এছাড়া বাজার দরও তেমন ভাল ওঠেনি বলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন অনেকে। বাজার দর কিছুটা বাড়লে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে আশা করেন কৃষকরা।
ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চন্দ্র প্রসাদ গ্রামের চাষি মো. সোহেল জানান, এ বছর তিনি ২ একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। কিন্তু ফলন সন্তোষজনক হয়নি। তাই লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
একই এলাকার আমন চাষি নাছির পাটোয়ারি বলেন, একদিকে বুলবুলের ক্ষতি অন্যদিকে ধানে প্রচুর পরিমাণে চিটা এবং ছেনি পোকার (শীষ কাটা লেদা পোকা) আক্রমণ। ধান মাড়াই করতে গিয়ে হতাশ হয়েছি। ক্ষেতের তিন ভাগের দুই ভাগ ধানই নষ্ট হয়ে গেছে।
৪ একর জমিতে ধান আবাদ করেছেন মো. শামিম। তিনিও ফলন নিয়ে সন্তুষ্ট নন। বলেন, একদিকে বাজার দর কম অন্যদিকে চিটায় ধরেছে। এতে মাড়াই খরচও ঠিকমত উঠবে না।
এদিকে ওমর আলী নামে এক চাষি বলেন, আমার ক্ষেতের ফলন কিছুটা ভালো হয়েছে। এনজিও থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আমনের আবাদ করেছি। একর প্রতি দুই/তিন মণ করে ধান হয়েছে।
তবে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবি করছে কৃষিবিভাগ। তাদের মতে, কিছু স্থানে সামান্য ক্ষতি হলেও বেশিরভাগ এলাকায় ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান আবাদ হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে ধান কাটার ধুম পড়ে গেছে। ধান গোলায় তুলছেন কৃষক-কৃষাণীরা। অনেকেই আবার বিক্রিও শুরু করে দিয়েছেন। ফলন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চাষিদের মধ্যে। বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এবং পোকার আক্রমণ কৃষকদের জন্য শঙ্কার কারণ। তবে অনেক চাষি ফলন নিয়ে খুশি। বাজার দাম বৃদ্ধি এবং সরকার থেকে সবার ধান সংগ্রহ করা হলে চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খোকন চন্দ্র শীল বলেন, ভেলুমিয়ার চন্দ্র প্রাসাদ এলাকার কিছু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অনেকের ফলন ভালো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণেও কৃষকদের ফলনে সমস্যা হয়েছে। এছাড়া পোকার আক্রমণও আছে।
কৃষি বিভাগের হিসেবে ভোলায় এ মৌসুমে ৩ লাখ ৭৪ হাজার চাষি আমনের আবাদ করেছেন। এবছর জেলার সাত উপজেলায় ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে সদরে ২৫ হাজার ৫৪০ হেক্টর, দৌলতখানে ১৬ হাজার ৫৪০, বোরহানউদ্দিনে ১৮ হাজার ৫০০, তজুমদ্দিনে ১২ হাজার ৬০০, লালমোহন উপজেলায় ২৩ হাজার ৫০০, চরফ্যাশন উপজেলায় ৭০ হাজার ৩৫০ হেক্টর ও মনপুরা উপজেলায় ২২ হাজার ২০০ হেক্টর।
মোট আবাদ থেকে এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২৬৭ মেট্রিক টন চাল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চার হাজার ২৪ হেক্টর জমি। যদিও এ মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৩.৩ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বিনয় কৃষ্ণ মজুমদার বলেন, আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। যদিও দু’একটি স্থানে প্রাকৃতিক কারণে কিছুটা ফলন কম হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ বছর মণ প্রতি ১০৪০ টাকা মণ দরে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। ধান ক্রয়ের জন্য আমরা জেলায় সর্বমোট ২৬ হাজার ৮১৫ জন কৃষকের তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছি। সব মিলিয়ে কৃষকরা লাভবান হবেন বলেই আমরা মনে করছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২০
আরএ