ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ঘরে উঠছে জুমের ফসল

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২১
ঘরে উঠছে জুমের ফসল ছবি: বাংলানিউজ

খাগড়াছড়ি: জুমের ফসল তোলায় ব্যস্ত পাহাড়ি জুমিয়ারা। কিছু ফসল সারা বছর ধরে উত্তোলন হলেও জুম ধান তোলার এখনই মৌসুম।

বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হওয়ার লাভের আশা করছেন চাষিরা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমছে মাটির উর্বরতা। আর তাই এখন জুমে সার ব্যবহার বাড়ছে। কারণ হিসেবে বলছেন জুম পাহাড়ের সংখ্যা কমে যাওয়া।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠির ঐতিহ্যবাহী চাষ পদ্ধতি ‘জুমচাষ’। এখনো পাহাড়ের প্রান্তিক পাহাড়ি জুমিয়ারা ঐতিহ্যগতভাবে জুমচাষ নির্ভর জীবনধারণ করেন। জীবনের তাগিদে জুমচাষিরা এবারও পাহাড়ে ধান, ভূট্টা, কাকন, মারফাসহ বিচিত্র রকমের ফসল চাষ করেছেন। এই সময়ে জুমে ধান কাটা চলছে। বৃষ্টিসহ আবহাওয়া ঠিক থাকায় ভালো ফলনে ধান কাটা ও ঘরে তোলায় ব্যস্ত চাষিরা।

আলুটিলা এলাকার জুমচাষি হীরা দেবী বলেন, আমরা জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। সারা বছর কষ্টের পর এখন ঘরে ফলন তোলার সময়। ২০২০ সালের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। তবে আগে মাটির উর্বরতার কারণে সার ব্যবহার করা না হলেও এখন জুমে সার দিতে হয়।

দিনে দিনে পাহাড়ের মাটি ক্ষয় ও উর্বরতা কমে যাওয়ার কারণে জুম পাহাড়ে বাড়ছে সারের ব্যবহার। আগে এক পাহাড়ে দীর্ঘ বছর পরপর জুম চাষ হলেও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জুম পাহাড়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখন একই পাহাড়ে প্রতি বছর জুম চাষ করা হচ্ছে। তবে জুম চাষের আধুনিক পদ্ধতি পাল্টে দিয়েছে চাষাবাদের ধরন। এই পদ্ধতিতে পরিমিত সার ব্যবহার করে প্রতি বছর একই জমিতে বার বার ফসল উৎপাদন করতে পারবে।

জুম চাষি নব জ্যোতি ত্রিপুরা বলেন, একটা সময় ছিল যখন এক পাহাড়ে জুম চাষ করার পর অন্য পাহাড়ে জুম চাষ করা হতো। কিন্তু এখন মানুষ বাড়ছে, বাড়ছে বসতি। তাই জুমের জায়গা কমে আসছে। এখন একই স্থানে প্রতি বছর জুম চাষ করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে স্থায়িত্বশীল এবং অধিক উৎপাদনশীল জুমচাষের উপায় বের করার গবেষণা করছে বাংলাদেশ কৃষি ফাউন্ডেশন। এই গবেষণায় মূলত সার-কীটনাশকের পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমে একই জমিতে প্রতিবছর জুমচাষের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হয়। গত চার বছর ধরে চলা গবেষণায় বৈজ্ঞানিক ও কৃষিবিদরা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সফলতার মুখ দেখেছেন। উদ্বুদ্ধ জুম চাষিরাও।

এ বছর জেলায় এক হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে জুম চাষ হয়েছে। যেখান থেকে দুই হাজার ৯৮৬ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মর্তুজ আলী বাংলানিউজকে জানান, মূলত স্থানীয় জাত থেকে জুমের উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিনা ধান-১৯ এবং বিনা ধান-২১ উদ্ভাবন করেছে। যেটি কিনা স্থানীয় জাতের তুলনায় ভালো ফলন দিচ্ছে। এছাড়াও বিরি ধান-৮৩ এবং চায়না। এখানেও স্থানীয় জাতের তুলনায় ভালো ফলন হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুন্সী রশিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় জাতের তুলনায় আধুনিক জাতগুলো প্রায় দেড়গুণ বেশি উৎপাদন হচ্ছে। নতুন জাতগুলোর বীজ যদি জুম চাষিদের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে স্থানীয় জাতের বাইরে উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহার করে অধিক লাভের মুখ দেখবে। তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে।

ভবিষ্যতে গবেষণা জ্ঞান মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে পাহাড়ের জুম চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এবং জুমিয়াদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন কৃষিবিদ ও কৃষি বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২১
এডি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।