মৌলভীবাজার: ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়া’ –একটি বিখ্যাত প্রবাদবাক্য এটি। সহজ অনুসন্ধানে ভয়ংকর এবং অপ্রত্যাশিত কোনো কিছুর প্রাপ্তিকে এ বাক্যটির দ্বারা বুঝানো হয়েছে।
কেঁচো প্রকৃতির অত্যন্ত উপকারী একটি প্রাণী। যা মাটির ভেতর চলাচল করে মাটির উর্বরতা বাড়াতে দারুণ সহায়তা করে থাকে। প্রকৃতিগতভাবে কৃষকের কৃষিতে উপকার সাধন করে। এরা জৈব উপাদান ভেঙে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। এছাড়া উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও পুষ্টি উপাদানের জোগান দেয়।
মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব প্রক্রিয়ায় এই প্রাণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলেই ‘কৃষকের বন্ধু’ বা ‘প্রকৃতির লাঙ্গল’ বলা হয় তাকে।
মাটির ভেতর দিয়ে চলাফেরার সময় কেঁচোরা মাটি ভাঙে এবং মেশায়। এতে মাটির উর্বরতা বাড়ে এবং বন্যায় ভাঙনরোধ হয়। এই কারণে এ প্রাণীটিকে ‘মাটির প্রকৌশলী’ বলা হয়। তাছাড়া এদেরকে মাটির স্বাস্থ্য এবং বিষাক্ততার পরিমাপকও বলা চলে।
অতি নীরবে মাটির অন্তঃপুরে তার প্রতিটি এগিয়ে যাওয়ায় রয়েছে মাটি এবং বৃক্ষের সমন্বয় স্বাক্ষর। যা যুগ যুগ ধরে উৎপাদিত পণ্যকে মানবদেহের বিষমুক্ত ফসলে পরিণত করে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় কৃষিতে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছে।
সম্প্রতি দেখা গেছে, প্রতিকূল পরিবেশে টিকতে না পেরে ‘পাহাড়ি কেঁচো’ পাকা সড়কে বের হয়ে আসছে। তাদের কেউ কেউ চা বাগানের আবাদকৃত জমি থেকে ধীরে ধীরে পাকা সড়কের ওপর এসে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে। আধ কিলো পাকা সড়ক এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রায় এক ডজন কেঁচোর মৃত দেহ পাওয়া গেছে।
এরই মাঝে সর্বাধিক বড় আকৃতির একটি বিরল ‘পাহাড়ি কেঁচো’ সেকশনের (চা গাছের সুনির্দিষ্ট এলাকা) মাটি থেকে বের হয়ে খুব ধীরস্থিরে পাকা সড়কে এসেছিল। সেখানে মাটির সন্ধান না পেয়ে পুনরায় ঘাসের ভেতর লুকিয়ে পড়ে। ১১ সেন্টিমিটারের নকিয়া মোবাইল ফোন তারা পাশে রেখে কেঁচোর শারীরিক দৈর্ঘ্য নিরূপনের চেষ্টা করা হয়। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার বা ১ ফুটের কাছাকাছি হবে।
ভাড়াউড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক গৌতম দেব বলেন, এক প্রকারের বড় কেঁচো আমাদের এদিকে পাওয়ায় যায়। ১ ফুট দৈর্ঘ্যের কেঁচো আমি দেখিনি কখনো। আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। আমাদের চা বাগানে চাষাবাদের আমরা বার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার এর জন্য আলাদা কেঁচো সংগ্রহ করে আনি। তবে সেগুলো এটার মতো এতো বিশাল নয়। ছোট ছোট সাইজের। বার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার এক ধরনের উন্নতমানের প্রাকৃতিক সার। এগুলো আমাদের চা আবাদের মাটির উর্বরতা বাড়ানোসহ গাছের সুষম খাদ্যের যোগান দেয় বলে জানান তিনি।
বড় পাহাড়ি কেঁচোর প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, এটি সাধারণ প্রজাতির কেঁচো। উন্নত পরিবেশ এবং পুষ্টিগত কারণে সাধারণ কেঁচো এরকম লম্বা আকারের হতে পারে। তবে এটা বিরল। এটা হয়তো আবিষ্কারই হয়নি যে বাংলাদেশে কেঁচোর ডাইভারসিটি ক্ষেত্রে কী কী বিষয়গুলো জড়িত রয়েছে? সেটা একটা বিষয়।
চা বাগানের সেকশন থেকে কেঁচো বেরিয়ে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার যতটুকু ধারণা, এটা ইনসেক্টিসাইডের (কীটনাশক) প্রভাব হতে পারে। চা বাগানের চা গাছে কিংবা এর আশেপাশে যে পরিমাণ ইনসেক্টিসাইড ইউজ করা হয় সেখানে তো কেঁচোর থাকারই কথা নয়। অন্তত এতো ভালো অবস্থায়। কিছুদিন আগে তো বৃষ্টি হয়ে গেছে, মাটি এখনো সফট আছে। তারপরও বলা যেতে পারে কেঁচোটি হয়তো সেখানে বেটার ফিল করেনি তাই হয়তো কোনো কারণে সে বের হয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২২
বিবিবি/এএটি