চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে আরও একটি বিলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে বেড়ে চলেছে পুনর্ভবা নদীর পানি।
শুক্রবার (২০ মে) রাতে উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিবিষন খাড়ির ওপর নির্মিত অস্থায়ী বাঁধটি ভেঙে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ওই বিলে কেটে স্তূপ করে রাখা শতশত বিঘা জমির বোরো ধান নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন ওই এলাকার কৃষকরা। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আটকা পড়েছে ধানভর্তি ট্রাক্টর। কিছু কিছু ধান সেখান থেকে নৌকায় করে বাড়ি নিচ্ছেন কৃষকরা।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, গত কয়েক দিন ধরে ওই খাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর পানি খাড়িতে ঢুকছিল। একপর্যায়ে পানির চাপে খাড়ির অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় খাড়ির ওপারে থাকা প্রায় অর্ধশতাধিক ধান বোঝাই ট্রাক্টর আটকা পড়েছে।
জানা গেছে, বিলটির কয়েক বিঘা বাদে সব ধানই কাটা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে কাটা ধান স্তূপ করে রাখা আছে পরিবহনের জন্য। কিন্তু হঠাৎ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ওই এলাকার কৃষকরা আতঙ্কিত হয়ে নৌকায় করে কিছু কিছু করে ধান সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন। এদিকে, ওই বাঁধ ভেঙে বিলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা আটকে পড়া ধান পরিবহন করতে পারছেন না।
এ সময় কৃষকরা দ্রুত বাঁধটি সংস্কার করে বিলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের দাবি জানান। নয়ত কৃষকদের কেটে রাখা সব ধান পানিতে তলিয়ে যাবে।
অপরদিকে এর আগে গত সপ্তাহে নদী থেকে বিল কুজাইন ও চন্দের বিলে পানি ঢোকায় সেখানকার প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে। সেই সঙ্গে বাঁধ ভেঙে পাথার বিলে পানি ঢুকতে থাকলে পাশের ওই দুই বিলের সঙ্গে সংযোগ থাকায় সেখানেও ঢলের পানি প্রবেশের শঙ্কা রয়েছে।
দিন দিন পুনর্ভবা নদীর পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিল এলাকার বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। গত কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বিলগুলো নিমজ্জিত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, হঠাৎ করে পানি ঢোকায় জমিতে কেটে রাখা ধান ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় হাহাকার করছেন কৃষকরা।
বিল কুজাইনের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই ধান কাটা শ্রমিকের সংকট থাকায় সময়মত ধান কাটাতে পারিনি। তার ওপর এ দুর্যোগের কারণে কাটা ধান জমি থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
পাথার বিলের ভুক্তভোগী কৃষক নাহিদ হোসেন বলেন, হঠাৎ করে ঢলের পানিতে নতুন করে খাড়ির ওপর বাঁধ দিয়ে তৈরি করা রাস্তাটি ডুবে গেছে। ফলে উঠতি বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছি আমরা কৃষকরা। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, জশৈল-বিবিষষ (চালনা) খাড়ির ঘাটে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় প্রতি বছর বিলাঞ্চল থেকে ধান সংগ্রহ করতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ভেঙে যাওয়া বাঁধ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মাহবুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন ধরে বাঁধটি স্থানীয়ভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পানির তোড়ে তা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর গোমস্তাপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান নুহু জানান, উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বর্ষা মৌসুমে বিলাঞ্চলের এ দূরাবস্থার কথা তুলে ধরা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার তানভির আহম্মেদ সরকার জানান, পাথার বিলের পাঁচ বিঘা জমির ধান কাটা বাকি আছে। বাকি সব ধান কাটা হলেও মোট ধানের ৫০ ভাগ ধান এখনও বিলে আটকা পড়েছে। বাকি ৫০ ভাগ ধান কৃষকরা বিল থেকে আনতে সক্ষম হয়েছেন। দ্রুত ধানগুলো আনা না হলে এবং এভাবে পানি বাড়তে থাকলে এসব ধান রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
এসআই