পাবনা: পাবনায় প্রতিটি অঞ্চলেই সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে স্থানীয় মৌ খামারিরা। ইতোমধ্যে খাঁচা পদ্ধতিতে চাষকৃত মৌ মাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যাপক সারা ফেলেছে।
জেলার সুজানর, চাটমোহার, ভাঙ্গুড়া, ফুরদুপর, আটঘড়িয়া উপজেলার প্রতিটি বিল অঞ্চলের সরিষার ক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে মধু সংগ্রহরে মৌ খাঁচা। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় শতাধিক মৌ খামারি সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবার জেলাতে প্রায় ১০ মেট্রিকটন মধু সংগ্রহীত হবে যার বাজার মূল্য ১০ কোটি টাকা।
এদিকে এই মধু স্থানীদের চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে দেশ ও বিদেশে।
জেলার প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের কৃষক নিজেদের জমিতে কম বেশি সরিষার আবাদ করে থাকেন। বিশেষ করে বিল অঞ্চলগুলোতে গেলে দিগন্ত মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহে দৃষ্টি জুড়িয়ে যাবে। যেদিকে চোখ যায় সে দিকেই সরিষা ফুল চোখে পরবে। বিগত দিনগুলোর থেকে বর্তমানে সরিষার আবাদ ও ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর অন্যতম কারণ ফসলের মাঠের পাশে মৌ মাছির খামার। ফসলের মাঠে এই মৌ মাছি মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে পরাগায়ন ঘটছে ফসলের। আর এরই কারণে কৃষক স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি ফলন পাচ্ছে। তাই খাঁচায় মৌ মাছি দিয়ে মধু সংগ্রহরে মাধ্যমে এক দিকে যেমন বহু পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ মধু পাওয়া যাচ্ছে অন্যদিকে চাষিদের ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে বহুগুণ।
আমাদের দেশে শীতের সময়ে মধুর প্রচলন ও ব্যবহার বহুগুণে বেড়ে যায়। আর এই মধুর চাহিদা অনেকাংশ পূরণ করে থাকে সরিষা ফুলের থেকে সংগৃহীত মধু। কৃষিসমৃদ্ধ পাবনা জেলাতে তাই শীতের এই সময়ে সরিষা ফুলের মধু দেশের চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে বিদেশে। জেলাতে এ বছরে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১০ মেট্রিকটন। যার বাজার মুল্যে প্রায় ১০ কোটি টাকার মধু সংগ্রহ হবে ধারণা করা হচ্ছে।
পাবনা সদরের দুবলিয়া এলাকার সরিষা চাষি কৃষক জব্বার আলী প্রামানকি বলেন, সরিষা ফুল থেকে কিভাবে মধু সংগ্রহ করা যায় এ বিষয়টি আগে জানতান না আমরা। আগে বিভিন্ন বাড়িতে গাছের ডালে মৌ মাছি বাসা করতো। সেখান থেকেই মধু সংগ্রহ করা হতো। আর আর এখন খাঁচায় চাষকৃত মৌ মাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করছি। মৌ মাছির কারণে আমাদের সরিষার ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে আর মধু পাচ্ছি আমরা।
স্থানীয় মধু বিক্রেতা উদ্যোগতা মো. মামুন খান বলেন, পড়াশুনার পাশাপাশি আমি প্রতিবছরই খামারিদের কাছ থেকে মধু নিয়ে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে এই মধু বিক্রি করি। এর মাধ্যমে আমাদের বাড়তি আয় হচ্ছে। আরেক দিকে সরিষা ফুলের ভেজালমুক্ত মধু ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি।
মৌ খামারি মো. ওলি প্রামানিক বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমি সলিষা ফুলের মধু সংগ্রহের কাজ করছি। শুধু সরিষা নয় লিচুর ফুল, তিলের ফুলের মধুও আমরা সংগ্রহ করি। তবে সবচাইতে বেশি সরিষা ফুলের মধু হয়ে থাকে। স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন কোম্পানির লোকেরা আমাদের কাছ থেকে মধু কিনে নিয়ে যায়। তবে এই বছরে বৃষ্টির কারনে অনেক মাছি মারা গেছে। তাই কিছুটা হলেও আমাদের ক্ষতি হয়েছে। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো। কৃষি বিভাগ প্রশাসন ও স্থানীয়রা আমাদের এই মধু সংগ্রহের কাজে সহযোগিতা করে থাকে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, মধু বহু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শক্তিবর্ধক সর্বরোগের মহৌষধ। পাবনা জেলা যেহেতু কৃষি সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। আর এই জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে শীতের এই সময়ে সরিষার আবাদ ব্যাপক হয়ে থাকে। আর এই সরিষা ফুল থেকে মৌ খামারিরা মধু সংগ্রহ করে থাকেন। চাষকৃত বিশেষ জাতের এই মৌ মাছি সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে খাঁচায় নিয়ে জমা করেন। এর ফলে একদিকে ফসলের পরাগায়নে ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে মধু সংগ্রহ করে পুষ্টির চাহিদার পাশাপাশি বাড়তি আয় করছে খামারিরা। জেলাতে এবারে প্রায় ১০ মেট্রিকটন সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা হবে। এই সরিষার মধু দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি সংগ্রহ করে পক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রি করছে। জেলাতে প্রায় ৭০ জন খামরি প্রায় ৬ হাজার মৌ বক্স স্থাপন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, খামারিদরে আমরা নানা ভাবে সহযোগিতা করছি। প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে মৌ বাক্স সরবরাহ করা হয়ে থাকে কৃষি বিভাগ থেকে। তাই সরিষা ফুল এবং ফল দুটিই আমাদের অর্থনৈতিক ভাবে উপকার করছে।
জেলাতে এবারে প্রায় সারে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আর প্রায় ৭০ জন তালিকাভুক্ত খামারি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ৬ হাজার এই মৌ মাছির বক্স স্থাপন করেছেন। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে এই মধু দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ মৌ খামরি ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে মধুতে প্রায় ৩০ প্রকারের উপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে সুগারের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করে থাকে এই মধু।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২২
এনএইচআর