প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের মাঠ পর্যায়ের জরিপে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের কারণে বহু প্রবাসী এবার দেশে আসতে পারছেন না। ফলে চাহিদা খুব বেশি হবে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, মৌলভীবাজার সদর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ি, বড়লেখাসহ মোট ৭ উপজেলায় মিলে গরু মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে ১ হাজার ৬৭০টি। ৫৭৫টি রয়েছে ছাগলের খামার এবং দুগ্ধবতী গাভীর খামার ৬৪২টি।
মৌলভীবাজারের দেশি গরুর খামারি কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমার মোট গরু ২৩টি। এর মাঝে ১৭টি দেশি গরু এবার কোরবানির জন্য রেখেছি। তবে বর্তমানে করোনার সময়ে কিছুটা চিন্তার মধ্যে আছি ভালো দাম পাবো কি না। ১৭টা গরু যদি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় না বিক্রি করতে পারি তাহলে খরচ উঠে আসবে না।
তিনি আরো বলেন, আমি ২০১৪ সালে শখের বসে দেশি গরু পালনে আগ্রহী হই। মূলত লক্ষ্য ছিল গরুর খাঁটি দুধ। পরে ভেবে দেখলাম দুধের গরুর পাশাপাশি দেশি জাতের গরু বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে লালনপালনের মাধ্যমে কোরবানি উপযোগী করে যদি বিক্রি করা যায় তবে হয়তো কিছুটা লাভ হতে পারে। সেই থেকেই প্রতি বছর কিছু গরু বিক্রি করে আসছি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল শামীম বাংলানিউজকে বলেন, যতগুলো আমরা তালিকায় উল্লেখ করেছি এর মিনিমাম (সর্বনিম্ন) তিন থেকে চারগুণ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামারির সংখ্যা এ তালিকার বাহিরে রয়ে গেছেন। অর্থাৎ যে সকল ক্ষুদ্র খামারি পরিবারিকভাবে গরু-ছাগল পালন করেন। কোরবানির পশুর মধ্যে রয়েছে- দেশি এবং শংকর জাতের গরু। আর ছাগলের মধ্যে রয়েছে দেশি ব্ল্যাক-বেঙ্গল জাতের ছাগল।
অনেক খামারি আমাদের বলে রেখেছেন- কোনো ক্রেতা গরু কিনতে আগ্রহী হলে যেন আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেই। সে লক্ষ্যেও আমরা কাজ করছি। ফলে গরুর ক্রেতারা খামারিদের কাছে থেকে অগ্রিম গরু কিনতে পারছেন। এতে করে করোনার সংক্রমণের স্বাস্থ্যবিধির দিকটিও রক্ষা পাচ্ছে বলে জানান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাসুদার রহমান সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের আসন্ন কোরবানি ঈদকে ঘিরে মৌলভীবাজারে প্রায় ৭০ হাজার করোবানির উপযোগী গরু-ছাগল মজুত আছে। এই ৭০ হাজার পশুর মাঝে রয়েছে গরু মোটাতাজাকরণ খামার, ছাগলের খামারসহ অসংখ্য প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামারি। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামারি মানে যারা মাত্র ২/১টা গরু শখ করে লালনপালন করেন এবং কোরবানির ঈদসহ সুবিধাজনক সময়ে ভালো দামে বিক্রি করেন।
জেলার এ কর্মকর্তা আরো বলেন, মাঠপর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পেরেছি, করোনার কারণে মৌলভীবাজার জেলায় বেশির ভাগ প্রবাসীরা আসছেন না। সে হিসেবে চাহিদাও কিছু কম হবে এবার। এছাড়াও প্রতি বছরের মতো ট্রাকবোঝাই করে রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর থেকে গরু আসবে। ফলে জেলায় কোরবানি পশুর কোনো অসুবিধা হবে না। বরাবরের মতো এবারও কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর যোগান বেশি রয়েছে আমাদের এখানে।
কোরবানিকে কেন্দ্র করে আমরা খামারিদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেছি। যাতে তারা আমাদের আধুনিক পদ্ধতির পরিচর্যা অনুসরণ করে গবাদিপশু বিক্রয়ে ন্যায্য মুনাফা লাভ করতে পারেন। এ জন্য আমাদের জেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়সহ উপজেলার অফিসসমূহ তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে চলেছে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাসুদার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২০
বিবিবি/এমজেএফ