বর্তমানে উপজেলার প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে লাভজনক লতিরাজ জাতের কচুর চাষ করছেন কৃষকেরা।
এক সময় এখানকার প্রায় সব জমিতেই জয়পুরহাট চিনিকলের জন্য আখের চাষ করা হতো।
কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে অন্য ফসল ফলিয়ে যেখানে ১০ হাজার টাকা মুনাফা করা কঠিন, সেখানে লতিতে লাভ পাঁচগুন। প্রায় কোনো যত্ন ছাড়াই সারা বছর আয় হতে থাকে লতি থেকে। শেষ পর্যায়ে কচু বিক্রিতে লাভ অনেক। আবার অনেকেই বেশি দুধ পেতে কচুর কাণ্ড সিদ্ধ করে গরুকে খাওয়ান।
পাটা বকুরা গ্রামের ভূমিহীন কৃষক আমির আলী উদ্ভাবন করেছিলেন লতিরাজ নামের সাদা জাতের এই বিশেষ ধরনের কচু। লম্বা সাইজের মোটা মোটা লতির অল্প কয়েকটিতেই কেজি হয়ে যায়। স্বাদে ও পুষ্টিতেও সেরা হওয়ায় দ্রুতই বাজারে শোরগোল ফেলে। আমিরের কাছ থেকে প্রথমে দুই/চারজন, পরে সারা উপজেলা হয়ে এখন গোটা বাংলাদেশেই লতিরাজের চাহিদা।
আমির আলী গত হয়েছেন অনেক আগেই। কিন্তু তার উদ্ভাবিত লতিরাজ অর্থনৈতিক মুক্তির দিশা দেখিয়েছে দারিদ্র্যপীড়িত সীমান্তঘেঁষা এ জনপদে।
বটতলি হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীর কেনা কচুর লতির স্তুপ থেকে নিয়ে একটি একটি করে লতি বেছে রাখছেন সুশান্ত দাস। রফতানির উদ্দেশ্যে লতিগুলোকে যত্নের সঙ্গে পরিষ্কার করছেন আরো একশ’র মতো মানুষ। লতি বাছাই, পরিষ্কার, পানি ঢালা, গোড়া কেটে সাইজ করা ও কলা গাছের খোলা দিয়ে প্যাকিং করছেন তারা।
একাধিক চাষি জানান, এক বিঘা জমিতে লতিরাজ জাতের কচু চাষ করতে খরচ হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর সারা বছর এখান থেকে আয় হয় ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। অতিবৃষ্টি, বন্যা বা খরায় যেমন কচু গাছের কোনো ক্ষতি হয় না, তেমনি নেই রোগ-বালাইয়েরও কোনো আক্রমণ।
প্রতিদিন সারা দেশের ২৫ থেকে ৩০ জন পাইকারি ব্যবসায়ী ছুটে আসেন বটতলির পাইকারি লতিহাটে। এ হাটে দিনে ১০০ টনের মতো লতির আমদানি হয়।
কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় ন্যায্যমূল্য থেকে সব সময়ই বঞ্চিত হন কৃষকরা। কেবলমাত্র একটি স্থায়ী বাজারের অভাবেই পাইকারি ব্যবসায়ী ও ফঁড়িয়ারা ঠকাচ্ছেন তাদের। ১২ কিলোমিটার দূরের জয়পুরহাট শহরে যখন প্রতি কেজি লতি ৩০ টাকা ও বগুড়া বা ঢাকায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, তখন বটতলির হাটে কৃষকের কাছ থেকে লতি কেনা হচ্ছে ৭/৮ টাকা দরে। অন্যদিকে বিদেশে রফতানিযোগ্য ছোট সাইজের লতির সর্বোচ্চ দর প্রতি কেজি ১৪/১৫ টাকা।
পাইকারি ব্যবসায়ী শাহিন রহমান জানান, প্রতিদিন টন টন কচুর লতি রফতানি হচ্ছে বিদেশে। মালদ্বীপ, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশেই যাচ্ছে পাঁচবিবির উন্নতমানের এই লতিরাজ জাতের কচুর লতি। আর সম্পূর্ণ এ কার্যক্রম চলছে কেবলমাত্র মানুষের ব্যক্তিগত উদ্যোগে, সরকারের কোনো ধরনের সহায়তা ছাড়াই।
চাষিদের দাবি, চাষাবাদ ছাড়াও এখানকার হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে লতিকে কেন্দ্র করেই। পরিবহন, বাছাই, ব্যবসাসহ নানা কাজে জড়িত তারা। এখন প্রয়োজন প্রশাসনের মাধ্যমে স্থায়ী বাজার প্রতিষ্ঠা করা। যেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা কৃষকের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করে সস্তায় পণ্য কিনতে না পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৭
আরএম/এএসআর