ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

চড়াদামে কেনা ধানের বীজে অঙ্কুরোদগম না হওয়ায় চিন্তিত চাষিরা

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২০
চড়াদামে কেনা ধানের বীজে অঙ্কুরোদগম না হওয়ায় চিন্তিত চাষিরা

বাগেরহাট: বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় বোরো মৌসুমে হাইব্রিড বীজ ধানে অঙ্কুরোদগম হয়নি। অধিক ফলনের আশায় চড়াদামে বীজ কিনে অঙ্কুরোদগম না হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

ধানের চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা তৈরি করে বীজ বুনতে না পেরে হতাশা বিরাজ করছে প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে। তবে বিভিন্ন কোম্পানির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হয়ে সরকারি বীজ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের ৯ উপজেলায় এ বছর প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হবে। এর মধ্যে ৪২ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও অবশিষ্ট জমিতে চাষ হবে উচ্চ ফলনশীল উপষী ধান। এজন্য প্রায় ৬০০ টন হাইব্রিড ও ২৫০ টন উফষী ধান বীজের চাহিদা রয়েছে। এই মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প ও রাজস্ব খাত থেকে ৩০ টন হাইব্রিড ধানের বীজ ও ১০ টন উফষী ধানের বীজ বিতরণ করবে প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে। বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট জাত বীজ দিয়ে অবশিষ্ট চাহিদা মেটাবেন চাষিরা।  

ব্রাক, সিনজেনটা, পার্টেক্স, এসিআইসহ বিভিন্ন নামে ১০টির উপরে কোম্পানি হাইব্রিড ধান বীজ বিক্রয় করেন। এসব বীজ কোম্পানি ভেদে ২৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে বাজারের বিভিন্ন হাইব্রিড ধানের বীজে অঙ্কুরোধ গম না হওয়ায় ফলন ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি-বীজ) বীজের দাম অপেক্ষাকৃত কম ও মান ভালো হওয়া সত্বেও শুধু প্রচারণার অভাবে চাষিরা বেসরকারি বাণিজ্যিক কোম্পানির বীজের ওপর নির্ভর করছেন চাষিরা। ৫০০ টনের উপরে হাইব্রিড বীজের চাহিদার বিপরীতে বিএডিসি-বীজ, বাগেরহাট কার্যালয় মাত্র ১০০ কেজি হাইব্রিড ও ১ হাজার ৫০০ কেজি উফষী ধানের বীজ বিক্রয় করতে পেরেছেন। সরকারি বীজের মান ও দাম সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালালে প্রান্তিক চাষিরা উপকৃত হতো বলে দাবি সচেতন মহলের।

হাইব্রিড ধানের বীজে অঙ্কুরোদগম না হওয়া কুচয়া উপজেলার চাষি শেখ রুস্তম আলী বাংলানিউজকে বলেন, জমির জন্য বিভিন্ন কোম্পানির ১৫ কেজি ধান কিনেছিলাম। এর মধ্যে ১২ কেজি ধানে অঙ্কুরোদগম হলেও ২৯০ টাকা করে কেনা সিনজেটা কোম্পানির ৩ কেজি ধান একদম নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো অঙ্কুরোদগম হয়নি।

রুস্তমের প্রতিবেশী আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাজলক্ষী ব্রান্ডের ধান কিনেছিলাম, অঙ্কুরোদগম হয়নি। আবার নতুন করে ধান কিনেছি। আসলে কি করবো, এতো দামের ধান যখন নষ্ট হয়, তখন আমাদের কিছু করার থাকে না।

একই উপজেলার জামাল শেখ বলেন, ব্রাকের (হাইব্রিড-৪৪৪) ধান কিনে ছিলাম বীজ হয়নি। এতো টাকা দিয়ে ধান কিনতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। কিন্তু বীজ না হলেও আরও বিপদে পড়তে হয়।
 
এসিআই কোম্পানির (এসিআই-১) ধান কিনেছিলেন মোজাফফর মোল্লা নামে এক চাষি। তার ধানেও অঙ্কুরোদগম হয়নি। এখন নতুন করে কি ধান কিনবেন এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি। শুধু এরা নয় বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলার চাষিদের কাছ থেকে হাইব্রিড বীজ ধানে অঙ্কুরোদগম না হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, সিনজেনটা কোম্পানির একটি ব্রান্ডের বীজে অঙ্কুরোদগম না হওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। বিষয়টি ওই প্রতিষ্ঠানকে জানালে তারা ওই ব্রান্ডের বীজ বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পুনরায় বীজ দেওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া কোনো কোম্পানির বীজে যদি অঙ্কুরোদগম না হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়, সেগুলো যাতে বাজারজাত না হতে পারে সেই অনুাযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।