রবি মৌসুমের বিভিন্ন জাতের ফসল লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। এরমধ্যে অন্যতম একটি ফসল হলো সরিষা।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খানপুর, সুঘাট, খামারকান্দি, গাড়ীদহ ইউনিয়নের পাশ দিয়ে করতোয়া ও বাঙালি নদী বহমান। নদী এলাকার এসব জমি তুলনামূলক উর্বর বেশি। সরিষা জাতের ফসলও ভাল হয় এসব জমিতে। এসব এলাকার বেশির ভাগ কৃষকই এবার তাদের জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা লাগিয়েছিলেন। ফলনও বেশ ভাল পেয়েছেন।
একাধিক চাষির সঙ্গে আলাপকালে সরিষা আবাদ সম্পর্কে এমনই তথ্য ওঠে আসে।
কৃষক হায়দার আলী বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান সময়ে তাদের মতো কৃষকদের অনেক ফসল চাষ করে লোকসান গুণতে হচ্ছে। সেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে তাদের সব সময় বাড়তি আয়ের চিন্তা করতে হয়। সেই ভাবনা থেকে এবার তিনি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা লাগান। ইতোমধ্যে কাটা মাড়াইয়ের কাজও শেষ করে ফেলেছেন। প্রতিবিঘায় এই জাতের সরিষার ফলন হয়েছে গড়ে ৭ মণ হারে।
এই কৃষকের ভাষ্য, সরিষা ফলন মন্দ হয়নি। দামও বেশ ভাল। বাড়তি আয়ের আশায় চাষ করে সরিষা থেকে বাড়তি লাভবান হয়েছেন তিনি।
মফিজুল ইসলামও এবার বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছিলেন প্রায় ৬ বিঘা জমিতে। গড়ে বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ মণ হারে। এছাড়া বর্তমানে অন্য ফসলের চেয়ে সরিষার বাজারদর ভাল। এ কারণে সরিষা আবাদ করে তিনি ঠোকেননি। বরং বেশ লাভবান হয়েছেন যোগ করেন এই কৃষক।
এসব কৃষকরা বাংলানিউজকে জানান, তাদের মতো কৃষকদের সব সময় বাড়তি আয়ের চিন্তা নিয়ে ফসল ফলাতে হয়। কারণ অনেক ফসল চাষ করে লোকসান গুণতে হয় অনেক সময়। সেই লোকসানের ধকল সামলে নিতে বিকল্প ফসল নিয়ে ভাবতে হয় তাদের।
কৃষক জয়নাল আবেদীন বাংলানিউজকে জানান, এবার শীতের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে ছিলো। এছাড়া সরিষা চাষে খুব একটা ব্যয়ও করতে হয় না। সরিষার জমিতে খুব বেশি চাষ দিতে হয় না। সার, বীজ, চাষ, সেচ, কীটনাশক, শ্রমিকসহ প্রতিবিঘা জমির বিপরীতে বড়জোড় ৬ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ সরিষা রকমভেদে ১৫০০ থেকে ১৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে গড়ে ৭ মণ হারে সরিষা পেলেও বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী সব খরচ বাদে তাদের ভালই লাভ হচ্ছে যোগ করেন কৃষক জয়নাল আবেদীন।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪ ও বারি-১৫ জাতের সরিষা বেশির ভাগ জমিতে লাগানো হয়েছে। ফলনও বাম্পার হয়েছে। পাশাপাশি কৃষক তার উৎপাদিত সরিষার ভাল দাম পাচ্ছেন বলেও জানান কৃষি বিভাগের ওই কর্মকর্তা।
এদিকে বুধবার (৩০ জানুয়ারি) উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শুবলী এলাকায় উদ্যান তাত্ত্বিক ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় বারি সরিষা-১৪ ফসল নিয়ে মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় দেড় শতাধিক এই জাতের সরিষা চাষি অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ড. জুলফিকার আলী হায়দার ও ড. শহিদুল আলম।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি