ঢাকা: মোড়ক উন্মোচন হলো ‘হানড্রেড পোয়েটস অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ফর লাভ’ গ্রন্থের। এই গ্রন্থটি যেন শুধু একটি কবিতা সংকলন নয়, বরং বিশ্বের নানা দেশের ১০০ কবির ভালোবাসার বন্ধন।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) এই সংকলনের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর বাংলা মোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অবস্থিত বাতিঘরে।
এদিন বিকেলে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, বিশিষ্ট কবি জয় গোস্বামী, কবি শাহেদ কায়েস, কবি শামীম রেজা, ভারতীয় সাহিত্যিক ও সমালোচক তপোধীর ভট্টাচার্য, কবি কামাল চৌধুরী প্রমুখ। সংকলনটি সম্পাদনা করেছেন ‘গ্রন্থী’ সম্পাদক কবি শামীম শাহান।
স্বাগত বক্তব্যে কবি শামীম শাহান বলেন, মহামারির সময় এই কাজটি করা। ব্রিটেনের দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য, দর্শন এবং সমাজতত্ত্বের ছোটকাগজ গ্রন্থীর ফেসবুক লাইভ সিরিজ ‘হানড্রেড পোয়েটস অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ফর লাভ’ শীর্ষক আয়োজন শুরু হয় গত বছরের ২৭ জুন। কুড়ি পর্বের এই সিরিজে সারা বিশ্বের ২৫টিরও বেশি দেশ থেকে খ্যাতনামা কবিরা অংশ নেন। ব্রিটেনে ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের শীর্ষ সংস্থা সৌধ ও বাংলা লোকগানের সংগঠন রাধারমণ সোসাইটির সার্বিক সহযোগিতায় সূচিত হয় এই অভিনব উদ্যোগ। সেখান থেকে বিভিন্ন দেশের কবি এবং বাংলাদেশের কবিদের কবিতা নিয়ে এই সংকলন। আমার নিজের কোন সন্তান নেই, গ্রন্থী আমার সন্তান। এটাও ঠিক ততটা ভালোবেসেই করা।
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, এমন কবিতা প্রয়োজন যাতে একটা ভাষাতে পরিচিত হওয়া যায়। কবিতার জন্য কবিতার কলাকৌশল খুব ভালো করে রপ্ত করতে হয়। যে ভাষা, যে শব্দ, যে শক্তি কবিতায় প্রয়োজন, তার জন্য কবির সেদিকে উচ্চমাত্রায় দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। একইসঙ্গে শুধু এগুলো নয়, একজন বড় কবির নিজের যে বক্তব্য, কনটেন্ট, সেটিই মূল বিষয়। তার একটা দর্শন থাকতে হয় যা তিনি দেখাতে চান এই পৃথিবীকে। আমরা আমাদের যে ভাষা, তাতে মনে করি যে একটা কিছু লিখলেই সুন্দর হবে। কিন্তু অন্য কোন ভাষায় সেটি নয়।
তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, আমরা যারা কবিতা লিখি তারা প্রত্যেকেই কলম সৈনিক। আর এসব কবিতাগুলোকে যিনি মলাট বন্দি করেছেন তিনি একজন স্বপ্ন দেখা মানুষ। আমরা তাকে ‘স্বাপ্নিক’ মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি। এই বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যে বাংলা সাহিত্যের আরও মর্যাদা বাড়বে বলে আমি আশা করি। একইসঙ্গে আমরা যে বিশ্বসাহিত্যে আছি সেটি বুঝে আমাদের সেভাবেই কাজ করা উচিত। যিনি কবিতা লেখেন তিনি সবসময়ই অনুবাদক হন না, আবার যিনি অনুবাদ করেন তিনিও সবসময়ই কবি হন না। তাই আমার মনে হয় অনুবাদের কাজটা কবিদের কাছ থেকেই শুরু হওয়া উচিত।
কবি জয় গোস্বামী বলেন, গানের জন্য শিল্পী যেমন প্রতিদিন রেওয়াজ করেন, ঠিক তেমনি বাংলার কবি- সাহিত্যিকরাও নিয়মিতভাবে রেওয়াজ করেন তাদের সাধনা নিয়ে। তারা সবসময় মনে মনে রেওয়াজ করে যাচ্ছেন। তাইতো জীবনানন্দের লাইনের সঙ্গে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার পঙক্তির সঙ্গে আমার মতো কবির দুটো লাইন মুখস্থ বলে দেওয়া সম্ভব তাদের জন্য। ওমর খৈয়ামের অনুবাদের সঙ্গে গ্যেটের হাফিজের অনুবাদ একসঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া সহজ তাদের পক্ষে।
কবি কামাল চৌধুরী বলেন, কবির শব্দভাণ্ডারের কারুকাজ, কল্পনার কুশলী ব্যবহার এবং ছন্দের সূক্ষ্ম অনুভূতি নির্বাচিত কবিতাগুলোকে মনোমুগ্ধকর পাঠে পরিণত করেছে। বিশেষ করে বাংলা কবিতা অনুবাদ করে প্রকাশ করায় তা বিশ্বব্যাপী আরও ছড়িয়ে যাবে। বাংলা সাহিত্যের ইংরেজিতে অনুবাদ করার মতো ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের দক্ষ অনুবাদকের সংখ্যা খুবই কম। বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ জগৎকে এই অবস্থা থেকে বের করে আনা প্রয়োজন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপংকর দাশ, কবি ফরিদ কবির, কবি জুয়েল মাজহার, সাহিত্যিক জাকির তালুকদার, আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন, তুষার দাশ, বিভাস রায় চৌধুরী, মুজিব মেহদী, গৌতম গুহ রায়, মনিরুজ্জামান মিন্টু , কুমার চক্রবর্তী, ফরিদ ছিফাতুল্লাহ, জিল্লুর রহমান,মনিরুল মনীর, আলতাফ শাহনেওয়াজ, মোহাম্মাদ সাদিক, আলী আফজাল খান, অজিত দাস, দিলওয়ার হাসান, জুনান নাশিত, রাজীব নূর, তুষার চক্রবর্তী, আসাদ মান্নান, জাফর আহমদ রাশেদ, মনিকা চক্রবর্তী, ফারুক সুমন, লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ ও লেখক সুমনকুমার দাশ, কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা, রণবীর পুরকায়স্থ, বনানী চক্রবর্তী এবং বিশিষ্ট লেখক ও সাহিত্যপ্রেমীরা। পুরো অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন কবি শাকিরা পারভীন সোমা।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
এইচএমএস/আরআইএস