ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

এবার বন্যায় বগুড়ায় ৩১৫ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
এবার বন্যায় বগুড়ায় ৩১৫ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে ধান। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: ‘রোপা আমন মৌসুমের ধান লাগানোর সময় প্রায় শেষ’ বলছিলেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কৃষক আব্দুর রশিদ। কিন্তু জমি থেকে বন্যার পানি নামা এখনো শেষ হয়নি। এখনো পুরো জমি পানিতে নিমজ্জিত। কবে নাগাদ জমি থেকে বন্যার পানি নামতে পারে বলে মনে করেন –এমন প্রশ্নের জবাবে অভিজ্ঞ এ কৃষক বুকভরা হতাশা ছেড়ে বলেন, ‘জানা নেই বাবা। একমাত্র ওপরওয়ালাই বলতে পারেন’।

যদিও কৃষক বিভাগ বলছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কৃষক তাদের জমিতে চলতি মৌসুমের রোপা আমন চাষ করতে পারবেন। এ সময়ের মধ্যে যদি নতুন করে বৃষ্টিপাত না হয়।

আবার নতুন করে নদীর পানি না বাড়ে তাহলে বন্যার পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার পর কৃষক তার জমিতে রোপা আমন লাগাতে পারবেন।  
 
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে যমুনার পানি বেড়ে এবার বন্যা দেখা দিয়েছে। আবার যমুনার পানি যখন কমতে থাকে তখন যমুনা লাগোয়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধহীন বাঙালি নদীতে পানি বাড়তে থাকে। এতে যমুনা ও বাঙালি নদী বেষ্টিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, গাবতলী, শেরপুর, শাজাহানপুর, সদর, শিবগঞ্জ ও নন্দীগ্রাম উপজেলার প্রায় ২০ হাজার ৬৭০ হেক্টর বিভিন্ন ফসলি জমি তলিয়ে যায়। এতে সবমিলে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩১৫ কোটি টাকা। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৮৪ হাজার ৪৫ জন কৃষক পরিবার। অবশ্য এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরে তালিকা পাঠানো হয়েছে।
 
তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককের পুনর্বসানের বিষয়টি নির্ভর করছে কৃষি প্রণোদনা পাওয়া সাপেক্ষে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষিক কর্মকর্তা ফরিদুর হোসেন।
 
তিনি জানান, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে যমুনা বেষ্টিত জেলার সারিয়াকান্দি, ‍সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায়। এছাড়া রয়েছে গাবতলী, বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ ও নন্দীগ্রাম উপজেলা।

এসব উপজেলার বিভিন্ন ধরনের ফসল বাঙালি নদীর পানিতে ডুবে গেছে বলেও জানান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর।  
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাটের। কারণ এ বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমি। সে অনুযায়ী ১২ হাজার ২৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিল। এরমধ্যে বন্যায় তলিয়ে যায় আট হাজার ৬৮৯ হেক্টর জমির পাট।
 
এছাড়া যমুনা ও বাঙালি নদীতে সৃষ্ট এবারের বন্যায় তলিয়ে গেছে চলতি রোপা আমন মৌসুমে লাগানো এক হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমির ধান, উঠতি রোপা আউশ মৌসুমের সাত হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমির ধান, দুই হাজার ৩৫৭ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলা, ৫০৩ হেক্টর জমির বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি, ২৫ হেক্টর জমির মরিচ, ১২ হেক্টর কলা বাগান ও পাঁচ হেক্টর জমির আখ।
 
যমুনাপাড়ের কৃষক সামছুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রায় দেড় বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছিলেন তিনি। এক রাতেই তার পুরো মরিচ ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। কিছু দিনের মধ্যেই গাছে পচন ধরে। বন্যার পানি নেমে গেলেও জমির বুকের ক্ষত এখনো পুরোপুরি শুকায়নি। এছাড়া নতুন করে আবারো ওই জমিতে কোনো কিছু চাষ করবেন সেই পুঁজিও নেই তার (যোগ করেন কৃষক সামছুল)।
 
যমুনাপাড়ের আরেক কৃষক আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে জানান, প্রায় তিন বিঘা জমিতে রোপা আউশ জাতের ধান লাগিয়ে ছিলেন তিনি। ধান কাটার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে এক রাতে পুরো জমির ধান তালিয়ে যায়। ফলে ক্ষেতের এক ছটাক ধানও বাড়ি তুলতে পারেননি রউফ। এছাড়া বন্যার পানিতে বসতভিটাও তলিয়ে গিয়েছিল। এখনো চোখে শুধুই অন্ধকার দেখছেন কৃষক রউফ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
এমবিএইচ/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।