বুধবার (০৮ এপ্রিল) দুপুরে বগুড়া সদর উপজেলার তিনমাথা রেলগেট এলাকায় বিসিআইসি মালিকাধীন বাফার সারের গুদামে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। প্রধান ফটক থেকে গুদামে প্রবেশের চেক পয়েন্ট পর্যন্ত সারি ধরে সারবোঝাই ট্রাকগুলোকে এসময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ট্রাকচালক ও হেলপাররা জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সব খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় অর্ধশত মানুষের এখানে দু’বেলা খাবার যোগান কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা গুদামে কর্মরত শ্রমিকদের জরুরি ভিত্তিতে কাজে লাগানোর জন্য আবেদন জানান।
এদিকে গুদামের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাফার গুদামে সারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে সৃষ্ট করোনা পরিস্থিতির কারণে কারখানা থেকে নতুন করে সার উত্তোলন না করার জন্য পরিবহন ঠিকাদাদের অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা মানেননি। এমনকি উত্তোলন করা সারগুলো গুদামে ঢোকানোর জন্য অপেক্ষা না করে সরাসরি ডিরারদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বলা হলেও তারা তা শুনছেন না।
পরিস্থিতির জন্য পরিবহন ঠিকাদারদের দায়ী করেন তারা।
বগুড়া সদর উপজেলার তিনমাথা রেলগেট এলাকার ৬ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার বিসিআইসি মালিকানার সারের বাফার গুদামে দেশের বিভিন্ন সারকারখানা থেকে উৎপাদিত সার মজুদ রাখা হয়। পরে চাহিদা অনুযায়ী উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ডিলারদের বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বোরো মৌসুমের জন্য বগুড়া বাফার গুদাম থেকে প্রয়োজনীয় সার মার্চ মাসের মধ্যেই বরাদ্দ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। তারপরেও বিভিন্ন কারখানা থেকে সার এনে রাখায় ওই গুদামে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার বেশি সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন সার মজুদ রয়েছে। সম্প্রতি পরিবহন ঠিকাদারররা সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড থেকে সার উত্তোলন করে ট্রাকযোগে বগুড়া বাফার গুদামে আনতে শুরু করে। কিন্তু দেশব্যাপী সৃষ্ট করোনা পরিস্থিতির কারণে বাফার গুদামে নিয়োজিত শ্রমিকরা না আসায় সার বোঝাই ট্রাকগুলো খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।
সোহেল রানা, ফরিদসহ একাধিক ট্রাক চালক বাংলানিউজকে জানান, তারা সার নিয়ে প্রায় তিনদিন আগে বগুড়ায় এসেছেন। কিন্তু সারগুলো এখনও খালাস করা হয়নি।
তারা জানান, অফিসের লোকজন বলছেন খালাস করার কোনো শ্রমিক নেই। কবে আসবে সেটাও তারা বলছেন না।
এদিকে পানি আর বিস্কুট ছাড়া কোনো খাবারই পাচ্ছেন না তারা। পরে বাজার থেকে চাল, যাল ও সবজি কিনে রান্না করে কোনো রকমে দু’বেলা খাওয়ার আয়োজন করছেন তারা।
বগুড়ায় বিসিআইসির বাফার গুদাম ইনচার্জ মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, তাদের গুদামে সার উত্তোলন ও খালাসের জন্য ৬০ জন শ্রমিক রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা নিয়মিত আসতে পারছেন না। সর্বশেষ গত ৬ এপ্রিল তারা এসেছিলেন এবং কয়েকটি ট্রাকের সার খালাস করেছিলেন।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে পরিবহন ঠিকাদারদরকে কারখানা থেকে নতুন করে আর সার উত্তোলন না করতে বলা হয়েছিল কিন্তু তারা শুনছেন না। এমনকি উত্তোলন করা এসব সার গুদামে না ঢুকিয়ে আশ-পাশের কয়েকটি জেলার ডিলারদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা রাজি হচ্ছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২০
কেইউএ/এবি