ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কৃষকের মুখে হাসি, ঘরে উঠছে সোনালি ফসল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৭
কৃষকের মুখে হাসি, ঘরে উঠছে সোনালি ফসল কৃষকের মুখে হাসি, ঘরে উঠছে সোনালি ফসল, ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: গত মৌসুমে চাষাবাদের খরচের তুলনায় ন্যায্য দাম পাওয়া যায়নি। এরপর এলো বন্যার ধকল। এসবের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আগাম জাতের আমন ধান মুশকিল আসান হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই এই ধান কাটার মহা উৎসব শুরু হয়েছে দিনাজপুরের ফসলি মাঠে।

বর্তমানে ধানের মূল্য বেশি থাকায় লাভবান হওয়ার আশায় মুখ ভরা হাসি নিয়ে আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষকেরা। সোনালী ফসল ঘরে তুলছে আর তা দিয়ে গোলা ভরছে তারা।

অপরদিকে দীর্ঘদিন কর্মহীন ছিল যে কৃষিশ্রমিকেরা, তাদেরও বড়ো খোশ মেজাজ। তাদেরও আয় রোজগারের পথ খুলে দিয়েছে মাঠভরা সোনালি ধান।

সারাদেশে ধানের জেলা ও খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত দিনাজপুর জেলার ১৩ উপজেলার ফসলি মাঠের আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে। ধানের বাড়তি দাম কৃষককে করে তুলেছে আশাবাদী।

দিনাজপুর জেলা কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩ উপজেলার ২ লাখ ৫৬ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আমন চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৭৩১ হেক্টর জমিতে। কৃষকের মুখে হাসি, ঘরে উঠছে সোনালি ফসল, ছবি: বাংলানিউজআগাম জাতের আমন চাষের মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ১৬৭ ও উফশী জাতের হয়েছে ৫ হাজার ৫৬৪ হেক্টর জমিতে। আগাম জাতের আমন চাষে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি হেক্টর জমিতে ৩ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন চাল। যার মধ্যে হাইব্রিড জাতের হেক্টরপ্রতি ৩ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন ও উফশী জাতের ২ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন চাল।

চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে চিরিরবন্দর উপজেলার মোট ৯২৪ হেক্টরের মধ্যে হাইব্রিড জাতের ১৯০ হেক্টর জমিতে ও উফশী জাতের ৭৩৪ হেক্টর, সদর উপজেলার ৩৯১ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ১৯০ হেক্টর ও উফশী জাতের ২০১, পার্বতীপুর উপজেলার ১ হাজার ৭২০ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৮২০ হেক্টর ও উফশী জাতের ৯০০ হেক্টর, বীরগঞ্জ উপজেলার ৩ হাজার ৪৭২ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ২ হাজার ৮৪০ হেক্টর ও উফশী জাতের ৬৩২ হেক্টর, বিরল উপজেলার ৩৪৬ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ১০৫ হেক্টর ও উফশী জাতের ২৪১ হেক্টর, নবাবগঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ১ হাজার ১৫০ হেক্টর ও উফশী জাতের ৩৩০

হেক্টর, ফুলবাড়ী উপজেলার ৮৫০ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৬৫০ হেক্টর ও উফশী জাতের ২০০ হেক্টর, বিরামপুর উপজেলার ২৫০ হেক্টর জমিতেই হাইব্রিড জাতের চাষ হয়েছে, খানসামা উপজেলার ১ হাজার ৯০ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৬১০ ও উফশী জাতের ৪৮০ হেক্টর, কাহারোল উপজেলার ৫০২ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ২১৫ ও উফশী জাতের ২৮৭ হেক্টর, বোচাগঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৫৭৭ হেক্টর ও উফশী জাতের ৮৩০ হেক্টর, হাকিমপুর উপজেলার ৬৩৯ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৩২০ হেক্টর ও উফশী জাতের ৩১৯ হেক্টর ও ঘোড়াঘাট উপজেলার ৬৬০ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ২৫০ হেক্টর ও উফশী জাতের ৪১০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আমন চাষ হয়েছে।

দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের রামনগর এলাকার কৃষক মো. শামীম বাংলানিউজকে জানান, গত বোরো মৌসুমে বিভিন্ন রোগ-বালঅইয়ের কারণে ফলন কম হয়। এছাড়া খরচের তুলনায় দাম কম পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয় দ্বিগুণ। এরপর ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় নতুন করে চারা রোপন করে চাষাবাদ শুরু করি। এবার ফলন ভালো হয়েছে। দামও বেশি রয়েছে গত মৌসুমের ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে বলে আশা করছি।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমের সকল ফসলি জমির আগাম জাতের আমন পরিপক্ক হয়ে কাটার উপযোগী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে জেলার আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ জমির আগাম জাতের ধান কাটা শেষ হয়েছে। এবার আগাম জাতের আমন ধানের ফলন বেশি হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা রয়েছে। চাষাবাদে খরচের তুলনায় এইবার বাজারে ধানের দাম বেশি। তাই কৃষক আনন্দিত। চলতি মৌসুমের আগাম আমন ধান বেচে তারা বেশ লাভবান হতে পারবে বলেই আশা।

তিনি দাবি করেন, কৃষকের বীজতলা তৈরি থেকে ধান কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত কৃষিবিভাগ সকল প্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।