ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘ব্রহ্মপুত্রের জলে কাশবনের মায়ায়’ কবিতা ভ্রমণ

মিছিল খন্দকার ও এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৫
‘ব্রহ্মপুত্রের জলে কাশবনের মায়ায়’ কবিতা ভ্রমণ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহের জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা থেকে: শিল্প-সাহিত্যের চারণভূমি ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বসেছিল কবিদের মিলনমেলা। গাছের নিচে খোলা চত্বর।

সেখানে আলো ঝলমলে মঞ্চ।

শুক্র ও শনিবার (২৩ ও ২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কবিদের কবিতা পাঠ, আলোচনা ও গানে গানে মুখরিত হয়ে উঠে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালার মাঠ।

ঢাকার লিটল ম্যাগাজিন ‘লোক’র আয়োজনে অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আগত অর্ধশতাধিক ও স্থানীয় আরও জনা ত্রিশেক কবি পাঠ করেন স্বরচিত কবিতা।

আয়োজনের দ্বিতীয় দিন শনিবার সন্ধ্যায় নব্বই দশকের ১৫ কবির কবিতা পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

কবিরা হলেন- আলফ্রেড খোকন, আশরাফ রোকন, আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কামরুজ্জামান কামু, মাহবুব কবির, মুজিব মেহেদী, মোস্তাক আহমেদ দীন, রোকসনা আফরীন, শামীম রেজা, শামীমুল হক শামীম, শিবলী মোকতাদির, শিমুল মাহমুদ, শেলী নাজ ও হেনরী স্বপন।

তাদের কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন- কবি মজিদ মাহমুদ ও কাজী নাসির মামুন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম।

এর আগে শুক্রবার সকাল ৮টায় ঢাকার কবিরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে বাস ও প্রাইভেটকারে করে রওনা হন।

দুপুরে তারা ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের আমন্ত্রণে চা চক্র ও আড্ডায় অংশ নেন। সন্ধ্যায় বসে ঢাকা থেকে আসা পঞ্চাশ ও স্থানীয় জনা ত্রিশেক কবির মিলনমেলা। কবিতা পাঠ, আলোচনা, গানে বিমোহিত হন পাঠক ও শ্রোতারা। নীরবতা ভেঙে জেগে উঠে শিল্পাচার্য জয়নুল সংগ্রহশালার ময়দান।

ঢাকা থেকে আগতদের মাঝে ছিলেন- বিটিভির মহাপরিচালক কবি আসাদ মান্নান, লেখক পারভেজ হোসেন, গল্পকার শহীদুল আলম, চিত্রশিল্পী নাজিব তারেক, কবি দ্রাবিড় সৈকত, মাসুদ হাসান, জাহিদ সোহাগ, তুষার কবির, মিছিল খন্দকার, তিথি আফরোজ, মামুন খান, কিশোর মাহমুদ, রহিমা আফরোজ মুন্নী, সানাউল্লাহ সাগর, জিয়াবুল ইবন প্রমুখ। ময়মনসিংহ থেকে যোগ দেন কবি সরোজ মোস্তফা, এহসান হাবিব প্রমুখ।

রাতে ব্রহ্মপুত্রে নৌকা ভ্রমণ ও আড্ডা-উল্লাসে মেতে ওঠেন কবিরা।

শনিবার সকালে মুক্তাগাছার সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন মুক্তির আমন্ত্রণে মুক্তাগাছায় ভ্রমণ করেন তারা। সেখানে তারা অংশ নেন কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানে। দুপুরে সংসদ সদস্যের নিমন্ত্রণে ভোজ, সুস্বাদু মন্ডার স্বাদ নেওয়া ও রাজবাড়ী ঘুরে দেখেন কবিরা।

সন্ধ্যায় তারা আবার ফেরেন ব্রহ্মপুত্রের উপকন্ঠে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালায়। এরপর সেখানে শুরু হয় দেশের নব্বই দশকের গুরুত্বপূর্ণ পনের কবির কবিতা পাঠ ও আলোচনা।

গান, আলোচনা ও কবিতায় ব্রহ্মপুত্র পাড়ে সৃষ্টি হয় অন্য রকম এক পরিবেশ। কবিদের কন্ঠে উঠে আসে সময়ের ভাষ্য। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্রী তন্বী সাহা প্রকৃতি।

আলোচনায় ঠাঁই পায় বাংলা কবিতায় নব্বইয়ের কবিদের কবিতার বাঁক বদল ও ভিন্ন স্বরের নতুন অভিযাত্রার গতিপথ। কবিতার মহানগর ময়মনসিংহে নব্বই, শূন্য ও দ্বিতীয় দশকের কবিদের কবিতার স্বতন্ত্র উচ্চারণের স্মৃতি রেখে রাতেই কবিরা রওনা হন ঢাকার উদ্দেশ্যে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লেখক অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম বলেন, কবিদের সঙ্গে  দু’দিনের এ আনন্দ ভ্রমণ এক নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চার করেছে। কবিদের কন্ঠে তাদের স্বরচিত কবিতা শুনে ও আড্ডায় অংশ নিয়ে আমি যেন তারুণ্যেই ফিরে গিয়েছিলাম। নতুন আলোর এ অভিযাত্রীদের প্রতি আমার অফুরাণ শুভকামনা রইল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কবি শামীম রেজা বলেন, এক ভিন্নধর্মী ভ্রমণে কবিদের এ মিলনমেলা বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যকে উজ্জীবিত করবে বলেই আমার বিশ্বাস।

কবি, গীতিকার ও সিনেমা পরিচালক কামরুজ্জামান কামু বলেন, একদল কবির সাথে দুইদিনের এই ভ্রমণ উপভোগ করতে এখানে আসা। আমার উপভোগের কোনো সমস্যা হয় নাই। এ ভ্রমণে এসে আমি আনন্দিত।  

ঢাকা থেকে আসা কবি ও ‘লোক’ সম্পাদক শামীমুল হক শামীম বলেন, কবিরা সব সময় প্রকৃতি প্রিয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবগাহনে স্নাত হয়ে তারা নিজেদের সমৃদ্ধ করেন। আর এ উদ্দেশ্যেই আমরা ঢাকা থেকে ভিন্নধর্মী যাত্রায় ছুটে আসি দু’দিনের এ কবিত ভ্রমণে। ময়মনসিংহে কবিতা পাঠ ও ভ্রমণ আমাদের স্মৃতিতে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৫
এমএ/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।