ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা | সিদ্ধার্থ হক

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
একগুচ্ছ কবিতা | সিদ্ধার্থ হক

বজ্রের আঘাত

বজ্রের আঘাতে আমি পড়ে যাই শূন্যের ভিতরে।
কিছুকাল একমনে হামাগুড়ি দেই আমি সেরে উঠতে চেয়ে।


চারদিকে শূন্যে নির্মিত ঘাস, শূন্যের গুবরেপোকা, শূন্যসাপ, শূন্যের জংশন।
আমার প্রাণের মধ্যে ঢুকে যায় সব, বুকেহেঁটে।
বুদবুদে তৈরি ভূমি পার হয়ে যাই।
মাইল মাইল ভেদ করা আকাশ বিস্তৃত-কারী তার হই, মরুভূমি হই।
উবুভাবে শুয়ে থাকি পথ ছেড়ে রক্ত-বমি-সম লোহিতের মনে।
তারপর বহু কষ্টে শূন্যে দুইহাত মেলে দাঁড়াই যখন
বজ্রের আঘাতে আমি পুনরায় পড়ে যাই শূন্যের ভিতরে।
আমার শরীরমাংস শূন্যের সুঘ্রাণে ভরে ওঠে।
হামাগুড়ি দিতে থাকি, হামাগুড়ি দিতে থাকি আমি বেদনায়।
আমি যাতে পড়ে যাই সে ব্যবস্থা মহাপথে মহা-মমতার মতো জাগে।
আমার হৃদয় সব বোধ করে, সব কিছু জানে, জেনে নেয়।
হৃদয়ে নিঃশব্দ ট্রেন শীত ভেদ করে ছুটে যায়।
শিরশিরে অনুভূতি আমার ও জগতের দেহে বয়ে চলে।

বজ্রের অনেক চুল সাদা হয়ে গেছে এক সময়ের মতো।
বয়স হয়েছে তারও—বহু টায়ারের দাগ তার মুখে ভূমি হয়ে
ধীর পায়ে আসে আর অবগত হয় এ-জীবন। শীর্ণ নীল
শূন্যে গঠিত ঠোঁট বাঁকা হয়ে ঝুলে যায় গভীর অপ্রেমে।
উপত্যকা, দ্রোণী আর নদীবিধৌত ভূমিখণ্ড পার হয়ে
আমার পতিত ট্রেন, ভ্রমপ্রবণের শীত ভেদ করে অসীমার দিকে চলে যায়।
এইসব দেখি আর বজ্রের আঘাত পেয়ে ল্যাবিরিন্থ হামাগুড়ি দেই।
হামাগুড়ি দিতে দিতে শূন্যের সজাগ ঘাসে রূপান্তর হই।
মাটি হই, খালের মতন হই—ডাল ছুঁয়ে দেই ঢেউ-হাতে।
বহুদিন চলে যায়, বোধগম্য হয়ে যায় সব।
সত্য অপলক চোখ ঘাসের, গাছের।
কি যে স্থিতিশীলভাবে তাকায় উদ্ভিদ।
মহা আদি অন্ত আমি; ও-আমার পুনঃপুন বজ্রের আঘাত।
 
ভয়ঙ্কর ভালোবেসে বহু সত্য সাদা ঘাস হয়, হয়ে থাকে।
বহু মিথ্যা মুখর মুখোশ, ডাকে। বহু ঋত জন্ম নেয় মিথ্যার ঔরসে।
শত মিথ্যা বহু বহু সত্যের অধিক হয়ে আসে,
নিমগ্ন গল্পের মতো ফুটে ওঠে আমাদের মুখে।
যখন অশান্ত হই, চুরমার ভেঙ্গে পড়ি উপগ্রহ প্রায়,
হামাগুড়ি দিতে দিতে তখন তোমাকে বড় ভাবি। আমি আজ
সত্য মিথ্যা সবই। তবু যদি কথা হতো আঘাত না পেয়ে—
যদি কথা ভালোভাবে বলা যেত—যদি কথা ভালো মতো হতো—
সময়, শ্রেডার তবু দেহময় কথা যদি হতো—
নীল দীর্ঘ চিকন আলোর মতো কথা যদি হতো আমাদের।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, গান নেই, শুধু ভার আছে।
শূন্যের ভিতরে আমি পড়ে গেছি বজ্রের আঘাতে। আপেক্ষিক
সত্য থেকে পরম সত্যের দিকে যেতেযেতেযেতে
এ-জীবন শেষহীন পড়ে যাওয়া, পড়ে যেতে থাকা হয়ে গেছে—
বহু কষ্টে দুইহাত মেলে ফের দাঁড়িয়েছি যেই
বজ্রের আঘাতে আমি পুনরায় পড়ে গেছি শূন্যের ভিতর।


অনেক কুকুর
 
অনেক কুকুর ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত নভশ্চর এই রাতে।
বহু দূরে দূরে, রিং রোড যেন ওরা অবাস্তব শহরের।
রিং রোড ঘিরে আরো রিং রোড ঘিরে আরো রিং রোড ওরা
এই জীবনের। আমার হৃদয় থেকে উৎসারিত নিঝুম জাতিস্মর।
 
ওদের ধ্বনির নিচে ব্যাখ্যাহীন রিং রোড হয়ে যাই আমি।
টের পাই আজ রাত কুকুরের ডাক। পৃথিবীকে পার হয়ে পৃথিবীর
বেদনার গোলাকার পথ চলে গেছে জ্যামিতিক হাত ধরে, ধীরে,
ঠিক জ্যামিতিরই মতো, গোল আর চ্যাপ্টা হতে হতে,
গোল আর চ্যাপ্টা হওয়া পার হয়ে, বহু দূরে, 
জোছনায় অন্য এক অবিমিশ্র গোল-চ্যাপ্টা হয়ে।

চার পায়ে হেঁটে হেঁটে বহু দূর থেকে ওরা এসেছে এখানে।
যুগান্তরে অসীম নিরবচ্ছিন্ন লালা চেটে চেটে,
বহু আকাশের রেলকর্মীদের পার হয়ে, বহু ভাসমান তাঁবু,
নীল জলে ঢাকা মরুভূমি পিছে ফেলে ওরা ক্রমশঃ এসেছে
তা ওদের ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত প্রগাঢ়তা শুনে বোঝা যায়।
চুপচাপ এইসব নভপ্রাণ ধ্বনিগুলি বুঝে নেই আমি।
এইসব বুঝে নেয়া ছাড়া
আমাদের আর কোনো কাজ নেই এখন এ-রাতে।
 
আজ রাতে কুকুরেরা জীবনের অনেক উপরের অন্ধকারে...পূর্ণিমায়
চলে গেছে। আমাকেও নিয়ে গেছে সাথে।
ঘুমের অমোঘ লোভ, প্রলোভন পড়ে আছে প্রকৃত পিছনে।
সেখানে কখনো ফেরা হবে না আমার।
মুখ উঁচু বিমান-পথের ধ্বনি ওরা—
আকাশে ছড়িয়ে পড়া বিলিয়ন বিলিয়ন নীল রিং রোড।
 
রিং রোড তারাময় রেল, এই পথে কুকুরের
ধ্বনি প্রতিধ্বনির মায়া বাতাবি লেবুর মতো হাত ভরে দেয়।
নরম পুকুর ওরা, চার পেয়ে, ওদের স্পর্শ পেয়ে তার মুখ
মনে পড়ে। নিশাকর আকাশের মৃদঙ্গের শব্দে তাকে জানি।
জেনে নিয়ে, পুনরায় তাকে আরো জানতে যে হবে,
বাতাবি লেবুকে ধরে রিং রোড থেকে আরো রিং রোডে
ছড়িয়ে ছড়িয়ে গিয়ে, বুঝে নেই অধিকের মতো আজ রাতে।
দীর্ঘ নিশ্বাসের প্রায় নিজ অবাস্তবতার কথা মনে আসে।
মনে হয় ভাঙ্গা এক সাঁকো হয়ে ঝুলে আছি এ শহরে, এর চেয়ে 
তাকে ছেড়ে ওই উঁচু হিমকর রিং রোডে চলে যেতে পারা হবে ভালো।
 
এই রাত গ্রাম থেকে হেঁটে আসা ভূমিহীন-পথ,
কন্সট্রাকশনের সাময়িক কাজে লিপ্ত হতে চেয়ে, এ-শহরে,
সঘন বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে উঠে চলে যায়, ব্যাখ্যাহীন।
আমাতে হেলান দিয়ে কুকুরের ধ্বনি প্রতিধ্বনির মতো নরম প্রথায়,
রিং রোডে বসে থাকে অব্যাখ্যাত সকল মানুষ।
ওদের সবার সাথে আমার অমোঘ মিল দেখি।
কারো ঠোঁট নড়ে নাই, তবু না নড়া ঠোঁটের গল্প
শুনি আমি নিয়ত প্রকাশমান রিং রোডে বসে।
ধীরে ধীরে হেঁটে হেঁটে ব্লু মাউন্টেন মনে আসে না আমার।
কুকুরের মতো হয়ে, কুকুরের মতো হয়ে হয়ে,
মানুষের, কুকুরের মতো হয়ে যেতে থাকি আজ,
শুধু মানুষের মতো হতে আর পারব না জেনে।
 
বাতাবি লেবুকে ধরে দুই হাত ভরে।
সব বস্তু প্রাণময়, চক্রাকার লেবু ধরে, নুয়ে, আমি দেখি।
মনে পড়ে পদদলিতের মতো অসতর্ক ছিলাম আমিও—
চিনি নাই তাকে, সত্য তবুও বলেছি।
আমি আর কুকুরেরা অল্পে নেয়া দীর্ঘশ্বাস ছিলাম তখন।
দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস ছিলাম আমি আর কুকুরেরা, মৃদঙ্গ সমান।
ড্যাগারের মতো ধারে তার নাম লেখা হয়েছিল এই দেহে।
পাতার মোহের ধ্বনিচূর্ণ রক্তে ব্যাপ্তি পেয়েছিল।
মিশে গিয়েছিল দ্রুত আমার শরীরে।
তবু আমাকে গাছের মতো কেটে ফেলে দিলে,
কোন দিকে হেলে পড়ে যাব আমি, কিম্বা কাটা হয়ে গেলে,
গাছ কোন দিকে হেলে পড়ে যায় মানুষের মতো,
সেসব সে ভাবে নাই, শুধু কেটে ফেলে দিয়ে চলে গেছে।
 
এখন রাত্রির রৌদ্রে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত রিং রোডে
সকল স্বচ্ছতা ধীরে ভূমিহীন এ হৃদয়ে আসে।
স্বচ্ছতা বিহ্বল আর আমাকে করে না। চাঁদের আলোতে এসে
স্বচ্ছতাকে বুকে নিয়ে চুপ করে বসে থাকি আমি।
অনেক কুকুর ডাকে। সেই ডাকে ভেসে উঠি ধ্বনির মতন।
স্বচ্ছতার কাজ এই, সে তোমাকে ধ্বনির মতন এক নীরবতা দেয়।
লীন হয়ে আসে মুখ, রিং রোডে, অগাধ কিরণে।


বিফল ডাবের
 
বিফল ডাবের মতো জল-নিচে শুয়ে আছি আমি। চ্যুত হয়ে
পড়ে গেছি অসময়ে। ভয়াবহভাবে কোনো পাখি বা কুঠার
আমাকে আঘাত করেছিল। আজ শুয়ে আছি সেইভাবে।
অথবা এ আমি নই। সময়ের বহু আগে পড়ে যাওয়া বৃন্ত-চ্যুত ডাব
জলের অনেক নিচে ম্রিয়মাণ অন্তরীক্ষের মতো শুয়ে আছে।
পানিও বাতাস এক, তাতে ডুবে নানাভাবে শুয়ে থাকা যায়।
স্বপ্নের বিধ্বস্ত মেধা এ শোয়ায় আছে। আমি দেখি জল কোনো
ঘুম নয়, স্তরে সুবিন্যস্ত নীল ইনসমনিয়াক মাছ আজীবন জেগে আছে।
অনিদ্র নিকটে আসে—ঘুরে ঘুরে আপনার কথা বলে মানুষের মতো: বলে,
প্রথমে পুকুর-পাড়ে ধপ করে পড়েছি রাত্রিতে; পাড় খুব
ঢালু বলে এরপর গড়িয়ে গড়িয়ে আমি পুকুরে পড়েছি।
মাছের এ গল্প শুনে আমি ধন্ধে পড়ি। কে তবে পড়েছে জলে,
কে রয়েছে জল-নিচে শুয়ে, কে তাহলে
ধীরে ধীরে চলে গেছে জগতের গভীর অতলে? দেখি আমি
আহত ছিলাম বলে নিচে নেমে যেতে তত সময় লাগেনি—
আমার বা ফলের বা মাছের বা এ পুকুরের ক্ষত নিয়ে,
এতসব ক্ষত নিয়ে নীল জগতের মধ্যে আমি স্থাপিত আছি—
আমার ভিতর থেকে উপরের পৃথিবীর প্রাথমিক বুদবুদগুলি
বের হয়ে চলে গেছে অনেক উপরে—
ছায়ারাও ছেড়ে গেছে আমাকে তখন—
সূর্য আর নিয়ন্ত্রণ করে না আমাকে।
ঘুম-জাগরণ-হীন সত্য কিম্বা বাস্তবিকতার কথা বলে নীল-মাছ।
সকল কথার থেকে দূরে যেতে এসেছি জলের নিচে আমি।
কিন্তু দেখি এখানেও কথা বুদবুদ সারাদিন সারারাত।
অথবা সকল কথা আমি আর দিগম্বর ডাব।
ঝরে তবে যায় নাকি জল-নিচে পাতার কঙ্কাল, মাছ হয়ে?
অনেক অরণ্য বুঝে রয়ে গেছে এই রসাতলে, ঋতু-হীন?
এ-সব প্রশ্নের মতো জলের অনেক নিচে এ জীবন পুনরাবৃত্তিময়।
এ-নীল অতল গ্রহে সব কিছু ঘুরে ঘুরে ঘটে
এখানে সকল প্রাণ আগে ঘটেছিল দূর পুনশ্চ-জীবনে—
স্থিতিস্থাপকতার ব্যথা এইখানে কম—শরীর ওজনহীন—প্রেম নিয়ে
সে-বেদনা নেই—ঘূর্ণমান ব্যক্তিগত বোধ নেই—
বৃত্তাকার রেললাইনের মতো জীবন চলছে ধীরে ধীরে।
বিবিধ স্তরের নিচে ক্ষয়হীন পড়ে থাকা রয়ে গেছে।
পুকুরের উষ্ণতাকে অনুভব করা আছে একা শুয়ে।
জলের দিগন্ত সাদা-সীমাহীন, তার কোনো দুর্ব্যবহার নেই।
এখানে সকল নগ্ন তাই কোনো নগ্নতাও নেই।
প্রতিফলনের মতো জীবনের ধার আর ধারাবাহিকতা বাঁকা ক্ষীণ হয়ে যায়
জলে ডুবে। সময় সন্তপ্ত হয়ে অর্থাভাবে ডাব হয়, শোয়ার ভিতরে
শুয়ে থাকে। ফল হয়ে ঝুলবার দীর্ঘসূত্রী স্মৃতি মনে পড়ে।
ফল হয়ে ভেসে আছি জলের গভীরে, দেখতে পাই।
শরীরে বাতাস লাগে পুকুরের পাড়ে শুয়ে থেকে, পাড়দের এ নিয়ম।
ফলে অধিকন্তু দেখি ফল হওয়া জলের অতল অনুভব।
মানুষের প্রায় কোনো পুকুরের উপকূলে হাঁটবার কথা মনে এলে
দেখি আমি নীল-মাছ হয়ে এই জলের বিবিধ তীরে হাঁটি।
তার তীব্র অপব্যবহার থেকে সরে এসে, মাছ হয়ে, ফল হয়ে,
ডাবের বোধের মতো জলের অনেক নিচে নেমে গিয়ে, শুয়ে থাকি আমি।
শুয়ে থাকা যায় বলে, আমার নিগম, জলের অনেক নিচে
তক্ষকের মতো ডেকে ওঠে। জলের অনেক নিচে নেমে যাওয়া ছাড়া
পৃথিবীর তক্ষকের ডাক শোনা সম্ভব যে নয়, তাও বোধগম্য হতে
হতে শোনা যায় তক্ষকের ধোঁয়াশা বা পূর্ণিমার গান।
অশরীরী কথা হয়; কথাগুলি শরীরবিহীন এক মুখ।
কথা শেষ হয়ে আসে। চেতনায় অবলুপ্ত কাঁপে।
কথা বলা শুরু হয় সে ফলের, ডুবে যাওয়া শরীরের সাথে।


বেকারত্ব

এখন কুয়ার নিগ্রো নীরবতা আমি—তাই অতি সহজেই
আমার সহিত দুর্ব্যবহার করা যাবে, করা যেতে পারে।

আপন কদর্য মন আপনার মধ্যে রয়ে গেছে;
উড়ন্ত সেতুর নিচে জমে আছে স্থবির পাহাড়।
একটু ঊর্ধ্বমুখী হয়ে কুয়ার উপরে
গোলাকার আকাশ নেমেছে—
ফলে বলা যায়, চোখ খুলে
আমিও প্রস্তুত আছি এ-সব গ্রহণে।
আজ অবসর বহু—তার দুর্ব্যবহার ব্যবচ্ছেদ করা যায়
বসে বসে সারাদিন রাত।
বিকালকে ভাবা যায় রাতভর।
জেগে জেগে ভেবে দেখা যায় অপমান।
বহুরাতে স্বপ্নে যদি সাপের ছোবল আসে নেমে
সহজ চিৎকারে তবে জেগে ওঠা যায় বহুরাতে
কিম্বা আরো পরে, আরো বহু পরে, অন্য শেষরাতে,
কোনো পরদিন, অসীমার পরে এক দিন,
বহু অ-দিনের পরদিন, কিম্বা অন্য সে-দিবসে
জেগে ওঠা সম্ভবপর হয়।
ঘুম ভাঙবার মুহূর্ত থেকেই আগেকার
অপব্যবহারগুলি চিন্তা করা যায় নিচু হয়ে।
বোমারু স্বপ্নের মতো উড়ে চলে যায় নীল মাছি।
অবিরাম দুরাচরণের বসে থাকি আমি, তার কাছে।
এসব নৈকট্য জানি গভীর আপোস—
ফলে সে দুর্ব্যবহার করে।
তবু কদাচার পার হয়ে, তার বেদনাকে দেখি।
এই দেখা ক্লান্তিকর কাজ, তবু দেখি।
এ দেখা সয় না তার, ফলে
স্বপ্নের সেতুর মতো হেঁটে হেঁটে কোথায় যে যায়...
হয়ত ঘুমাতে যায় লগ-কেবিনের উষ্ণতায়, বেদনায়,
ফলত রাখে না আর বিকল্প সংযোগ;
রাখে না উপায়ান্তরের যোগাযোগ।
দুর্ব্যবহারের মতো অপূর্ব মুখশ্রী মনে পড়ে, ভয় আসে।
এখন তো কিছু নেই, আমি নেই, সেও নেই, ভয় নেই,
তবু কেন ভয় রয়ে গেছে?
অতল কদর্যরূপে আমার কদর্য মন রয়ে গেছে ভয়ে।
সাপের কুণ্ডলী হয়ে শুয়ে আছে চক্ষুশূন্য চক্ষু খুলে আমার ভিতরে।
কিছু নেই, শুধু এক ভয় রয়ে গেছে হৃদয়ের, এ-হৃদয়ে।
এ-ভয়কে অঙ্গীকারের মতো ব্যবহার করে
আবার সে অন্যের সহিত তার মিলনের গল্পগুলি বলে।
আমার নৈকট্য তাকে অতিক্রম করে যেতে হয় গল্প বলে।
অতিক্রম করে যাওয়া কত যে কঠিন আমি দেখি
ভয়কে অঙ্গীকারের মতো সে এখনো ব্যবহার করে...
এইভাবে চলতে থাকে—কাছে আসা, ভয় পাওয়া, গল্প বলা;
অতিক্রম করবার চেষ্টা করা, অতিক্রম না করতে পেরে
দুর্ব্যবহার করা—চলতে থাকে, চলতে থাকে, থাকে;
ঋতু প্রবর্তন হয়; অরণ্যের পলেস্তারা খসে যায়,
নতুন বাকল জন্মে, খসে পুনরায়,
তারাপুঞ্জ ঘুমায় ও জাগে,
দুর্ব্যবহার করা চলতে থাকে, চলে।
এখন নিঃশব্দ আমি, অন্যকে সহজে জানা যায়।
রৌদ্রের টেনিস-বল ভোর থেকে অভিঘাত হানে।
ঘাসের মোরগ আর বাতাসের, পানিদের পাখি ডেকে চলে;
এসবের অন্তরালে ক্ষয়ে যায় সামুদ্রিক চিল।  
গগন নিঝুম বলে কিছু দূর বহুদূর বলে মনে হয়।
সকল বাতাস ঘোরে প্রলম্বিত গর্তে।
ক্ষুধা-হীন হাতগুলি দিগন্তকে স্পর্শ কি করে?
ঝাউ বনের ওপাশে, ওই দূরে, ভোরের তরঙ্গ দেখা যায়।
দূরদেশে সমুদ্রের ঢেউটিন ওঠে নামে কুয়াশা পর্যন্ত।
গ্রাম-বেড়ে মোরগের কুজ্ঝটিকা নুয়ে আসে সন্ধ্যার মতন—
সর্বত্র বাতাস হাঁটে, বেতন-বিহীন ভাবে প্রবাহিত হয়।



বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।