ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সমালয়ে ধান চাষ। এই পদ্ধিতে বিস্তীর্ণ জমি একত্রিত করে একই সময়ে একই সঙ্গে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদের আওতায় আনা হয়ে থাকে।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সমালয়ে প্রণোদনা কর্মসূচির আত্ততায় এসব জমিতে যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ থেকে কর্তন পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এতে উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি ধান চাষে লাভবান হবে কৃষক।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, কৃষি যন্ত্রের শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় দেড়শ ও নবীনগর উপজেলার দেড়শসহ মোট ৩শ বিঘা জমি সমালয়ে চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে ফসল রোপনে সময়ের ভিন্নতা থাকায় যন্ত্রের ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়। তবে, সমালয়ে চাষাবাদের ফলে একই সময়ে একইসঙ্গে বিস্তীর্ণ জমিজুড়ে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপন ও দ্রুত কর্তন করা সম্ভব। এতে ফসলি জমিতে পোকা মাকড়ের বিস্তার রোধ, রোগ ও বালাই দমন সহজতর হওয়ার পাশাপাশি কৃষি শ্রমিক নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। সেসঙ্গে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে চারা রোপন করায় ফসল উৎপাদনও বেড়ে যায়। সরেজমিনে জেলার নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর সমালয় ধান চাষ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য ট্রে ও পলিথিনে বিশেষ পদ্ধিতে বীজতলা করা হয়েছে। কৃষকরা সেই বীজতলা প্রয়োজন মত সংগ্রহ করে নিজ নিজ জমিতে নিয়ে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে জমিতে চারা রোপন করছে। এই যন্ত্রটি খুব অল্প সময়েই বিঘার পর বিঘা জমিতে অত্যন্ত নিঁখুতভাবে ধানের চারা রোপন করে চলে। এতে সঠিক পরিমাপে ও দূরত্বে চারাগুলো রোপিত হওয়ায় অপচয় কমার পাশাপাশি কমছে উৎপাদন খরচ। স্থানীয় কৃষক কাউসার মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আগে সনাতন পদ্ধতিতে মাটিতে ধানের চারা বপন করতে গিয়ে মাটি ভেঙে এবং বীজতলা নষ্ট হয়ে যেত। ফলনও তেমন ভালো হতো না। সমালয়ে বীজতলা লাগানোর ফলে ধানের চারা নষ্ট হয় না। বপন করতে সুবিধা হয়। পোকামাকড়ও দমন করা যায়। এখন কানি প্রতি জমির ফসল রোপন থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত তাদের উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে।
সমালয়ে চাষে সুফল পাওয়া প্রবীণ কৃষক সঞ্জিত কুমার বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে সমালয়ে চাষ পদ্ধিতে আগ্রহী ছিলাম না। কৃষি অফিসাররা যখন আমাদের মাঠপর্যায়ে এসে এর কার্যকারিতা দেখিয়েছেন। পরে সরকারি খরচে সমালয়ে ধান চাষ শুরু করি। আগে এক কানি জমি চাষ করতে চার হাজার টাকার মতো খরচ হতো। সমালয় চাষের মাধ্যমে বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন না থাকায় খরচ অর্ধেকে নেমে এসেছে। কৃষক কাউসার মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি এই প্রথম সমালয়ে তিন কানি জমি চাষ করেছি। খরচ অনেকাংশ কমে গেছে। দুই কেজি ধানের বীজে এক কানি জমিতে চারা রোপন করতে পারছি। আশা করছি বেশি ফলন হবে।
শ্রমিক সংকটের বিষয়ে কৃষক মানিক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন শিল্প কারখানা চালু হওয়ার ফলে এখন আর আগের মত শ্রমিক পাওয়া না। ফলে কৃষি কাজে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। শ্রমিকদের বেতনও বেশি দিতে হয়। সব মিলিয়ে তেমন লাভবান হওয়া যায় না। আধুনিক সমালয়ে পদ্ধিতে আমাদের কৃষি কাজে অনেকটা সুবিধা করে দিয়েছে। মাত্র দুই জন শ্রমিক দিয়ে মেশিনের মাধ্যমে ধানের চারা রোপন ও বপন করা যায়। অল্প সময়ের মাধ্যমে প্রতি কানি জমিতে ২৫টি ট্রের চারা রোপন করতে পারি। নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জগলুল হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, সমালয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষি যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা। এ পদ্ধিতে বিঘা প্রতি ৩৫ খেকে ৪০ মণ ধান উৎপাদন হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক রবিউল হক মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদের উৎসাহী করার লক্ষ্যে জেলার দুটি উপজেলায় সমালয়ে চাষাবাদের প্রদর্শনী করা হয়েছে। সব জাতের চারা দিয়েই সমালয়ে ধানের চাষাবাদ সম্ভব। তবে, ফলন বেশি ও কৃষকদের লাভের কথা চিন্তা করে হাইব্রিড জাতের চারা দিয়েই চাষাবাদ চলছে। শ্রমিকের বদলে মেশিনের ব্যবহারে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
এএটি