ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

জমি চাষেই যান্ত্রিকীকরণ, ছোঁয়া লাগেনি রোপণ ও কর্তনে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৯
জমি চাষেই যান্ত্রিকীকরণ, ছোঁয়া লাগেনি রোপণ ও কর্তনে ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনে ধান রোপণ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: জমি চাষে এখন প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি যান্ত্রিকীকরণের ছোঁয়া লাগলেও পিছিয়ে রয়েছে রোপণ ও কর্তনে। মাত্র ০.১ শতাংশ জমিতে রোপণ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে যন্ত্রের। 

অন্যদিকে, মাত্র ০.৮ শতাংশ জমিতে কর্তনে ব্যবহার করা হচ্ছে যন্ত্রের। যন্ত্রের ব্যবহার না থাকায় আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে কৃষকেরা।


 
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইউ) ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েক দশকের ব্যবধানে কৃষিতে বেড়েছে শ্রমিক সংকট তেমনি ধারাবাহিকভাবে কমছে কৃষি জমি। বর্তমানে ধান কাটা ও রোপণ মৌসুমে শ্রমিকের অভাব তীব্র থাকে। সামনের দিনে এ সংকট আরও বাড়বে। কেননা গত কয়েক দশকের ব্যবধানে কৃষিতে শ্রমশক্তি কমছে। জমি তৈরিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়লেও চারা রোপণ, কর্তন, মাড়াইসহ বেশ কিছু খাতে যন্ত্রের ব্যবহার এখনও পিছিয়ে রয়েছে। যন্ত্রের ব্যবহার না থাকার কারণে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কৃষকেরা।  

তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের জন্য কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করতে হবে কৃষি যন্ত্রপাতি। সরকারের ভর্তুকি সহায়তা আরও বেশি সম্প্রসারণের পাশাপাশি যান্ত্রিক অর্থায়ন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। আর দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
 
জানা যায়, কৃষকের খরচ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ট্রান্সপ্লান্টার ও হারভেস্টার মেশিন। চার সারি বিশিষ্ট রাইস ট্রান্সপ্লান্টার এক মেশিনেই একঘণ্টায় আড়াই বিঘা জমিতে চারা রোপণ করা যায়। অন্যদিকে, জিপিএস প্রযুক্তি সুবিধা সম্পন্ন হারভেস্টার দিয়ে একই সঙ্গে প্রতি ঘণ্টায় দেড় থেকে ২ একর জমির ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি করা যায়।
 
হারভেস্টারের মাধ্যমে খরচের পরিমাণ ৭০-৮০ শতাংশ কম, সময়ও ৭০-৮২ শতাংশ বাঁচানো সম্ভব। যন্ত্রটি ব্যবহার করলে ৭৫ শতাংশ কম শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। ধানের চারা রোপণে এখন সারা বিশ্বেই উন্নত প্রযুক্তি ও যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। কৃষিতে শ্রমিক সংকট মেটানো ও কৃষকের অর্থের অপচয় কমিয়ে আনতে যান্ত্রিকীকরণের কোনো বিকল্প নেই।
 
তবে দেশে এ দুটি যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে এসিআইসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া যন্ত্র দুটিতে সরকারের ৫০-৭০ শতাংশ ভর্তুকি সহায়তা রয়েছে।
 
এ বিষয়ে এসিআই লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বাংলানিউজকে বলেন, ধানের চারা রোপণ, কর্তন ও বস্তাবন্দি একটি শ্রমঘন কাজ। কৃষকের শ্রম, অর্থ ও সময় বাঁচাতে আমরা জাপানী প্রতিষ্ঠান ইয়ানমারের উন্নত মডেলের যন্ত্র দেশে চালু করেছি। শুকনো জমির পাশাপাশি এসিআই হারভেস্টার দিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়া ধান কাটার পাশাপাশি ১ ফুট পর্যন্ত কাদা পানির ধান কাটা সম্ভব। তবে যন্ত্রগুলো কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করতে ব্যাংকগুলোকে যান্ত্রিকীকরণে ঋণে উৎসাহ দিতে হবে। এজন্য সুদের হার ৪-৫ শতাংশে নির্ধারণের পাশাপাশি মোট সরবরাহকৃত ঋণের অন্তত ৩-৪ শতাংশ কৃষি যান্ত্রিকীকরণে দেবার সুপারিশ করা যেতে পারে।
 
সূত্র জানায়, দেশে গত অর্থ বছরে ধান ও গমের আবাদ হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ হেক্টর। ট্রান্সপ্লান্টিংয়ের ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার এখন শুধুমাত্র ধানের ক্ষেত্রেই করা সম্ভব হবে। দেশে যেহেতু বোনা ধানের প্রচলন রয়েছে। তাই রোপনের ক্ষেত্রে প্রায় ৭০ লাখ হেক্টর জমিতে ধানের রোপন করতে হয়।
 
এক হেক্টর জমির ধান ও গম হারভেস্টিং করতে প্রথাগত পদ্ধতিতে খরচ হয় প্রায় ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকা। যদিও যন্ত্রের মাধ্যমে এটি করলে খরচ হবে মাত্র ৮০০-৯০০ টাকা। একইভাবে ধান রোপণে প্রথাগত পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি খরচ ৮ হাজার ৪০০ টাকা। সেখানে যন্ত্রের মাধ্যমে করলে খরচ হবে মাত্র ৭৫০ টাকা। ফলে যান্ত্রিকীকরণের অভাবে কৃষককে হেক্টর প্রতি বাড়তি খরচ হচ্ছে ১৩-১৪ হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৯
এমআইএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।