এরমধ্যে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, বাগানবিলাস, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, কসমস, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, মোরগঝুটি, কলাবতী ও জবা ফুল অন্যতম। সবমিলে বগুড়ায় প্রায় ১৫ জাতের ফুল চাষ হচ্ছে বর্তমানে।
গেলো ছয় বছর আগেও এ জেলায় মাত্র চার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হতো। সেখানে বর্তমানে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে ফুল লাগিয়েছেন চাষিরা। বাণিজ্যিকভাবে ক্রমেই বাড়ছে ফুল চাষ। তাই ফুলের ঘ্রাণেই বাড়তি আয়ের স্বপ্নে বিভোর চাষিরা।
বগুড়া জেলার কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার ফুল চাষিদের সঙ্গে কথা হলে ফুল চাষ সম্পর্কে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বাবলু সূত্রধর বাংলানিউজকে জানান, কমবেশি জেলার ১২ উপজেলাতেই ফুল চাষ হয়। তবে বগুড়া সদর, শেরপুর, শিবগঞ্জ ও সোনাতলা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করছেন চাষিরা।
কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও জানান, বাণিজ্যিকভাবে এ জেলাতে ২০১২ সাল থেকে ফুল চাষ শুরু হয়। এরপর থেকে ফুল চাষের আবাদ তালিকা বাড়তেই থাকে। বর্তমানে এ জেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের চাষের ফুল চাষ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলার মধ্যে সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হয়ে থাকে। এরমধ্যে গোকুল, মহাস্থান ও বাঘোপাড়া এলাকা অন্যতম। এসব এলাকায় ছোট-বড় একাধিক নার্সারি ছাড়াও সাধারণ আবাদি জমিতেও ফুল চাষ করা হচ্ছে। বাড়ির আঙিনাসহ কোথাও সামান্য জমি ফেলে রাখেননি এসব এলাকার চাষিরা। আবার এলাকার অনেক বেকার যুবক চাকরির পেছনে ঘোরা বাদ দিয়ে ফুল চাষে নেমে পড়েছেন। ফুল চাষেই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তারা।
তাদেরই একজন গোকুল গ্রামের মনিরুল ইসলাম। পড়াশোনা শেষ করার পর বেশ কয়েক বছর চাকরির পেছনে ছুটেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। শেষমেষ অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ফুল চাষে নেমে পড়েছেন। প্রায় তিন বছর ধরে ফুল চাষ করছেন তিনি। ফুল চাষই তাকে স্বাবলম্বী করেছে বলে জানান মনিরুল ইসলাম। একই কথা জানালেন মহাস্থান এলাকার বেল্লাল হোসেন ও জসিম উদ্দিন।
বাবলু মিয়া নামের একজন ফুল চাষি বাংলানিউজকে জানান, কয়েক বছর ধরে ফুল চাষ করে আসছেন তিনি। এর আগে জমিতে ধানসহ অন্য ফসল চাষ করতেন। কিন্তু বার বার লোকসান গুণতে গিয়ে তিনি ওইসব ফসল চাষ ছেড়ে দেন। নিজেকে ফুল চাষে মনোনিবেশ করেন।
এই ফুল চাষি জানান, এবার তিনি সাড়ে তিন বিঘার বেশি জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করেছেন। এই জমির ফুল বিক্রি করে বছরে সব খরচ বাদে ৫০ হাজারের অধিক টাকা লাভ হয়। এছাড়া সব সময়ই কমবেশি ফুল বিক্রি করা যায়। এতে পকেটেও নগদ টাকা আসে। সংসার খরচ চালাতে তেমন একটা বেগ পেতে হয় না।
ফুল চাষি মফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি ফুল চাষ করে আসছেন। ফুল বিক্রির টাকায় সময়ের ব্যবধানে তিনি নার্সারি গড়ে তোলেন। এখন তার নার্সারিতে একাধিক ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এসব ব্যক্তিরা তার নার্সারি কর্ম করে সংসার চালাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফুলের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন জাতীয় দিবস ছাড়াও মানুষ এখন প্রতিনিয়িত বাসা বাড়ির জন্য ফুল কিনে থাকেন। নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এখন ফুল দিয়ে একে অপরকে বরণ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন। এ কারণে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমেই বাড়ছে রকমারি ফুলের ব্যবহার।
ফুল বিক্রেতা মিলন বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে এ জেলায় যেসব জাতের ফুল চাষ হচ্ছে এক সময় এসব জাতের ফুলের চাহিদা মেটাতে তাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ফুলের ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু এখন সেসব জাতের ফুল বগুড়ায় চাষ হচ্ছে।
হাসান নামের আরেক ফুল বিক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, জেলায় চাহিদা মতো ফুল পাওয়াতে তারা ক্রেতার হাতে অনেক ভালোমানের ফুল তুলে দিতে পারছেন। বিশেষ কিছু দিবস ছাড়া দামও তুলনামূলক কম পাচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ। এছাড়া বর্তমানে জেলার ফুল এখানকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে বলেও জানান ফুল বিক্রেতা হাসান।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৯
এমবিএইচ/এমজেএফ