ঢাকা: ‘লিটল ম্যাগাজিন অচলায়তন ভেঙে জনমানুষের নতুন সাহিত্য সৃষ্টি করে। যা ব্যক্তি, সময় ও বৈশিষ্টের বেড়াজাল থেকে মুক্তি দেয়।
শুক্রবার (১০ মার্চ) সকালে ঢাকার আন্তর্জাতিক ভাষা ইনিস্টিটিউটে ‘অধুনাবাদের আলোয় এসো শেকড় খুঁজি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দুদিনব্যাপী শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন-২০২৩ এ উদ্বোধনী বক্তব্যে তারা এ কথা বলেন।
অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, লিটল ম্যাগাজিন একজন সাহিত্যিককে বদলে দিতে পারে। ১৯১৪ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বদলে দিয়েছিল, ভাষাকে বদলে দিয়েছিল। ১৯১৪ সালের আগে বাংলা ভাষার সাহিত্যের প্রতিষ্ঠানগুলো স্থবির হয়ে পড়েছিল। ‘সবুজপত্রের’ মাধ্যমে বিকশিত চিন্তা-ভাবনা এবং অন্য সাহিত্য ধারা সে অচলায়তন ভেঙে দিয়েছিল।
বাংলা সাহিত্যে ‘আমার’ বলে দখল করার একটি মানসিকতা আছে। কিন্তু ভাষা ও সাহিত্য একটি সার্বজনিন বিষয়, ব্যক্তি-গোষ্ঠীর নয়-এমন ধারণাতে জোর দেন সৈয়দ আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, একটি নদীর অংশকে নিজের বলে দাবি করলে সেটা দখল হয়ে যায়। সেটা আর নদী থাকে না; নদী থেকে হয়ে যায় পুকুর।
‘প্রকাশ ও বিস্তারে লিটল ম্যাগাজিনের অনিবার্য। লিটল ম্যাগাজিন সেই প্রতিবন্ধকতা, সেই অচলায়তন ভেঙে সবার জন্য উন্মুক্ত সাহিত্য জগত তৈরি করে দেয়’ তিনি যোগ করেন।
তিনি লিটল ম্যাগাজিনকে ব্যতিক্রম ও প্রথা বিরোধী অভিধা দেওয়ার পাশাপাশি শক্তিমান সাহিত্যিক বদলে দেওয়ার বৈশিষ্ট তুলে ধরেন। যা সাহিত্যের বন্ধ্যা ও অচলায়তন ভেঙে নতুনের যাত্রা শুরু করতে পারে।
এ ধরনের সম্মেলন বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের একসঙ্গে এনে দেয়, মানুষকে জানার সুযোগ করে দেয়, তাদের সাহিত্য সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়, বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বভারতীর সাবেক উপাচার্জ পবিত্র সরকার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনুবাদ বিভাগ খোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, যদি সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত একটি ট্রান্সলেশন সেল থাকে তাহলে সেখানে নিজেদের ভাষা যেমন অন্য ভাষা-ভাষীর অনুবাদ করবে। আবার ভিন্ন ভিন্ন ভাষা থেকে বাংলা ভাষাতে অনুবাদ করবে। পৃথিবীর অন্য সব ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করবে। আমরা ইংরেজির মধ্য দিয়ে অন্য ভাষার সাহিত্য অনুবাদ করি। কিন্তু এখন ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। সে জায়গা থেকে শুধু ইংরেজির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ভিন্ন ভাষা থেকে অনুবাদ করার পাশাপাশি বাংলা ভাষার সাহিত্য কর্মও অন্য ভাষা অনুবাদ করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
দু’দিনব্যাপী সম্মিলনের প্রথম দিন ও উদ্বোধনী দিনের সকালে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে শুভ সূচনা করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যের পর পরই সংগীত ও নিত্য পরিবেশিত হয়। অনিমা রায় ও সম্পাদ দাম সংগীত পরিবেশনা করেন।
প্রথমবারের মতো চারজনকে শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কৃত চারজন হলেন, বাংলাদেশের কবি জিল্লুর রহমান ও কথা সাহিত্যিক ইমতিয়াজ শামীম। নেপালের সুমন পোখরেল এবং ভারতের কিন্নর রায়।
সম্মিলনে আরও উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের আনোয়ারা সৈয়দ হক ও নেপালের সুমন পোখরে।
বাংলাদেম সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৩
জেডএ/এসএ