একইভাবে ভারত থেকে আমদানি (এলসি) করা পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহে খুচরা হিসেবে প্রতিকেজি এলসি পেঁয়াজ ১২-১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
উৎপাদন এলাকায় বন্যা হওয়ায় ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে। দেশে অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে পেঁয়াজের জন্য উৎপাদনখ্যাত এলাকায় লাগানো অনেক পেঁয়াজের ক্ষেত কমবেশি নষ্ট হচ্ছে। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীদের। এ অবস্থায় পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না তারা। এছাড়া আবার সামনে রয়েছে রমজান মাস।
সোমবার (১১ মার্চ) বগুড়া শহরের ঐতিহ্যবাহী রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজারের একাধিক পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য ওঠে আসে। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা থেকে খানিকটা উত্তরে রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজার। রাজাবাজারে সিংহভাগ পাইকারি ব্যবসায়ী।
অপরদিকে ফতেহ আলী বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন। বাজার দু’টি পরস্পরের সঙ্গে লাগোয়া। বাজার দু’টির দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় কাঠালতলা তিনমাথা। এই তিনমাথা থেকে উত্তরে বড়গোলা সড়ক ও পূর্বে ফতেহ আলী ব্রিজ। কাঁঠালতলা-বড়গোলা সড়কের পাশে ঐতিহ্যবাহী রাজাবাজার অবস্থিত। ভোরের দিকে ওই সড়কে এলসি পেঁয়াজভর্তি ট্রাকের দেখা মেলে। ট্রাক থেকে পেঁয়াজ আনলোড করে স্ব স্ব পাইকারি মহাজনের গুদামে পৌঁছানো হয়। তাদের গুদামে দেশি পেঁয়াজের কোনো কমতি নেই। আর এসব পাইকারি মহাজনের ঘর থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনে থাকেন। লাগোয়া ফতেহ আলী বাজারে এসব পেঁয়াজ বিক্রি করেন তারা।
রাজাবাজারের রাজ ভান্ডারের মালিক রাধা বাবু বাংলানিউজকে জানান, পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য খ্যাত ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে বন্যা-ঝড়বৃষ্টিতে দেশি পেঁয়াজের বাজারে দামের প্রভাব পড়েছে। ভারতে দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি করা কমিয়ে দিয়েছেন।
কারণ হিসেবে তিনি জানান, এখানকার তুলনায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলে বর্তমানে দাম বেশি পড়ছে। এতে করে অনেক সময় লোকসান দিয়ে এলসি পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়। তাই ব্যবসা টিকে রাখতে যতটুকু প্রয়োজন শুধু ততটুকু পেঁয়াজ আমদানি করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা যোগ করেন রাজ ভান্ডারের মালিক রাধা বাবু।
মেসার্স এমআর ট্রেডার্সের মালিক মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বন্যায় একদিনে যেমন ভারতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে তেমনি অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে পেঁয়াজের জন্য খ্যাত পাবনা অঞ্চলের ক্ষেতগুলো অনেকটা নষ্ট হয়ে পড়েছে। এছাড়া জমিতে পানি থাকায় চাষিরা ঠিকমত পেঁয়াজ উঠাতে পারছেন না। এতে করে চাহিদার তুলনায় বাজারে কিছুটা ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়তি বলে দাবি এই ব্যবসায়ীর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ২৫-২৬ টাকা ও ভারত থেকে প্রতিকেজি এলসি পেঁয়াজ ১৪-১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পাইকারি ও খুচরা বাজার একেবারে লাগানো। তাই বেশি লাভ করার সুযোগ নেই। অন্য সময়ের মতোই লাভ হচ্ছে। আগের তুলনায় এখন ব্যবসায় বেশি পুঁজি খাটাতে হচ্ছে।
ক্রেতা মুক্তার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পাইকারি বাজারে শুধু বস্তাভর্তি পেঁয়াজ আর পেঁয়াজ। কিন্তু খুচরা বাজারে এর যেন কোনো প্রভাবই নেই। চাহিদার তুলনায় বাজারে পেঁয়াজ নেই বলছেন ব্যবসায়ীরা। এই অজুহাতে ক্রেতার কাছ থেকে দাম বেশি নিচ্ছেন তারা অভিযোগ ওই ক্রেতার।
এনামুল হক তারেক নামে আরেক ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, সব সময় ব্যবসায়ীদের ইচ্ছেমতো সবকিছুর দাম ওঠা-নামা করে। পেঁয়াজের বেলায়ও তাই। এটা নতুন কিছু নয়। ব্যবসায়ীর মর্জি মেনেই বেঁচে থাকার তাগিদে বাজারে এসে পেঁয়াজে কিনতে হয়। তাই বাড়তি দামের কথা না বলায় ভাল যোগ করেন ক্ষুব্ধ ওই ক্রেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি