আবুধাবি: অসাধু নিয়োগকর্তারা প্রতি দুই বছর পর পর কর্মচারীদের কর্মসংস্থান ভিসা নবায়নের জন্য অবৈধভাবে তাদের কর্মচারীদের কাছ থেকে ১৫ হাজার দিরহাম পর্যন্ত নিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আমিরাত ভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল পত্রিকা এ খবর দিয়েছে।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা এবং এ সমস্ত ঘটনার শিকার মূলত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল থেকে আসা মুদির দোকান, টেইলারিং/গার্মেন্টস শিল্পের কর্মীরা। ভুক্তভোগীরা চাকরি হারাবার ভয়ে নীরবেই এ ধরনের হয়রানি সহ্য করে নেন।
আবুধাবি সরকারের আইন অনুযায়ী সাধারণ শ্রমিকদের ভিসা ২ হাজার ৮শ’ ৭৯ দিরহাম খরচে প্রতি দুই বছর পর পর নবায়ন করতে হয়, যা অবশ্যই নিয়োগকর্তাকেই পরিশোধ করতে হবে। আর এটা কোনো অবস্থাতেই কর্মচারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
আবুধাবিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, নিয়োগকর্তারা পাঁচ হাজার দিরহাম থেকে শুরু করে ১৫ হাজার দিরহাম পর্যন্ত নিয়ে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, নিয়োগকর্তারাই এই টাকাটা নিয়ে থাকেন। তারা আক্ষরিকভাবেই হুমকি দিয়ে থাকেন যে, ভিসার খরচ না দিলে তাদের (কর্মচারীদের) চাকরিচ্যুত করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমার কাছে এমন অভিযোগ আছে যে, একজন বাংলাদেশি শ্রমিকের ভাষ্য- উনার নিয়োগদাতা উনার ভিসা নবায়নের জন্য ১০ হাজার দিরহাম দাবি করেছেন।
ফেডারেল ন্যাশনাল কাউন্সিলের (এফএনসি) শ্রম, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক বিষয়ক কমিটির সদস্য সুলতান আল সমাহি বাংলানিউজকে বলেন, ভিসা নবায়নের জন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া খুবই জঘন্য একটি কাজ এবং দ্রুতই এটা বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এটা অনুচিত, নিয়োগদাতারা শ্রমিকদের অসহায়ত্ব এবং ইউএই’তে কাজ করবার প্রয়োজন বা আগ্রহকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে এ ধরনের অনৈতিক কাজ করে থাকেন।
তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কাছ থেকে ভিসা বাবদ অনেক টাকা নিয়ে বেশি বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের দেশ থেকে ইউএইতে আনা হলেও এখানে আসার পর তাদের অনেক কম বেতন দেওয়া হয়।
আবুধাবিতে বসবাসকারী একজন বাংলাদেশি দর্জি, যিনি ২৫ বছর ধরে ইউএইতে আছেন। তিনি বলেন, এবারই প্রথম তাকে ভিসা নবায়নের জন্য কোনো টাকা পরিশোধ করতে হয়নি। এর আগে প্রত্যেকবার ভিসা নবায়নের সময় তাকে তিন হাজার দিরহাম দিতে হয়েছে।
এ নিয়ে আমরা আমাদের নিয়োগদাতার সঙ্গে তর্ক করতে পারি না, কেন-না সেক্ষেত্রে আমাদের ভিসা বাতিল করে দেশে পাঠিয়ে দেবেন। পরে ভারত বা পাকিস্তান থেকে অন্য কাউকে নিয়ে আসবেন, যিনি ভিসা কিনে ইউএই’তে আসতে রাজি আছেন।
আরেকজন পাকিস্তানি শ্রমিক জানান, তিনি সরাসরি নিয়োগদাতাকেই টাকা দিয়ে থাকেন। তিনি আরো জানান, শ্রমিকরা যাতে পালিয়ে না যান, সেজন্যই তারা (নিয়োগদাতারা) এ অর্থ নিয়ে থাকেন।
একজন ভারতীয় শ্রমিক বলেন, আমি আমার ভিসা নবায়নের জন্য ১৫শ’ দিরহাম দিয়েছি আর বাকিটা আমার নিয়োগকর্তা দিয়েছেন। আর তার জন্য আমার বেতন থেকে প্রতি মাস এ ২শ’ দিরহাম কেটে রাখা হয়। আর আমার বেতন মাসে ১৫শ’ দিরহাম।
একজন বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক জানিয়েছেন, তার ভিসা নবায়নের টাকা নিয়োগকর্তাই দিয়ে থাকেন। তবে প্রথমবার কর্মসংস্থান ভিসা বাবদ তাকে দিতে হয়েছে প্রায় ১২ হাজার দিরহাম বা আড়াই লাখ টাকা ।
নেপালের রাষ্ট্রদূত ধানানজয় ঝা বলেন, নিয়োগকর্তা শ্রমিকের ওপর ভিসা নবায়নের টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন, এরকম অভিযোগ দূতাবাস পেয়েছে। প্রতি চার থেকে ছয় মাস পর পর আমরা এরকম কিছু অভিযোগ পেয়ে থাকি।
তিনি বলেন, দূতাবাস থেকে নিয়োগকর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা কর্মীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের কথা অস্বীকার করেন। তখন এটা হয়ে যায় শুধুমাত্র নিয়োগদাতার বিরুদ্ধে একজন শ্রমিকের অভিযোগ। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট যে, প্রথমবার সবাই দেশ থেকে টাকা দিয়ে ভিসা কিনে এখানে (ইউএই) আসেন। আর আমরা বলতে পারি যে, তাদের একটা অংশকে তাদের ভিসা নবায়নের জন্যও টাকা দিতে বলা হয়।
আবুধাবিতে বসবাসকারী একজন পাকিস্তানি দোকান মালিক বলেন, ভিসা নবায়নের জন্য কর্মচারীর বেতন থেকে টাকা কেটে রাখা যুক্তিসঙ্গত। কেননা তিনি তার কর্মীদের ভালো বেতন দেন।
তিনি বলেন, তার কর্মচারীরা কাগজে-কলমে (চুক্তিপত্র অনুযায়ী) মাসিক ৭শ’ দিরহাম বেতনে কাজ করতে রাজি হয়েছেন। অথচ বাস্তবে তারা কমিশনভিত্তিক কাজ করে মাসে কমপক্ষে তিন হাজার দিরহাম উপার্জন করছেন।
তিনি বলেন, কর্মচারী আনতে আমাকে ১০ হাজার দিরহামের বেশি খরচ করতে হয়। তারপর তারা কাজ করেন এবং সেটা পরিশোধ করেন।
তিনি স্বীকার করেছেন যে, ভিসার খরচ নিয়োগদাতারই বহন করা উচিৎ। তবে এটাও বলেছেন, আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য নিরাপত্তা জামানত হিসেবে তিন হাজার দিরহাম জমা করেছি। সেটা তাদের ফেরত দিতে বলিনি।
এ ব্যাপারে শ্রম মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিবাসন বিভাগের কাছে মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। তবে উত্তর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪