ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৯) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৯) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।

৮ম কিস্তির লিংক

নিচে রাস্তায় বাতাসে ছেঁড়া পোস্টারের সেই কোণাটি অবিরাম ঝাপটা খাচ্ছে, আর ইংসক শব্দটি একবার দৃশ্যমান হচ্ছে, আর একবার ঢাকা পড়ছে। ইংসক। ইংসকের পূজনীয় নীতি। নিউস্পিক, ডাবলথিঙ্ক, মিলিয়ে যাওয়া অতীত। তার মনে হলো সমুদ্রের তলদেশে কোনও জঙ্গলে দিক হারিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কোনও এক দৈত্যের রাজ্যে হারিয়ে গেছে আর সেখানে সে নিজেই এক দৈত্য। সে একা। অতীত মরে গেছে, ভবিষ্যৎ কল্পনায় আসছে না। এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই যে একজন মানব সন্তান তার পাশে থাকবে?  আর কিভাবেই জানা যাবে, পার্টির আজ যে আধিপত্য তা চিরদিন টিকে থাকবে? এসব প্রশ্নের একটি উত্তর হয়ে তার চোখের সামনে ভেসে উঠল সত্য মন্ত্রণালয়ের সামনের সেই তিনটি স্লোগান:
যুদ্ধই শান্তি
স্বাধীনতা দাসত্ব
অবহেলাই শক্তি।
পকেট থেকে পঁচিশ সেন্টের একটি মুদ্রা বের করল সে। এতেও একপীঠে খোঁদাই করা স্লোগান; অন্য পীঠে বিগ ব্রাদারের মুখ। ওই কয়েনের মধ্যে থেকেও চোখ দুটি পাকিয়ে আপনাকেই দেখছে। মুদ্রায়, ডাক টিকিটে, বইয়ের মলাটে, ব্যানারে, পোস্টারে, সিগারেটের প্যাকেটে—সবখানেই। সবসময়ই চোখ দুটো আপনাকে দেখছে এবং কণ্ঠস্বর আপনাকে খামবন্দি করছে। ঘুমিয়ে কিংবা জেগে, কাজে কিংবা ভোজনে, ঘরে কিংবা বাইরে, গোসলে কিংবা বিছানায়—কোথাও মুক্তি নেই। খুলির ভেতরে গোটা কয় ঘন সেন্টিমিটার জুড়ে আপনার যে মগজ ওইটুকু ছাড়া আপনার নিজের বলে আর কিছুই নেই। সূর্য তখন উল্টো দিকের আকাশে। সত্য মন্ত্রণালয়ের অগুনতি জানালায় আর আলো ঠিকরাচ্ছে না বলে ওগুলোকে বিশাল দুর্গের ছোট ছোট ঘুপচির মত লাগছে। এর অতিকায় পিরামিডীয় আকৃতি ভয় ধরিয়ে দেয়। এতই শক্ত যে কিছুতেই কিছু হবে না। হাজার হাজার রকেট বোমা ফেললেও না। মনের মধ্যে আবার সেই একই ভাবনা, কার জন্য এই ডায়রি লিখছে সে। ভবিষ্যতের জন্য, অতীতের জন্য—কোনও একটি কাল্পনিক সময়ের জন্য! তার সামনে যা অপেক্ষা করছে তা মৃত্যু নয়, পুরোপুরি ধ্বংস। ডায়রিটাকে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হবে, আর তাকে বাষ্পে পরিণত করা হবে। অস্তিত্ব ঘুচিয়ে দেওয়ার আগে, স্মৃতি থেকে সরিয়ে ফেলার আগে সে যা লিখেছে তা কেবল থট পুলিশই পড়বে। তাহলে যখন আপনার কোনও অস্তিত্বই থাকছে না, এমনকি এক টুকরো কাগজে নামহীন-অর্থহীন একটি শব্দও টিকে থাকছে না তখন ভবিষ্যতের কাছে নালিশেরই বা কী উপায়?

টেলিস্ক্রিন দুপুর ২টার ঘণ্টা পেটালো। দশ মিনিটের মধ্যেই তাকে বের হতে হবে। আড়াইটার মধ্যেই ফিরতে হবে কাজে।

ঘণ্টাধ্বনি তার ভেতরে একটি নতুন ভাবনা তৈরি করল। সে এক একাকী দৈত্য সত্য উচ্চারণ করে চলেছে যা কেউ কখনও শুনতেও পাবে না। কিন্তু যখন সে তা উচ্চারণ করছে, হতে পারে অতি ম্রিয়মাণ সে উচ্চারণ, একটা ধারাবাহিকতা রক্ষা হলো। আপনার কথা অন্যকে শোনানোর মধ্য দিয়ে নয়, বরং যে মানব ঐতিহ্য আপনি বহন করেন তার প্রতি যৌক্তিক থাকার মধ্য দিয়েই এই ধারাবাহিকতা রক্ষা। টেবিলে ফিরে গেল সে, কলম কালিতে চুবিয়ে নিয়ে সে লিখলো:

ভবিষ্যৎ কিংবা অতীতেই যাই, যেতে হবে একটি সময়ে যখন চিন্তা মুক্তি পাবে, যখন মানুষগুলো একে অন্য থেকে আলাদা হবে, আর তারা একা হয়ে যাবে না—একটি সময়ে যখন সত্য বিরাজ করবে, আর যা কিছু ঘটে গেছে তাকে মুছে দেওয়া হবে না: সরে যেতে চাই এই উর্দির যুগ থেকে, একাকীত্বের যুগ থেকে, বিগ ব্রাদারের যুগ থেকে, দ্বৈত চিন্তার যুগ থেকে—শুভেচ্ছা!

তার মৃত্যু হয়ে গেছে, ভাবলো উইনস্টন। তার মনে হলো, ঠিক এখুনি সে তার ভাবনাগুলো গুছিয়ে ভাবতে শুরু করেছে, সে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছে। যে কোনও কাজের পরিণতি ওই কাজের মধ্যেই নিহিত থাকে। সে লিখলো:

থটক্রাইম মৃত্যু ডেকে আনে না: থটক্রাইমই এখন মৃত।

নিজেকে একজন মৃত মানুষ হিসেবে চিনে নিয়ে এখন তার কাছে যতক্ষণ সম্ভব বেঁচে থাকাটাই জরুরি হয়ে উঠল। ডান হাতের দুটি আঙ্গুলে কালি লেগে গেছে। এতে আপনি ধরা পড়ে যেতে পারেন। মন্ত্রণালয়ের কিছু নাক গলানো কর্মী (কোনও নারী, হতে পারে সেই ধূসর চুলের নারী কিংবা ফিকশন ডিপার্টমেন্টের কালোকেশী মেয়েটা) আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে—কেন সে মধ্যাহ্ন বিরতিতে লিখতে গেল—কেনই সে একটি সেকেলে কলম ব্যবহার করল, কী ই বা সে লিখছিল—এবং অতঃপর যথাযথ কর্তৃপক্ষে একটি ইঙ্গিতও ঠুকে দিয়ে আসতে পারে। সে বাথরুমে গেল এবং খসখসে কালচে বাদামি রঙের সাবান, যা শিরিস কাগজের মত চামড়ায় ঘসা লাগায়, তাই দিয়ে যত্নের সঙ্গে আঙুল পরিষ্কার করল।

ডায়রিটি ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখল। এটি লুকিয়ে রাখার চিন্তাই বৃথা, বরং ডায়রিটি যে ওখানে অধরা পড়ে আছে তা নিশ্চিত করতে কিছু একটা করা যায়। পাতাগুলোর শেষ মাথায় আড়াআড়ি একটি চুল থাকতেই পারে। চিমটি দিয়ে কিছু সাদাটে ধুলো তুলে এনে মলাটের এক কোণায় বসিয়ে দিল, কেউ ধরলে ধুলোগুলো পড়ে যাবে।

১০ম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।