ থেকে বের করে আনছেন আলু। ভরছেন বাঁশের তৈরি ডালায়। বয়স্ক হলেও অনেক দক্ষতার সঙ্গে কাজটি করছিলেন তারা। চোখে-মুখে ছিল হাসির ঝিলিক।
 
আলুর আরেকটা খেতে দেখা গেলে নারী শ্রমিকদের লম্বা লাইন। তবে কাউকে কাউকে কিছুটা এলোমেলোভাবে বসে থাকতেও দেখা গেল। শুরুতে সবাই লাইন হয়ে বসলেও কাজের কারণে এমনটি হয়। প্রায় সপ্তাহখানেক আগে ক্ষেতের আলুর আইল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গাছগুলো মাটিতে শুয়ে পড়েছে। সেই জমির মাটির নিচ থেকে আলু উত্তোলন করছেন এই নারীরা।
আলুতে হাসির ঝিলিক চাষীর চোখে-মুখে- ছবি: আরিফ জাহান একইভাবে অনেক খেতে পুরুষ শ্রমিক বা মহাজনরা বসে মাটির তলা থেকে বের করে আনছেন আলু নামের ‘গুপ্তধন’। ডালা বা গামলায় ভরে অনেকে খেতের মধ্যেই স্তুপ আকারে রাখছেন। পরে বস্তায় ভরে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন সবাই।
 
আলু তোলার কাজে কয়েকটি শিশুকেও ভীষণ মনযোগী দেখা গেল। বাবা-মায়ের সঙ্গে জমিতে এসেছে ওরা। আলু উঠিয়ে প্লাস্টিকের বস্তার ওপর রাখছে এক শিশু।       
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের উপ-পরিচালকের হর্টিকালচার সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষী পর্যায়ে দামও ভাল পাচ্ছেন। প্রায় নব্বই শতাংশ জমির আলু এরই মধ্যেই উত্তোলন করা হয়েছে।
 
তিনি আরো বলেন, এ বছর আলুর জন্য আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। ফলনও ভাল হয়েছে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের দামও ভাল পাচ্ছেন। এসব বিবেচনায় আগামী মৌসুমে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে চাষীরা আলু  চাষ করবেন বলেও আশা প্রকাশ করে কৃষিবিদ আব্দুর রহিম।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।