ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষক

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৮
শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষক সবজিক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার করছেন কৃষক। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: ক্ষেতজুড়ে ছেয়ে আছে লাল শাক। পাশাপাশি ক্ষেতে আগাছাও একেবারে কম জন্মায়নি। তাই ক্ষেতের মধ্যেই বসেছিলেন কৃষক আব্বাস আলী। সেই কাকডাকা ভোরে জমির মাটিতে পা ফেলেন। এরপর থেকেই ক্ষেতের সবজি গাছগুলো ঠিকঠাক রেখে আগাছার গোড়ায় পাচুন (স্থানীয় ভাষা) চাচ্ছিলেন অবিরাম আব্বাস আলী।

কাজের চাপে সকালের খাবারের কথাও যেন মনে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। পরে অবশ্য বাড়ি থেকে খাবার আসার পর খাবারের কথা স্মরণ হয় তার।

ঝটপট মুখ-হাত ধুয়ে খাবার খেয়ে আবার একই কাজ শুরু করেন এই কৃষক।

শীতকালীন আগাম সবজি চাষে এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রামের কৃষকরা। কোদাল, পাচুন, মাথল, লাঙল-গরুসহ আনুষাঙ্গিক কৃষি সরঞ্জামাদি নিয়ে কাকডাকা ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন কৃষকরা। এরপর ক্ষেতে গিয়ে যে যার মতো কাজে নেমে পড়েন। সবজিক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার করছেন কৃষক।  ছবি: আরিফ জাহানতাদের কেউ দাঁড়িয়ে বা কোমর বাঁকিয়ে কোদাল মারতে থাকেন। আবার কেউবা গাছ ঠিকঠাক রেখে চারপাশ দিয়ে পাচুন চালাতে থাকেন অবিরাম। কেউ কেউ জমি প্রস্তুতির কাজের লাঙল-গরু দিয়ে হালচাষের কাজ করছেন। যদিও আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের আবর্তে গরু দিয়ে হালচাষ পদ্ধতি হারিয়ে যেতে বসেছে।   

শীতের সবজির বর্ণিল সবুজে ভরে উঠেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বেগুন, মূলা, করলা, পটল, পালং ও লাল শাকসহ রকমারি শীতের সবজি। শীতকালীন আগাম সবজি পেতে জমি প্রস্তুত করছেন একজন কৃষক।  ছবি: আরিফ জাহানবগুড়া জেলার কয়েকটি উপজেলার একাধিক সবজিখ্যাত গ্রাম ঘুরে শীতের সবজি নিয়ে কৃষকদের কর্মব্যস্ততার এমন দৃশ্য ওঠে আসে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে এ জেলায় আগাম জাত হিসেবে ৪৫০ হেক্টর জমিতে নানা জাতের সবজি চাষ করা হয়েছে। যা বাজারে উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি আরও ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে শীতের সবজি লাগাতে জেলার কৃষকরা চাষের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, শীতের আগাম সবজি চাষ করতে পারলে ভাল দাম পাওয়া যায়। এ কারণে জেলার কৃষকরা প্রত্যেক বছর আগামজাতের বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

তিনি জানান, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সবজি গ্রামগুলোয় নিয়মিত পরিদর্শন করে থাকেন। নানা ধরনের রোগবালাই সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দেন। সবমিলে কৃষক তার উৎপাদিত সবজির ভাল দাম পাওয়ায় বেশ খুশি বলেও মনে করেন এই কৃষিবিদ।

আব্দুল জব্বার, হায়দার আলী, সামছুর রহমানসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, অল্প পরিমাণ জমিতেই সবজি চাষ করা যায়। এজন্য অনেকেই সবজি চাষ করে থাকেন। বছরের বারো মাস সবজি চাষ করা গেলেও অন্য ফসল চাষ করা যায় না। এ কারণে জেলার অনেক কৃষক পরিবারই সবজি চাষের ওপর নির্ভরশীল। করলার মাচা তৈরিতে ব্যস্ত কৃষক।  ছবি: আরিফ জাহানতারা আরও জানান, তুলনামূলক কম সময়ে সবজি বাজারে তোলা যায়। নিয়মিত বিক্রি করা যায়। কমবেশি যাই হোক হাতে নিয়মিত টাকা আসে। তা দিয়ে সংসারের খরচ যোগানো সহজ হয়। এছাড়া পরিবারের খাবারের চাহিদা মেটানো যায়। আর শীতকালীন সবজি তাদের বেশ ভাল আয় দিয়ে যায়। এ কারণে অনেক কৃষক পরিবারই শীতকালীন সবজি চাষে এখন মাঠে চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন বলেও জানান এসব কৃষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৮
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।