ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ঝালকাঠির আমড়া যাচ্ছে বিদেশেও

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
ঝালকাঠির আমড়া যাচ্ছে বিদেশেও

ঝালকাঠি: পেয়ারার পাশাপাশি ঝালকাঠির আমড়ার সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। ফলে আমড়া চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।

প্রতিবছরই বাড়ছে আমড়া গাছ রোপণ। অন্যান্য বারের তুলনায় এ বছর ফলনও হয়েছে বেশি।

জেলার ৪৭১টি গ্রামের মধ্যে তিন শতাধিক গ্রামে আমড়া গাছ লাগিয়ে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ও সফলতার স্বপ্ন দেখছেন এলাকার কৃষকরা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় স্বল্প সময়ের  ব্যবধানে পাইকার-ফরিয়াদের মাধ্যমে ঝালকাঠির আমড়া পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহীসহ দেশের বড় বড় শহরে।

এছাড়া জাহাজে করেও ঝালকাঠির আমড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে এমনটাই দাবি করেছেন স্থানীয় চাষীরা।

ঝালকাঠির কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলীর একজন আমড়া চাষী ২০১৭ সালে এক একর জমি লিজ নিয়ে আমড়া গাছ লাগান। ৩ বছরের মধ্যেই এসব আমড়া গাছে ফলন ধরতে শুরু করে।

তিনি বলেন, এ বছর ৬০ মণের বেশি আমড়া বিক্রি করেছি। ভাদ্র-আশ্বিন মাস আমড়ার ভরা মৌসুম। তাই ওই সময়ে দামও ভালো থাকে।
তিনি আরও বলেন, ভীমরুলী, ডুমুরিয়া, বেতরা, জগদিশপুর, শতদশকাঠি, শিমুলেশ্বর, কুড়িয়ানা, আটঘর এসব এলাকায় বিপুল পরিমাণে আমড়া চাষ হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকার বাগান থেকে সংগ্রহ করে আমড়া প্রথম দিকে আকার ভেদে ৮ থেকে ৯শ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। এখন তা একহাজার থেকে ১২শ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে। পেয়ারার মতো আমড়া চাষীদেরও প্রধান বাহন নৌকা। নদী-খালের এলাকা হয়োয় তাদের নৌকায় করে আমড়া সংগ্রহ করতে হয়।

ঝালকাঠিতে প্রশাসন ও কৃষি আড়ৎ রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি। সবই মূলত পেয়ারার আড়ৎ, তবে, পেয়ারার শেষ সময়ে শুরু হয় আমড়ার ভরা মৌসুম।   চলে আমড়া ক্রয়-বিক্রয়ের ধুমধাম হাঁকডাক।

ডুমুরিয়া, বেতরা, বারুহারসহ ঝালকাঠির বেশিরভাগ গ্রাম পেয়ারার পাশাপাশি এখন আমড়া চাষের জন্যও বিখ্যাত। বর্তমানে এসব আমড়া বিক্রি হচ্ছে ঝালকাঠির ভীমরুলী, শতদশকাঠি, ডুমুরিয়া, পিরোজপুরের আটঘর, কুরিয়ানাসহ পানিতে ভাসমান বাজারে । তবে সবচেয়ে বড় ভাসমান বাজার ভীমরুলী।

সকাল থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে বাজার বসে, বেচাকেনা চলে দুপুর পর্যন্ত। ছোট  ছোট ডিঙি নৌকায় করে চাষিরা আমড়া নিয়ে আসলে ট্রলারে করে আড়তদাররা তা কিনে নেন। পুরো ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাস জুড়েই আমড়ায় এসব হাট জমজমাট থাকে।

ভীমরুলীর আড়তদাররা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবছরও ভাদ্র মাসের শেষ থেকেই আমড়ার ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। ফলন বেশি হওয়ায়  প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ মণ আমড়া  বস্তা ভরে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়, শহরে।  

আড়তদাররা আরও  জানান, আদমকাঠিতে আমড়ার আড়ৎ খুলে সেখান থেকে প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে আমড়া সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। পাইকাররা ট্রাক, পিকআপে করে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়। সেখান থেকে জাহাজে করে কাঁচা আমড়া বিশ্বের  বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।

মুঠোফোনে ওমান প্রবাসী নাহিদ জানান, দেশীয় আমড়া ও পেয়ারা তারা সেখানে তাজাই পান। কিন্তু যখন জানতে পারেন এই ফল তাদের নিজ জেলার, তখন আরও বেশি ভালো লাগে। সবাইকেই উদ্ধুদ্ধ করেন আমড়া কেনার জন্য।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠিতে এ বছর ৬৪১ হেক্টর জমিতে আমড়ার চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১২ টন আমড়ার ফলন পাওয়া গেছে। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। অর্থকরী ফসল হওয়ায় কৃষকরা আমড়া চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতি বছরই আমড়ার ফলন বাড়ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।