ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ওরাই যেন খুলনার বৃক্ষমেলার প্রাণ!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৮
ওরাই যেন খুলনার বৃক্ষমেলার প্রাণ! বৃক্ষমেলা থেকে গাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে এক শিক্ষার্থী, ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর রোদের লুকোচুরি খেলা। বৃষ্টির ঝাপটা গায়ে লেগে আনন্দের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। কাদামাটির সঙ্গে অন্যরকম খুনসুটিতে মেতেছে ওরা। দলে দলে বন্ধুত্বের মাঝে চলছে কাদা ছোড়াছুড়ির প্রতিযোগিতা। এসবেরই দেখা মিলেছে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে। স্কুল-কলেজের তারুণ্যে ভরা শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) বৃক্ষমেলায় আসলেও মেতে উঠেছেন খেলায়। আবার কেউ কেউ কিনছেন ফল ও ফুলের গাছ।

সার্কিট হাউজ মাঠে পক্ষকালব্যাপী বিভাগীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, সাধারণ ক্রেতাদের চেয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই বেশি। তারা একদিকে যেমন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কিনছেন।

অন্যদিকে মাঠের ফাঁকা জায়গায় এককাট্টা হয়ে খেলায় মেতে আনন্দ-উৎসব করছেন।

মেলায় আসা শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ভালো লাগছে নানান জাতের আম, লিচু, পেয়ারা, বাতাবি লেবু, ওয়াটার লিলি, মহুয়া গাছ (ফল), চেরি ফুল গাছ, চুইঝাল, আমড়া গাছের চারা, ক্যাকটাস, ভারতীয় কাগজি লেবু ও বনসাই গাছ।
বৃক্ষমেলা, ছবি: বাংলানিউজসহপাঠীদের নিয়ে মেলার আসা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তাসিন বলে, স্কুলের পাশে মেলার মাঠ হওয়ায় মজাই আলাদা। তাই সুযোগ পেলেই আসা যায়। পছন্দের গাছ কেনার পাশাপাশি খেলাও যায়। সে শাওন নার্সারি থেকে তিনটি গাঁদা ফুল কিনেছে।

সরকারি সুন্দরবন কলেজের ছাত্র ফাহিম বলেন, ফুল-ফল দেখতে খুব ভালো লাগে। ভালো লাগে বন্ধুদের নিয়ে হালকা বৃষ্টিতে ভিজতেও। বৃক্ষমেলায় এসে একসঙ্গে এসব পেয়েছি।
বৃক্ষমেলায় শিক্ষার্থীরা, ছবি: বাংলানিউজ
বিভিন্ন গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে তাহিরা কুমকুম নামের এক গৃহিণী তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছেন। তিনি জানান, একটি ক্যাকটাস গাছ কিনেছেন। কিন্তু দাম অনেক বেশি।

মেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষের জেডএম মঞ্জুরুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় ২৯টি নার্সারিসহ ৫৮টি স্টল রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার মেলা শুরুর প্রথম পাঁচদিন বুধবার পর্যন্ত বেচাবিক্রি ভালো হয়েছে।

তিনি জানান, এই পাঁচদিনে ৮হাজার ৩৬টি ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছের চারা বিক্রি হয়েছে। যার টাকার পরিমাণ ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৭ টাকা। গত বছর পাঁচদিনে ২৪ শ’ ১৩টি গাছ বিক্রি হয়েছিলো। যার মূল্য ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮০ হাজার টাকা।
বৃক্ষমেলায়, ছবি: বাংলানিউজ
তবে মেলায় আসা নার্সারি ও স্টল মালিকরা বলেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, বেচাবিক্রি খুব একটা ভালো না। তারা বলেছেন, দেড়িতে মেলা শুরু হয়েছে। এছাড়া বৈরী আবহাওয়া। প্রচার-প্রচারণাও নেই তেমন একটা।

মেলায় আসা মেসার্স মোহাম্মদ নার্সারির মালিক মো. আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর মেলা শুরু হয় জুন মাসে। এবার শুরু হয়েছে জুলাইয়ে। তার ওপর আবহাওয়া বৈরী। সামনে আবার কোরবানি। এসব কারণে মেলায় বিক্রি কম হচ্ছে। তিনি জানান, মেলায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই যা কেনা-কাটা করছে।

মেসার্স হানিফ নার্সারির জাফর ইকবাল বলেন, অনেক শিক্ষার্থীই নানান ধরণের ফুল-ফলের গাছ দেখতে আসছেন। অনেকে আবার সাধ্য মতো বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ কিনছেন।  

‘সবুজে বাঁচি, সবুজ বাঁচাই; নগর-প্রাণ-প্রকৃতি সাজাই’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শনিবার (২১ জুলাই) খুলনায় শুরু হয়েছে বিভাগীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা। যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায়, সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

মেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলে ৫৮টি স্টল রয়েছে। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৮
এমআরএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।