ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বরিশালে রোপা আমন আবাদের রেকর্ড

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
বরিশালে রোপা আমন আবাদের রেকর্ড ...

বরিশাল: বরিশাল জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৯৫ হেক্টর বেশি জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। একইসঙ্গে গত বছর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছিল।

আর এ বছর গত বছরের তুলনায় ১৬০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের ঘটকেরচর গ্রামের কৃষক বাবুল হাওলাদার জানান, ২০ শতক জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। সার, বীজ, কীটনাশক, ক্ষেত প্রস্তুত ও বিবিধ খরচ মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দুর্যোগের কবলে না পড়লে ৯/১০ মণ ধান তুলতে পারবো। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ধান সর্বোচ্চ এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের শরৎকালীন (২০২১-২২) ফসল উৎপাদনের প্রতিবেদনে জানা গেছে, রোপা আমনের মধ্যে দুটি জাত রয়েছে। এর মধ্যে একটি উফশী, অপরটি স্থানীয় জাতের আমন ধান। জেলার বরিশালের ১০টি উপজেলায় আমন আবাদের মোট লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ১৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৯৫ হেক্টর বেশি। এর আগে ২০২০-২১ অর্থ বছরে মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর। বিপরীতে মোট আবাদ হয় ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৫ হেক্টর।

চলতি বছর বরিশাল সদর উপজেলায় রোপা আমন আবাদের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার ৪০০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর, স্থানীয় ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে উফশী ৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর, স্থানীয় ৭ হাজার ৫৮০ হেক্টর।  

বাবুগঞ্জ উপজেলায় রোপা আমন আবাদে মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রায় উফশী ধান ছিল ৮ হাজার ৯৩০ হেক্টর, স্থানীয় ৬২৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে উফশী ৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর, স্থানীয় ২৫০ হেক্টর।

উজিরপুর উপজেলায় উফশী ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর, স্থানীয় ৪ হাজার ১৫০ হেক্টরসহ মোট লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৭০০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে উফশী ৪ হাজার ২০ হেক্টর, স্থানীয় ৩ হাজার ৬৬৫ হেক্টরসহ সর্বোমোট ৭ হাজার ৬৮৫ হেক্টর।

বাকেরগঞ্জ উপজেলায় মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭ হাজার ১০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে মোট ২৭ হাজার ৭০০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশীর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ২০০ হেক্টর, স্থানীয় ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর। অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা উফশী ১১ হাজার ২০০ হেক্টর এবং স্থানীয় ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর।

গৌরনদী উপজেলায় মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৯০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৮৫০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশীর লক্ষ্যমাত্র ছিল ৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪৫০ এবং স্থানীয় ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর।

আগৈালঝাড়া উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭১০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৬০০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশীর লক্ষ্যমাত্র ছিল ২১০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২০০ হেক্টর। স্থানীয় ৫০০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৪০০ হেক্টর।

মুলাদী উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ২৫০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশীর লক্ষ্যমাত্র ছিল ৬ হাজার ২০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর। স্থানীয় ৮ হাজার হেক্টর নির্ধারণ হলেও আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর।

হিজলা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৬২০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশীর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২৮০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর। স্থানীয় জাতের ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ১০০ হেক্টর।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৩ হাজার ১২০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ১০০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশীর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২২০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ১২০ হেক্টর। স্থানীয় জাতের আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার ৬০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৯৮০ হেক্টর।

বানারীপাড়া উপজেলায় লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৪১০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশীর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬১০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৭৫০ হেক্টর। স্থানীয় ৪ হাজার ৮০০ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর।

বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬২৫ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ৫১০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশীর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩০০ হেক্টর। স্থানীয় ২৭৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ২১০ হেক্টর।

বাবুগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কৃষকের যেন কোনো সমস্যা না হয় এ জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। কৃষকদের মাত্রাতিরিক্ত সার, কীটনাশক প্রয়োগে নিষেধ ও সচেতন করছি। বিপরীতে আলোক ফাঁদ পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমনে উদ্বুদ্ধ করছি।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এ বছর আবাদ এবং ফলন উভয়ই বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক বেশ লাভবান হবে।

এদিকে অপরিকল্পিতভাবে ফসলি জমিতে ভবন নির্মাণ, কারখানা প্রতিষ্ঠা ও ফসলি জমি কিনে প্লট বানিয়ে বিক্রির ফলে দিনদিন যে হারে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদের বিষয়টি অত্যান্ত ইতিবাচক বলছে কৃষি অধিদফতর।

বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
এমএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।