আউশের ফলন ভালো হবে, এমন আশা নিয়েই মাঠে ঝুঁকে পড়েছেন তারা। কৃষকদের উৎসাহ বাড়াতে কৃষি বিভাগও তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড় আম্পান আর গত কয়েকদিনর বৈরী আবহাওয়ার কারণে বেশ ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিলেন অনেক চাষি। সেই সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যই ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা আশায় বুক বেঁধেছেন আউশ আবাদে।
মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আউশের ফলন অনেক ভালো হবে বলে মনে করছেন চাষিরা। তাই বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে আউশ ধান রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। বর্তমানে ক্ষেতের অবস্থা নিয়েও সন্তুষ্ট চাষিরা।
ভোলা সদরের ভেলুমিয়া ইউনিয়নের আউশ চাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর কৃষিকাজ করে তেমন একটা লাভ করতে পারিনি। তাই এবার লাভবান হওয়ার আশায় ১৬০ শতাংশ জমিতে আউশের আবাদ করেছি, এখন পর্যন্ত ক্ষেতের অবস্থা ভালো।
আউশ চাষি মো. ইসমাইল বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৫ একর জমিতে আউশ আবাদ করেছি, বীজতলা তৈরির পর এখন আউশ রোপণ করার কাজ শেষ হয়েছে। ক্ষেতের অবস্থা এখন পর্যন্ত অনেক ভালো আছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ফলন ভালো হবে, আর ফলন ভালো হলে ঋণও পরিশোধ করতে পারবো।
কৃষক ইব্রাহিম বলেন, গত বছর আউশ আবাদে আমার অনেক লাভ হয়েছে, আশা করছি এবারও লাভের মুখ দেখতে পারবো।
কৃষক ইয়াছিন ও খালেকসহ অন্যরা জানান, জমিনে রোপা আউশের বয়স ৮/১০ দিন হয়েছে, এবার ফলন অনেক ভালো হবে। আগে যাদের ক্ষতি হয়েছে তারা এবার পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। অনেকে এখনো আউশ রোপণ করছেন, কেউ আবার ক্ষেত পরিচর্চা শুরু করেছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এ বছর জেলার সাত উপজেলায় ৯৮ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে স্থানীয় ও উফশি জাতের আউশ ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার ৮১ ভাগ ধান ইতোমধ্যে রোপণ শেষ হয়েছে।
মোট আবাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫১১ মেট্রিক টন চাল। এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ ৭৬৩ হেক্টর।
আউশ আবাদে কৃষকদের আরও বেশি উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হরলাল মধু।
তিনি বলেন, কৃষকদের আউশ ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে কৃষকরা বাড়তি আউশ আবাদ করে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। বর্তমানে ধানের দাম ভালো থাকায় অনেকেই আউশ আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন, আমরাও তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সব জমি যেন কৃষি আবাদের আওতায় আসে সে লক্ষ্যে ভোলাতে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার ১৫ হাজার কৃষককে আউশ আবাদে প্রণোদনা ও ৫ হাজার কৃষককে বীজ প্রণোদনাসহ ২০ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও ৩ হাজার ৩১৭ জন কৃষককে সবজি বীজও দেওয়া হচ্ছে, যাতে এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।
তিনি বলেন, এ বছর ৯৮ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৭৯ হাজার ৯৫৬ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে, বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় এখনো আউশ আবাদ করছেন চাষিরা। আমরাও তাদের উৎসাহ দিচ্ছি।
এদিকে আউশের ফলন ভালো হলে লোকসান পুষিয়ে লাভের মুখ দেখতে পবেন বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২০
আরএ