ফরিদপুর: ফরিদপুরে সালথা উপজেলায় পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। তবে, পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
এদিকে, বিভিন্ন সময়ে দরপতন, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও পাট ছড়ানোর পানির অভাবে কৃষকরা চাষে এই ফসল চাষে কিছুটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ ব্যাপারে সরকারের সুনজর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ৮টি ইউনিয়নে মোট ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ-আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ১২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। এবার তার চেয়ে ১ হাজারেরও বেশি জমিতে এই ফসল আবাদ হচ্ছে।
এদিকে জ্যৈষ্ঠ মাস শেষ হয়ে আষাঢ় শুরু হয়েছে। তবে, তেমন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় ও এলাকার বেশিরভাগ খাল, বিল শুকিয়ে যাওয়ায় চিন্তিত কৃষকরা। পানির অভাবে পাট পঁচানো নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। পর্যাপ্ত পানি পাওয়া না গেলে পাটের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রামকান্তপুর ইউনিয়নের হাবেলি গ্রামের কৃষক আজিজ মাতুব্বর বলেন, গত দু'বছর যাবত ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে জাগ দেওয়ার পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাই এখন পাট চাষ ছেড়ে দিয়ে শাকসবজি ও মরিচের চাষ করি, এতে পরিশ্রম কম, লাভ বেশি।
উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের পুরুরা গ্রামের কৃষক পলাশ জানান, বর্তমানে একজন দিনমজুরের দৈনিক হাজিরা ৫শ থেকে ৬শ টাকা। এক বিঘা জমির পাট কেটে তা জাগ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে যে পরিমাণ মজুরি দিতে হয়, তাতে খরচ মিটিয়ে মণপ্রতি পাটের দাম পড়ে ২ হাজার টাকার বেশি। আবার পাট পঁচনের খাল-বিলের মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই অধিকাংশ সময় পানি থাকে না। আবার কোনো কোনো খালে মাছ চাষ করায় পানি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পাট জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হয়। তাই পাট চাষে তেমন আগ্রহ নেই। প্রতিবছর মণপ্রতি পাটের বাজার মূল্য ২ হাজার থকে ২ হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে উপজেলা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারি বলেন, সব মিলে উপজেলায় বিজেআরআই-৮ ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এ বছর সালথা উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ৫০০ হেক্টর জমিতে রবি-১ আছে যা আমাদের লক্ষ্য মাত্রার অনেক বেশি। রবি-১ বীজের জন্য কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। আশাকরি আগামী বছর রবি-১ জাতের আবাদ এক হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলায় মোট আবাদি জমির ৯২ শতাংশে পাট চাষ হচ্ছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল। রোগ ও পোকা-মাকড় দমন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য আন্তঃপরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে মাঠ পর্যায় কাজ করছেন উপ-সহকারী কর্মকর্তারা। আশা করছি আশানুরূপ পাট উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, ১৭ জুন, ২০২২
এমএমজেড