ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

গরু-মহিষের চারণভূমিতে তরমুজের আবাদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২২
গরু-মহিষের চারণভূমিতে তরমুজের আবাদ

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজীর চরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে তরমুজ আবাদ করে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। জেলার গণ্ডি পেরিয়ে এসব তরমুজ সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

তিনদিকে নদী বেষ্টিত এই উপকূলীয় উপজেলার দুটি ইনিয়নের চরাঞ্চলে গত চার বছর ধরে তরমুজ চাষ হলেও, এবার আরও দুটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে তরমুজ। গরু, মহিষ ও ভেড়ার চারণভূমিতে এখন সবুজ তরমুজের সমরোহ।

উপজেলা কৃষি অফিস, এলাকাবাসী ও স্থানীয় কৃষকরা জানায়, ২০১৭ সালে নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আগত কৃষক আবুল কাসেম ও জামাল উদ্দিন পরীক্ষামূলকভাবে চরচন্দিয়া ও চরদরবেশ ইউনিয়নের চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ করেন। ওই বছর তাদের সফলতা দেখে ২০১৯ সালে আরও ১৫-২০ জন কৃষক তাদের জমিতে রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ করেন এবং তারা সবাই আর্থিকভাবে লাভবান হন।

বেশি ফলন ও ভালো দাম পেয়ে তরমুজ চাষিরা ২০২০ সালে উপকূলীয় এলাকায় দুটি ইউনিয়নের ১৫০ হেক্টর চরের জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ শুরু করেন। তাদের লাভজনক চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২১ সালে ৩১৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। চলতি মৌসুমে উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ ও পশ্চিম চরদরবেশ মৌজায়, চরচান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পূর্ব চরচান্দিয়া ও পূর্ব বড়ধলী মৌজায়, আমিরাবাদ ইউনিয়নের চরসোনাপুর মৌজায় এবং সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের চরশাহাপুর ও মুক্তার চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ভিক্টর সুগার, ওশান সুগার ব্ল্যাকবেরি, ড্রাগন, জাম্বো ও দেশীয় জাতের তরমুজের আবাদ হয়েছে। চরদরবেশ ইউনিয়নের দুটি মৌজায় চাষ করা তরমুজ বিক্রি প্রায় শেষ পর্যায়ে। চরচান্দিয়া, সোনাগাজী সদর ও আমিরাবাদের তরমুজ বিক্রি চলছে পুরোদমে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মৌসুমি ফলব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকে বড় বড় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান যোগে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এসব তরমুজ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

সরেজমিনে দেখা যায়, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ থেকে তরমুজ চাষ করতে আসা কৃষকরা ক্ষেতের মাঝেই ‘টংঘর’ স্থাপন করে থাকা-খাওয়া আর বিশ্রাম করছেন। রৌদ্রের উত্তাপ এড়িয়ে কৃষকরা এখন তরমুজ ক্ষেতে আগাছা ও পোকা দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উন্মুক্ত চরে গরু, মহিষ ও ভেড়ার উৎপাতে নানা বিড়ম্বনারও শিকার হচ্ছেন কোনো কোনো চাষি।

চরদরবেশ ইউনিয়নের কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, নোয়াখালীর চাষিদের দেখে স্থানীয়রাও গত দুই বছর তরমুজ চাষাবাদ করেছেন। অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকরা তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। সরকারের সার্বিক সুবিধার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা বা ঋণ সুবিধা পেলে কৃষকের আগ্রহ আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

আরেক তরমুজ চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে ৫ মাসের জন্য প্রায় ৫০ একর জমি সাত মাসের জন্য ইজারা নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। প্রতি একরে উৎপাদন ও পরিচর্যা ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা। প্রতি একর তরমুজের ফলন থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা এই তরমুজ চাষির।

তিনি জানান, তরমুজ চাষে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কম সময়ে লাভসহ চালান ফেরত আসে। তাই তিনি প্রতিবছর স্থানীয়দের থেকে জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করে আসছেন। তরমুজ বিক্রি শেষে তিনি আবার নিজ এলাকায় চলে যাবেন। ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, এখানকার উৎপাদিত তরমুজের আকার, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভালো থাকায় কম সময়ে পাইকারদের আকৃষ্ট করা গেছে। তাছাড়া গত বছর সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে সাহেবের হাট সেতু উদ্বোধনের পর নোয়াখালী ও ফেনীতে যাতায়াত সুবিধা বেড়েছে। এর ফলে সোনাগাজীর চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করা সহজ হয়ে ওঠায় পাইকারি ক্রেতাদের কাছে এখানকার তরমুজের চাহিদা বেড়ে গেছে। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সোনাগাজী থেকে সংগৃহীত তরমুজ সহজেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া যায়।

এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, চরাঞ্চলে তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন আবাদ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগের উপজেলার সাড়ে ৩শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আগামীতে আরও বেশি তরমুজ আবাদের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন জানান, এবার সোনাগাজীতে ব্ল্যাক জায়ান্ট, গ্যালারি, সুগার বেরি, ট্রপিক্যাল ড্রাগন, বাংলা লিংক ও ভিক্টর সুগার জাতের তরমুজ বেশি চাষ হয়েছে। নিয়মিত তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবাদ ও ফলন বাড়াতে কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শন ও পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছেন। স্থানীয় কৃষকদের আবাদে উৎসাহিত করতে তরমুজ চাষের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১০টি তরমুজ চাষের প্রদর্শনী করা হয়েছে। আশা করি কৃষকরা আরও উদ্বুদ্ধ হবেন। এবার কৃষকরা দামও ভালো পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২২
এসএইচডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।