বিশেষ করে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত গোদাগাড়ী, তানোর ছাড়াও দুর্গাপুর উপজেলার রুক্ষ মাটিতে এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাল্টা চাষ বেড়েছে। এতে সফলতাও এসেছে আশানুরূপ।
কম খরচে অধিক লাভের কথা উল্লেখ করে কৃষক আইনাল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি গাছ তিনি ১শ টাকা দরে কিনেছেন। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে একেকটি গাছ ১০ বছর বেঁচে থাকে ও ফল দেয়। এতে বছর বছর চারা কেনার খরচ লাগে না। তাছাড়া মাল্টার জমিতে একইসঙ্গে ফসলও রোপণ করা যায়। তাই একই জমিতে তিনি এবার রসুনও বুনেছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
খরচের প্রশ্নে আইনাল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক বিঘা জমি থেকে এক লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারেন। এজন্য তার দেখা দেখি অন্য কৃষকরাও এখন মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন বলেও জানান আইনাল হক।
জানতে চাইলে কৃষিবিদ শরীফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দেশে প্রথম মাল্টা চাষ শুরু হয় পাহাড়ি অঞ্চলে। তখন ধারণা জন্মেছিল এই ফলটি বুঝি কেবল পাহাড়েই ভালো হয়। কিন্তু সেই বিভ্রম কাটতে বেশি সময় লাগেনি। বাড়ির বেলকুনি ও ছাদে টবের মধ্যে মাল্টা লাগান শৌখিন মানুষরা। এরপর অল্প সময়ে ফল পেয়ে অবাকও হন। তার পরে মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন সমতলের কৃষকরাও। উদ্ভাবিত বারী-১ জাতের মাল্টার চারা নিয়ে অল্প জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করেন। এতে সফলতা আসায় মাল্টায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন রাজশাহীর উঁচুতে থাকা বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। ধীরে ধীরে এখন সম্ভাবনাময়ী মাল্টা চাষ ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন এলাকায়। লাভজনক হওয়ায় আম প্রধান রাজশাহীতে জায়গা নিতে শুরু করেছে পাহাড়ের ‘মাল্টা’। বাণিজ্যিকভাবে বিঘার পর বিঘা মাল্টা চাষ হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে শরীফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, রোগ প্রতিরোধকারী মাল্টার ফলন পাওয়া যায় বছরে দু’বার। এটি নিয়মিত ফল দানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত। গাছ খাটো, ছড়ানো ও ঝোপালো। মধ্য ফাল্গুন থেকে ফুল আসে। বৈশাখ মাসে ফল ভাঙার উপযোগী হয়। আবারও শ্রাবণ মাসে ফুল আসে। কার্তিক মাসে দ্বিতীয়বার ফল পাওয়া যায়।
ফলটি গোলাকার ও মাঝারি (১৫০ গ্রাম) আকৃতির। পাকা ফলের রঙ সবুজ। ফলের পুষ্প প্রান্তে পয়সা সদৃশ সামান্য নিচু বৃত্ত বিদ্যমান। বারী মাল্টা-১ ফলটির নিচের দিকে পয়সা সদৃশ একটি গোলাকার দাগ থাকে। শাস হলুদ ভাব, রসালো, খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু। গাছ প্রতি ৭০-৮০টি ফল ধরে। এখন সব অঞ্চলেই এটি চাষপোযোগী।
উত্তরের সম্ভাবনাময়ী মাল্টা চাষের প্রশ্নে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) শামসুল হক বাংলানিউজকে বারী-১ জাতের মাল্টা এখন সমতলেই ভালো হচ্ছে। স্বাদেও বেশ মিষ্ট। উচ্চ ফলনশীল জাতের এই মাল্টা বছরে দু’বার হয়। এজন্য কৃষকদের ঘরে লাভের অংকটাই বেশি। তবে এই ফলের জন্য খুব সতর্ক থাকতে হয়। অন্য ফসলের চেয়ে অনেক বেশি পরিচর্যাও করতে হয়। না হলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান রাজশাহী কৃষি বিভাগের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
এসএস/এএটি