লতিফুল ইসলাম শিবিলী পর্দার আড়ালে থাকতেই বেশি ভালোবাসেন। ৯০’এর দশকে জড়িত ছিলেন নাটক, গান, মডেলিং এমনকি রাজপথের আন্দোলনে।
ছড়াকার ফারাবী লেখক সম্পর্কে বলেন, তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি স্বভাবজাত বোহেমিয়ান। প্রিয় বিষয় পলিটিক্স, হিস্ট্রি, পেইন্টিংসকে আরও জানতে ঘুরে বেড়িয়েছেন ইউরোপের পথে-প্রান্তরে।
সত্তর-আশি দশকের অভিমানী এক তরুণের ঢাকার শান শওকত রেখে ডাক্তারি পড়তে আমেরিকায় চলে যাওয়া। যুদ্ধে উন্মাতাল অস্থির আমেরিকায় এক সময় পড়ালেখা ছেড়ে সে সহপাঠীদের সঙ্গে ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। জাতীয়তা ভুলে একসময় নিজেকে আবিষ্কার করে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে। সমমনা এক আমেরিকান তরুণীর সঙ্গে তার প্রেম এবং নানা ঘটনা পরিক্রমায় ৭০ বছর বয়সে তার ঢাকা ফিরে আসা। এসব নিয়েই দারবিশের গল্প।
‘দারবিশ’এর সব চেয়ে বড় বিষয় চিন্তালোকে ভিজ্যুয়ালাইজেশন। পড়তে পড়তেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই সত্তর আশির দশকের ঢাকা। যে শহরকে লেখক দেখিয়েছেন ‘সিটি অব মিউজিক’ হিসেবে যেখানে রিকশার টুংটাং পিয়ানোর সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠের আজান মিলেমিশে তৈরি হতো অদ্ভুত কম্পোজিশন। কালের বিবর্তনে এ শহরের বদলে যাওয়া, প্রেম, বিচ্ছেদ বেদনা, অভিমানের গল্প উঠে এসেছে সেখানে।
সেই ঢাকা থেকেই তিনি পাঠককে আবার নিয়ে গেছেন ৬০ মিলিয়ন হিপ্পিদের ঘুরে বেড়ানো সেই ভিয়েতনাম যুদ্ধকালীন অস্থির ‘সেক্স ড্রাগস অ্যান্ড রক এন রোল’ সংস্কৃতির আমেরিকায়। পাঠককে সম্পৃক্ত করেছেন বিপ্লবের সঙ্গে, বিভিন্ন মাফিয়া গ্যাংয়ের সঙ্গে, হিপ্পিদের সঙ্গে। পড়তে পড়তে চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো মেক্সিকো সীমান্তবর্তী কলোরাডোর পাইন রেডউড আর ম্যাপেল গাছের আকাশ ছুঁতে যাওয়া রহস্যময় অপার্থিব আলোর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে একদল হিপ্পির ঘুরে বেড়ানো। নিজেকেও যেন মনে হচ্ছিলো সেই প্রথাবিরোধী বিপ্লবী হিপ্পিদের দলের একজন বলে। এটাই মূলত লেখকের স্বার্থকতা। পাঠককে লেখার গভীরে নিয়ে নিজের মতো দেখতে অভ্যস্ত করা। লেখক শিবলী সেই কাজটা করেছেন অত্যন্ত সুচারুভাবে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের বর্বরতা, যুবকদের আমেরিকা ছেড়ে পালানো, মাদক চোরাকারবারী লস জিতাসের মতো বিভিন্ন মাফিয়ার কথা, ডালাসের ক্যাসিনো ব্যবসাসহ তৎকালীন আমেরিকার আরও নানা বিষয় উঠে এসেছে নানা প্রসঙ্গে।
গল্পের অন্য চরিত্রগুলো যেমন রোদেলা, সঞ্জু, টুটুলের সঙ্গেও পাঠকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন অদ্ভুতভাবে। রোদেলা যেমন শিল্পমনা তার প্রেমিক সঞ্জু তেমনই একগুঁয়ে যে শিল্প সংস্কৃতির ধার ধারে না। টুটুলের চরিত্রটা কিছুটা রহস্যাবৃতই করে রেখেছেন লেখক।
যন্ত্রণাদায়ক সুন্দর জীবনের যন্ত্রণা আর সুন্দরের আলাদা করার মাঝেই জীবনের উপভোগের মূলমন্ত্র। উপন্যাসের মূল চরিত্র জামশেদের ‘ইউ হ্যাভ ফেইথ অন মি’ ডায়লগের মধ্য দিয়ে আধ্যাত্মিকতার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে নানা পর্বে।
লেখকের প্রথম উপন্যাস বলেই হয়তো একটু তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে গল্প। আশা করি নানা পরিচয়ের মাঝে তার কথাসাহিত্যিক পরিচয়টিও স্থায়ীত্ব লাভ করবে।
‘দারবিশ’ পাওয়া যাচ্ছে একুশে বইমেলার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নালন্দার ৩৭৩-৩৭৬ নম্বর স্টলে। মূল্য-২২৫ টাকা। এছাড়া রকমারি ডটকমের সাহায্যে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আগ্রহীরা সংগ্রহ করতে পারেন।
বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সোহেল আনাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
এমএন/ওএইচ/এএ