ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কমলগঞ্জের টমেটোর বিস্তার সারাদেশে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২০
কমলগঞ্জের টমেটোর বিস্তার সারাদেশে কমলগঞ্জের বিখ্যাত বারি-ফোর টমেটো।

মৌলভীবাজার: বাঁশের বেড়ার ওপর ঝুলছে থোকাথোকা টমেটো। এ যেন কৃষকের থোকা থোকা স্বপ্ন! কোনোটা কাঁচা, আবার কোনোটা পাকা। এমন কাঁচাপাকা টমেটোতেই কৃষকের বাজিমাত। টমেটো চাষির ঘরে এসেছে শতভাগ সমৃদ্ধি ও সাফল্য।

ছোট থেকে মাঝারি নানা আকারের টমেটো এ এলাকাকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে। এ টমেটোর চারা বা ফল প্রাকৃতিকভাবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম।

তাই এ এলাকার কৃষকরা টমেটো চাষে মনোযোগী বেশি। গ্রাফটিং টমেটোতে ফিরে এসেছে কমলগঞ্জের কৃষকের সুদিন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কমলগঞ্জ এলাকা উৎপাদিত টমেটোর বীজের নাম ‘বারি-ফোর’ বা ‘বারি-চার’। এটি বুনো বেগুনের সঙ্গে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে (ডাল কেটে ডালের সঙ্গে জোড়া দেওয়া) লাগানো হয়েছে। এ গাছগুলো প্রায় ১২ মাসই ফল দিতে পারে। আর একেকটি গাছে প্রায় ৯ থেকে ১০ কেজি পরিমাণ টমেটো উৎপন্ন হয়ে থাকে।

কৃষক মুহিতের লাগানো টমেটো বাগান। কমলগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আদমপুর, মাধবপুর, আলীনগর, তিলকপুর, পাত্রখোলা, শ্রীচন্দনপুর প্রভৃতি এলাকার প্রায় দু’শো হেক্টর জমিতে কৃষকরা চাষ করছেন শীতকালীন এ ফল।

কমলগঞ্জ উপজেলার শ্রীচন্দপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় কৃষকের জমিতেই এমন থোকা থোকা টমেটো ধরে রয়েছে। এ এলাকায় টমেটোর ফলন ভালো বলে অনেক কৃষকই এ ফসল চাষাবাদ করছেন।

তেমন একজন মধ্যবয়সী কৃষক আবদুল মুহিত। কৃষিকাজই তার প্রধান পেশা। এর বাইরে তিনি আর কিছু করেন না। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা যে টমেটো ফলাই তার নাম ‘বারি-ফোর’। এ এলাকায় গ্রাফটিং টমেটো চারা উৎপাদনে করে সফল হয়েছি আমরা।

তিনি বলেন, এ টমেটোগুলো লাগানো হয়েছে আষাঢ়ে। ফল ধরেছে আশ্বিন মাস থেকে। ভাদ্র মাস থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু করি। প্রথম দিকে কেজি প্রতি পাইকারি দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বর্তমানে ৩০/৩৫ টাকায় নেমে এসেছে। এক লাখ টাকার টমেটো চারা লাগিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা লাভ হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, নাসিরনগর, সিলেট সদর, হবিগঞ্জ সদরসহ চুনারুঘাট, মিরপুর, ভৈরব প্রভৃতি এলাকার বড় বড় পাইকারি ক্রেতারা এসে আমার এ টমেটোগুলো কিনে নিয়ে যায়।

নিজ জমির টমেটো পরিচর্যা করছে মুহিত। ওই এলাকার আরেক কৃষক খায়রুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মূলত আমাদের বারি-ফোর টমেটোগুলো শীতকালীন সবজি। শীতে ফলন আরও বেড়ে যায়। তবে সারা বছর চাষযোগ্য। এক বিঘা জমিতে চমেটো চাষে সর্বোচ্চ ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ করা হলে টমেটো উৎপাদন করে প্রায় দু’ লাখ টাকা লাভ থাকে।

তিনি বলেন, আমাদের কমলগঞ্জের টমেটো চারা সারা বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই যাচ্ছে। একেকটি টমেটো চারা বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা করে। এতে আমাদের এলাকার কৃষকরা খুবই লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন সুইটি বাংলানিউজকে বলেন, গ্রাফটিং পদ্ধতিতে শেড দিয়ে টমেটো চাষাবাদ করে কমলগঞ্জের অনেক কৃষকই পুরোপুরি লাভবান হয়েছেন। এর নেপথ্যের কারণ হলো, এ ফসলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ একেবারে নেই বললেই চলে। তাই এ ফসলে দারুণ সাফল্য এসেছে এ এলাকার কৃষকদের কাছে।

সারাদেশেই যাচ্ছে এখানকার টমেটো চারা। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া বন বেগুনের গাছের সঙ্গে টমেটো চারার গ্রাফটিং পদ্ধতি অবলম্বন করে এ এলাকার কৃষকরা টমেটো চাষে পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। সারা বছর শেড পদ্ধতিতে গ্রীষ্ম ও শীতকালের টমেটো চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠছেন তারা। তবে এর পেছনে কৃষি বিভাগেরও নরজদারি ও পরামর্শ রয়েছে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২০
বিবিবি/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।