ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

থেকেই গেলো বর্গা চাষিদের ঋণের বোঝা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২০
থেকেই গেলো বর্গা চাষিদের ঋণের বোঝা

হবিগঞ্জ: ‘ভাবছিলাম তিন বছরে জমা হওয়া লগ্নির ট্যাহাডা ইবার শোধ কইরালাইমু। মেঘ-বৃষ্টিতে লোকসান না অইলে কিতা অইব? বেফারীরা তো ধানের উছিত দর দিতাছে না। হারা বছর পরিশ্রম কইর‌্যা লাভ অইব দূরে থাউক, ঋণের বোঝা আরো বড় অইছে। আগামী বৈশাখ মাস ফর্যন্ত কি কইর‌্যা সংসার ছালাইমু, হেই চিন্তায় দিন-রাইত কাটে না।’

কথাগুলো বলার মধ্যে দুইবার দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও গ্রামের কৃষাণী ঝরণা রাণী বৈদ্য। তিন বছর আগে মহাজনের কাছে থেকে লগ্নি করা ২৫ হাজার টাকার হিসেবে এবার দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজারে।

বোরো মৌসুমে ঝরণার স্বামী-সন্তান মিলে ৩০ কিয়ার জমি বর্গা চাষ করেন। এখানে লোকসান হয়েছে আরও ১৫ হাজার। তাই বাকি দিনগুলোও চলতে হবে ঋণের ওপর। এনিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি।

ঝরণা বাংলানিউজকে বলেন, বর্গার টাকাসহ ৩০ কিয়ার জমি চাষে তাদের ব্যয় হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা। ধান হয়েছে ৪৫০ মণ। চলতি বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম ৫০০ টাকা। মোট বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সারা বছর পরিবারের সব সদস্যের পরিশ্রমের হিসেব তো হলোই না। ধান চাষ ছাড়া অন্য কোনো কাজ তাদের জানা নেই। লোকসান নিশ্চিত, তবুও পুনরায় চাষ করতে হবে বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

ধান ভানার কাঝে নিয়োজিত শ্রমিক।  ছবি: বাংলানিউজ

শুধু এই পরিবারই নয়। এলাকার আরও অন্তত ১০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলেও সবার লোকসানের হিসেব তুলে ধরেন। এভাবে চলতে থাকলে ধান চাষ বাদ দেওয়ার কথাও চিন্তা করছেন কাকাইলছেও গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক।

লোকসানের মুখে পড়া একই উপজেলার হিলালপুর গ্রামের কৃষক ওয়ারিশ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এক কিয়ার জমির বর্গা পাঁচ হাজার টাকা। ধান কাটা পর্যন্ত প্রতি কিয়ারে সব মিলিয়ে খরচ আরও তিন হাজার টাকা। মোট ব্যয় আট হাজার। কিন্তু এক কিয়ার জমিতে বেশি হলে ধান ফলে ১৫ মণ। হিসেব এসে দাঁড়ায় কিয়ার প্রতি ৫০০ টাকা লোকসান। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানান।

অন্যদিকে, সরকার ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ধান কাটা শেষের দিকে চলে আসলেও তা শুরু হয়নি। এনিয়ে হতাশায় পড়েছেন অনেক কৃষক। এছাড়া হাজারো কৃষকের মধ্য থেকে সরকারের কাছে ধান বিক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছেন অল্প কিছু মানুষ। কৃষকদের এই লোকসান লাঘবে আরও বড় উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন বছর আগাম বন্যা ও শিলাবৃষ্টির কারণে হাওরে ব্যাপক ক্ষতি হলেও এবার প্রকৃতি ছিল কৃষকের পক্ষে। কিন্তু স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দাম কম। বেশিরভাগ এলাকায়ই ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও তা ৫৫০ টাকা মণ। যে কারণে বৈশাখ শেষে লোকসানের ঘানি টানতে হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকদের।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, জেলাজুড়ে রোববার (১০ মে) লটারি হবে। এখান থেকে নির্বাচিত কৃষকরা সুযোগ পাবেন সরকারিভাবে ধান বিক্রয়ের। ওইদিনই বলা যাবে কতজন কৃষক এই কার্যক্রমের আওতায় আসছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তমিজ উদ্দিন খান বাংলানিউজকে জানান, এবার হবিগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বোরো আবাদ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। এরমধ্যে একেবারে নিচু এলাকায় ৪০ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি। যার ৯৯.৬৫ শতাংশ কাটা শেষ। বাকি ৮০ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমির মধ্যে কাটা হয়েছে ৭৮ শতাংশ। বাকি জমি আাগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।