সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক বছরের ব্যবধানেই দেশের খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা ৭০ হাজার ৮৯৪টি বেড়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ১৪২টি।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে দেশে খামারের সংখ্যা ছিলো ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯৯১টি। এসব খামারে কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট মোট গরুর সংখ্যা ছিলো ২৮ লাখ ১৪ হাজার ২৪৮টি। এবছর এ সংখ্যা ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ১৪২। ফলে এক বছরেই ৭০ হাজার ৮৯৪টি গরু বেড়েছে।
সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে আসন্ন ঈদুল আজহা নিয়ে কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট সুস্থ-সবল গবাদি পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা, ভেটেরিনারি সার্ভিসসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে মতবিনিময় সভা হয়। অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. হিরেশ রঞ্জন ভৌমিকের সভাপতিত্বে ওই সভায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, পুলিশ, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় দেশে মোট গরুর সংখ্যা ও ভারত থেকে বৈধ পথে গরু আমদানির চিত্র উঠে আসে।
সভায় বিজিবি প্রতিনিধি জানান, বর্তমানে বৈধ পথে ভারত থেকে গরু আমদানির সংখ্যা কমে ৯২ হাজারে দাঁড়িয়েছে; যেখানে ২০১৩ সালে এর সংখ্যা ছিলো ২৩ লাখ।
বিগত বছরগুলোর হিসাব অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চলের সাতটিসহ মোট ২৩টি করিডর দিয়ে ২০১৪ সালে ২০ লাখ, ২০১৫ সালে ৮ লাখ, ২০১৬ সালে ১১ লাখ, ২০১৭ সালে ৯ লাখ ও ২০১৮ সালে ৭ লাখ গরু ভারত থেকে বৈধ পথে বাংলাদেশে আসে। তবে বর্তমানে দেশে গরু উৎপাদন বাড়ার ফলেই মূলত কোরবানির গরুর জন্য আর ভারতের ওপর নির্ভর করতে হয় না।
এছাড়া সীমান্ত দিয়ে যেন গরু প্রবেশ না করতে পারে সে বিষয়ে বিজিবিকে কঠোর নজরদারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গরু পরিবহনের ট্রাকগুলো যেন চাঁদাবাজির শিকার না হয় এবং আরিচা ঘাটে গরুবাহী ট্রাকগুলো পারাপারে যাতে অগ্রাধিকার যায়- এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অনুরোধ করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. হিরেশ রঞ্জন ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানির ঈদের পশু ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। কোরবানির হাট ব্যবস্থাপনা, মেডিক্যাল টিম, কোরবানির মাঠে স্টল বরাদ্দ কিভাবে হবে- এসব বিষয়ে আমরা মতবিনিময় করেছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যেন একটাও গরু ঢুকতে না পারে তা আমরা বিজিবিকে বলেছি। পাশাপাশি গরুবাহী ট্রাকে যেন চাঁদাবাজি না হয় সেই বিষয়ে পুলিশকে বিশেষ নজরদারি করতে বলা হয়েছে।
ড. হিরেশ রঞ্জন বলেন, চাষি ও খামারিরা পশুর দাম বেশি পাচ্ছেন। ফলে পশু পালনে তাদের আগ্রহও বাড়ছে। সরকার এ বিষয়ে নানা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। কোরবানির ঈদে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বেশি পশু মজুদ আছে। ভারত থেকে কোরবানির পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। দেশের খামারিদের বাঁচাতে বাইরে থেকে একটা গরুও দেশে প্রবেশ করতে পারবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, এ বছর দেশীয় পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। কোরবানির জন্য মোট এক কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি গরু, ছাগল ও মহিষের যোগান রয়েছে। এর মধ্যে গরু-মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৮২ হাজার। আর ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭২ লাখ।
অন্যদিকে দেশে বেড়েছে খামারের সংখ্যাও। ২০১৮ সালে খামার ছিলো ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯৯১টি। বর্তমানে এ সংখ্যা ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬টি। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি পশু রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক খামারই বেশি। স্থানীয় ব্রিড রেড কাউ ব্যাপকহারে এখানে সফলতা দেখিয়েছে। মাংস ও দুধের দাম তুলনামূলকভাবে বাড়তি হওয়ায় গরু পালনে উৎসাহ বেড়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। এই বিভাগে অধিকাংশ এলাকা উঁচু হওয়ায় পর্যাপ্ত গো-খাদ্যও রয়েছে।
আর গরুর সংখ্যা সবচেয়ে কম রয়েছে সিলেট বিভাগে। এর কারণ হিসেবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, ওই বিভাগের অধিকাংশ এলাকা নিচু হওয়ায় এবং গো-খাদ্যের অভাব রয়েছে। তাই এই বিভাগে বাণিজ্যিক গরুর সংখ্যা কম।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (খামার) ড. এবিএম খালেদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে ভারত থেকে গরু আমদানি কমে আসছে। আমরা আশা করছি, অচিরেই ভারত থেকে গরু আমদানির সংখ্যা শূন্যের কোঠায় আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এমআইএস/এসএ/এমএ