ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের দেওডোবা গ্রামটি ধান উৎপাদনে প্রসিদ্ধ। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের আয়ের মূল চালিকা শক্তি কৃষির বিভিন্ন ফসল।
পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না থাকলেও ইট পোড়ানো হয় এ ভাটায়। প্রথমদিকে স্থানীয় প্রশাসন এই ভাটায় যেন ইট পোড়ানো না হয় সেজন্য কয়েক দফায় অভিযান চালায়। কিন্তু পরবর্তীকালে অদৃশ্য কারণে ইট পোড়ানো হলেও প্রশাসন নিরবতা পালন করছে বলে কৃষকদের দাবি। দেওডোবা গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দুই দোন (২৭ শতাংশে ১ দোন) জমিতে বোরো আবাদ করেন তিনি। এতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। কিছুদিনের মধ্যে ধান ঘরে তোলা যেত। এরই মধ্যে ইটভাটার আগুনের তাপে পুড়ে যেতে শুরু করে তার স্বপ্নের লালিত ফসল। কষ্টে অর্জিত ফসল ঘরে তোলার আগেই পুড়ে চিটা হয়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধের চিন্তায় পড়েছেন তিনি। ধান ঘরে না উঠলে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা পরিবার পরিজনের খাদ্যের যোগান নিয়েও শঙ্কায় আছেন তিনি। ভাটা মালিক ফারুক হোসেনকে বার বার বলার পরও ক্ষতিপূরণ পাননি বলে জানান তিনি।
একই গ্রামের কৃষক দবিয়ার রহমান, ছপিয়ার রহমান ও জয়দেব জানান, ফসলি জমির ওপর এই ভাটাটি গড়ে ওঠার শুরু থেকে স্থানীয় কৃষকরা প্রতিবাদ করেও সুফল পাননি। অনেক বাধার পরেও অদৃশ্য কারণে এ ভাটায় ইট পোড়ানো হয়েছে। এরই মাঝে ওই ভাটার পাশে তাদের ফসলি প্রায় ২০ বিঘা জমির ধান পুড়ে গেছে। গত বছর তারা বিঘা প্রতি প্রায় ২৫ মণ হারে ধান পেয়েছিলেন। এ বছর উঠতি ধান চিটা হয়ে যাওয়ায় পরিবারের খাদ্য নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ ইটভাটা বন্ধের জোর দাবি জানান তারা। এএফএইচ ব্রিকসের ব্যবস্থাপক সুমন মিয়া বাংলানিউজকে জানান, ইটভাটার চেম্বার বসে যাওয়ায় গরম গ্যাস বের হয়ে কিছু ধান ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষতিপূরণ দিতে শিগগিরই কৃষকদের সঙ্গে বসা হবে। এরই মধ্যে প্রায় ৫ লাখ ইট পোড়ানো হয়েছে। তবে ভাটার বৈধ কাগজপত্র ও ইট পোড়াতে জেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্র রয়েছে বলে দাবি করলেও তা দেখাতে পারেননি তিনি।
ওই গ্রামের ইউপি সদস্য রনজিৎ কুমার বাংলানিউজকে জানান, এএফএইচ ব্রিকসের ইট পোড়ানোর আগুনের তাপে ভাটা এলাকার পাশের প্রায় ২০ বিঘা বোরো ধান পুড়ে গেছে বলে কৃষকরা জানালে তিনি ভাটা মালিককে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে বলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ পরিচালক জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৯
আরএ