ঢাকা: চলমান বন্যায় আউশ-আমনের ক্ষয়ক্ষতি ও আমনের উৎপাদনসহ সার্বিক পরিস্থিতি প্রতিদিন নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করে প্রয়োজন হলে সীমিত পরিমাণে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, আপাতত দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।
রোববার (০৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা: বাংলাদেশ কী চাল ঘাটতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে?’ শীর্ষক অনলাইন সেমিনারে (ওয়েবিনার) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কৃষিসচিব মো. নাসিরুজ্জামান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাজাহান কবীর। মুখ্য আলোচক ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে, যদি আমনের ফলন ভালো না হয়, বন্যা প্রলম্বিত হয়, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ঠিকমতো কাটিয়ে ওঠা না যায়, তবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কৃষিতে চলমান বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সব ধরনের কার্যক্রম চলছে। আমন মৌসুমে উৎপাদন বাড়াতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, আগামী রবি মৌসুমের সব ফসলে উৎপাদন বাড়াতে পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যাতে করে করোনা, আম্পান, ও চলমান বন্যার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, কোভিড-১৯ সময়েও মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার মন মানসিকতা সবার নেই। একটা গ্রুপ রয়েছে, যারা সুযোগ পেলেই চালের দাম বাড়িয়ে দেয়, কৃত্রিম সংকট তৈরি করার চেষ্টা করে। আমাদের কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থকেই গুরুত্ব দিতে হবে। এ দুয়ের মধ্যে সমন্বয় করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে সরকারি মজুদ সঠিক পরিমাণ রাখতে হবে।
ওয়েবিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত পাঁচটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এগুলোর মধ্যে হাওরের ধান কর্তনে শ্রমিক ও যান্ত্রিকীকরণের ভূমিকা, সুপার-সাইক্লোন আম্পানের প্রভাব নিরূপণ, ধান-চালের মজুদ পরিস্থিতি এবং বাজারমূল্যে এর প্রভাব, ৬৪ জেলায় কৃষকের মাঠের ফসল কর্তন এবং আউশ আবাদ পরিস্থিতি নিয়ে র্যাপিড সার্ভের মাধ্যমে করোনাকালে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এসব গবেষণার ফল বিশ্লেষণে ৬৪টি জেলায় ১ হাজার ৪৮টি এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৬৯টি ফসল কর্তনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ সার্ভে কার্যক্রমে দেশের ৩৮টি জেলার ৫৭টি উপজেলা এবং ফসল কর্তনে ৬৪টি জেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এদিকে এ গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই, নভেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মিটিয়ে ৫.৫৫ মিলিয়ন টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। চালের উৎপাদন গতবছরের তুলনায় প্রায় ৩.৫৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বোরো ও আমন মৌসুমের উদ্বৃত্ত উৎপাদন থেকে হিসাব করে, জুন পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে ২০.৩১ মিলিয়ন টন চাল ছিল। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানোর পরেও ৫.৫৫ মিলিয়ন টন চাল দেশের অভ্যন্তরে উদ্বৃত্ত থাকবে। নভেম্বর পর্যন্ত ১৬.৫০ কোটি মানুষের চাহিদা মেটানোর পরেও ৩৬-৭৮ দিনের চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। এছাড়া, নভেম্বরের মধ্যে দেশের ফুড বাস্কেটে নতুনভাবে আউশ ও আমনের উৎপাদন যুক্ত হবে। ফলে, বাংলাদেশে আপাতত খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কোভিড-১৯ এর এ সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি, ধানের উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনা এবং উৎপাদনে বৃদ্ধিতে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে এ ওয়েবিনার আয়োজন করে। কোভিড-১৯ এর সময়ের ও তা পরবর্তী সময়ে দেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকটি দেশি-বিদেশি সংস্থার বরাত দিয়ে অনেক বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারিত হচ্ছে, যা জনমনে এবং পলিসি লেভেলে অস্বস্তি তৈরি করছে।
এ অনলাইন সভায় খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার মণ্ডল, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. এস এম নাজমুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান, কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হোমনাথ ভান্ডারি, এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধিসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
এসময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অধীনস্ত সব দপ্তর/সংস্থার প্রধান, বিভিন্ন দাতা সংস্থা, এনজিও এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এ সেমিনারে সংযুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২০
জিসিজি/এসআই