কুড়িগ্রাম: ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ টসটসে সুস্বাদু লটকনে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন কুড়িগ্রামের কৃষকরা।
প্রচুর চাহিদা থাকায় কৃষি বিভাগ ও সরকারের সহায়তা পেলে এই বিপুল পরিমাণ লটকন ভবিষ্যতে বিদেশে পাঠিয়ে লাভবান হওয়ার আশা করছেন তারা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের সন্নাসী গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, আঁকা-বাঁকা গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে জিভে জল আনা লটকন। হলুদ রঙের পাকা লটকন উঁকি দিচ্ছে গাছের পাতা ও ডালপালা ভেদ করে। শ্রমিকরা গাছে উঠে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা টসটসে বড় সাইজের লটকনগুলো ছিঁড়ে ঝুড়িতে রাখছেন। গতবার ফলন বিপর্যয়ে কৃষকদের মন খারাপ থাকলেও এবারে মন ভরে গেছে উৎপাদন দেখে। সেই সঙ্গে তারা দামও পাচ্ছেন অনেকটা ভালো।
কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের সন্নাসী গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, কুড়িগ্রাম জেলাসহ দেশজুড়ে রয়েছে লটকনের ব্যাপক চাহিদা। এই এলাকার লটকনের স্বাদ, বড় সাইজসহ উন্নতমানের হওয়ায় প্রতিবছর নিজ জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের মন কেড়েছে। আর তাই সুস্বাদু এই লটকন কিনতে ছুটে আসছেন পাইকাররা। গতবছর এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে লটকন বিক্রি হলেও এবারে দুই হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
শিবরাম গ্রামের চাষি জয়নাল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, রসালো লটকন চাষ করতে ক্ষতিকর রাসায়নিক সার বা কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। স্থানীয় কৃষি বিভাগ কষ্টার্জিত এই লটকনের বাগানগুলো তদারকি করলে ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়তেন না কৃষকরা। তাদের যুগোপযোগী পরামর্শ পেলে উন্নতমানের লটকন বেশি পরিমাণে যেমন উৎপাদন হতো, তেমনি বিদেশে রপ্তানি করে লাভবান হতে পারতাম। কুড়িগ্রাম শহরের ফলের পাইকার ও বিক্রেতা মনছের মিয়া বাংলানিউজকে জানান, দেশজুড়ে সুস্বাদু লটকনের চাহিদা বেড়েছে। কুড়িগ্রামের লটকন এখন নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে যাচ্ছেন। কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ছয় শতাধিক কৃষক লটকন চাষে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এখানকার লটকনের সাইজ ও মান ভালো হওয়ায় যেমন চাহিদা রয়েছে তেমনি ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শামসুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, একটু যত্ন এবং আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে পারলেই লটকন চাষ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও উলিপুর উপজেলায় লটকন চাষ করা হয়। বিশেষ করে সুপারি গাছের পাশে এই লটকন অল্প খরচে চাষ করে কৃষকরা লাভবান হয়। তবে তারা যদি একটু যত্নবান হতো তাহলে এই খাত থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হতো। প্রাপ্যতা ও মান অর্জন করতে পারলে লটকন অবশ্যই বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২২
এফইএস/আরআইএস