চাঁদপুর: কৃষি উৎপাদনে নদী উপকূলীয় জেলা চাঁদপুরের ঐতিহ্য বহু বছরের। মৌসুমের অধিকাংশ কৃষি ফসল আবাদ হয় এই জেলায়।
ফরিদগঞ্জ ও চাঁদপুর সদরের কৃষকরা ইতোমধ্যে আখ কাটতে শুরু করেছেন। ফলন ভালো হলেও অনেক জমিতে ছত্রাক জাতীয় রোগে আক্রান্ত হয়েছে আখ।
সম্প্রতি চাঁদপুর সদরের বাগাদী, বালিয়া, ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে কৃষকরা আখ কাটতে শুরু করেছেন।
ব্যবসায়ীদের নিয়োজিত শ্রমিকরা আখ অন্য জেলায় পাঠানোর জন্য আঁটি বেঁধে প্রস্তুত করছেন। আবার অনেক কৃষক তাদের জমির আখ নিজেরাই কেটে স্থানীয় হাট-বাজারে ও শহরের বিভিন্ন সড়কে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছেন। ছোট থেকে বড় প্রতি পিস আখ বিক্রি হচ্ছে ১০-৬০ টাকা পর্যন্ত। চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় আখ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৬৪০ হেক্টর। এর মধ্যে বেশি আবাদ হয়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলায়।
এ উপজেলার ৬ ইউনিয়নে আবাদ হয়েছে ২৯০ হেক্টর। সাধারণত জেলা সদর, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের জমিগুলো আখ আবাদের জন্য বেশি উপযোগী। যে কারণে এসব এলাকায় এবছরও ‘চাঁদপুর গেন্ডারি’ আখের পাশাপাশি রং বিলাস, ইশ্বরদী ও মানিকগঞ্জ ২০৮ জাতের আখ আবাদ হয়েছে।
সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের পশ্চিম সেকদী গ্রামের কৃষক আমির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিনি এ বছর প্রায় ২০ শতাংশ জমিতে আখের আবাদ করেছেন। ছত্রাক জাতীয় রোগে কিছুর আখগাছ শেষ সময়ে এসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে তিনি এসব আখের দাম কম পাবেন। একই এলাকার আখচাষি শিপন মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তিনি এ বছর ২২ শতাংশ জমিতে মিশ্র জাতের আখ করেছেন। ‘চাঁদপুর গেন্ডারি’র পাশাপাশি রং বিলাস আবাদ করেছেন। উভয় জাতের আখই ভালো ফলন হয়েছে। রং বিলাস আখ সাইজে অনেক লম্বা হয়। তবে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য ‘চাঁদপুর গেন্ডারি’ স্থানীয় লোকজনের কাছে জনপ্রিয়।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের আখচাষি কলন্দর খান জানান, তিনি রং বিলাস জাতের আখ আবাদ করেছেন। মিশ্রসহ তার আখের আবাদের পরিমান ১শ’ ২০ শতাংশ। রং বিলাস খুবই মিষ্টি ও রসালো। তবে এই উপজেলার কৃষকরা খুব কমই আবাদ করেন রং বিলাস জাতের আখ। সদর উপজেলায় রং বিলাস জাতের আখের আবাদ বেড়েছে। তিনি বলেন, পূর্ব পুরুষদের দেখাদেখি আমরা আখের আবাদ করে আসছি। কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের কাছে কেউ আসেনি এবং তাদের পক্ষ থেকে আমরা কোনো ধরনের সহযোগিতাও পায় না।
চাঁদপুর সদরের বাগাদী ইউনিয়নের মো. রফিকুল ইসলাম আখের ব্যবসা করেন প্রায় ২৫ বছর। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর আখ ছত্রাক জাতীয় রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধের বাইরের জমিগুলোতে এই রোগ বেশি।
পশ্চিম সেকদি গ্রামের এক জমির আখ তিনি ২২ হাজার টাকায় কিনেছেন। রং বিলাস ও ‘চাঁদপুর গেন্ডারি’ মিশ্রিত আবাদে জমিটি। এসব আখ কেটে তিনি নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকায় পাঠাবেন বলে জানান।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর চাঁদপুর জেলায় চিবিয়ে খাওয়া আখের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৬৪০ হেক্টর। জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। জলবাদ্ধতা ও ছত্রাক জাতীয় রোগ থেকে রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
এএটি