আমরা জীবনে এসেই জেনে যাই মৃত্যুর কথা তবু আমরা এর থেকে ক্রমশ সরার চেষ্টা করি। পূর্ববর্তী লেখায় ‘প্লেট-ফিদো’ সংলাপের কথা উল্লেখ করেছি সেখানে মৃত্যুকে মৃত্যু বা শেষ হিসেবেই দেখছেন না সক্রেটিসের মতো দার্শনিক।
মার্ক টোয়েন মৃত্যু সম্পর্কে বলেছেন, ‘I do not fear death. I had been dead for billions and billions of years before I was born, and had not suffered the slightest inconvenience from it’।
উইলিয়ম ফকনার বলেছেন, ‘I could just remember how my father used to say that the reason for living was to get ready to stay dead a long time’।
হারুকি মুরাকামি বলেছেন, ‘Death is not opposite of life, but a part of it’।
আসলে ধর্ম, মিথ এসব কিছুই মৃত্যুকে প্রহেলিকাময় করেও মৃত্যুকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। সক্রেটিস নিজেই মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে কর্ম অনুযায়ী ভাগ করেছেন এবং বলেছেন, মৃত্যু পরবর্তী আত্মা কোথাও অস্তিমান থাকে তা আবার কর্ম অনুসারে দেহ ধারণ করে ফিরে আসে। এর বিভিন্ন বদল ঘটেছে বিভিন্ন ধর্মে, বিভিন্ন গোষ্ঠী-জাতিতে। আফ্রিকান আদিবাসীরা মৃত্যু পরবর্তী আত্মা ও তার অপশক্তি বা ভূতে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে মানে। কোনো ছোটো বাচ্চার মৃত্যুকে তারা খুবই ভয়ঙ্কর ও ভৌতিক কারণ বলে মনে করে। তাই তারা বাচ্চাদের এরকম কিছু নাম রাখে যেনো তারা এরকম ঘটনার সম্মুখীন না হয়। তারা মৃত দেহকে অনেকসময় ঘরের একটি দেয়ালের ফুটো দিয়ে বের করে। স্বাভাবিক রাস্তা তারা মৃত্যুপরবর্তীকে দেখায় না যেনো সে পুনরায় ঘরের রাস্তা চিনে ফিরে না আসতে পারে। যদিও এসব কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু মনে রাখতে হবে এর মধ্যেই আছে সংস্কার শব্দ, যার মূলে আছে ‘বিশ্বাস’। একজন প্রেমিকা তার প্রেমিককে ভালোবাসে বিশ্বাসে। মানুষ স্বপ্ন দেখে সেটাও বিশ্বাস। বিজ্ঞান যুক্তি দিয়েও সব তাড়াতে পারছে না কারণ, সেই বিশ্বাস!
আসলে গঠিত জীবনের এক নিস্তব্ধ দাঁড়ি হলো মৃত্যু— তাই মৃত্যুর মহিমা ছোট করে দেখা সহজ না, এখন তো কোয়ান্টাম ফিজিক্সও মৃত্যু পরবর্তী শক্তির পক্ষ সমর্থন করছে।
মিক মাইথোলজিতে বলা হয় ‘প্যান্ডোরা বক্স’ নাকি মৃত্যুর কারণ। জেসাস ও প্রমিথিউসের দ্বন্দ্ব থেকেই এর আগমন। তাদের দ্বন্দ্ববশত জেসাস এক নারীর সৃষ্টি করেন যার নাম প্যান্ডোরা, প্যান্ডোরা আগমনকালে একটি বাক্স সমেত আসে। প্যান্ডোরা গ্রিসের দেব-দেবীর আশীর্বাদে সুসজ্জিত; তাকে অ্যাথেনা দিয়েছেন বস্ত্র, অ্যাফ্রোদিতি দিয়েছেন সৌন্দয, অ্যাপোলো গলার সুর আর হার্মিস ভাষা। প্রমিথিউসের ভাইয়ের কাছে প্যান্ডোরাকে পাঠানোই ছিলো প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু প্যান্ডোরা কৌতূহল চাপাতে পারেনি।
সেই বাক্স খুলে ফেলে। এর ফলে বাক্স থেকে বেরিয়ে আসে মৃত্যু সম্পর্কিত শয়তানেরা। প্যান্ডোরা বাক্স বন্ধ করতে চায় কিন্তু বাক্সের মধ্যে ‘আশা’ ছাড়া আর কিছুই পড়ে থাকে না।
অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত-কুখ্যাত কুইন্সল্যান্ডে যে অস্তিত্বগুলো দেখা দিয়ে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়, এর কাছাকাছি একটি জলাশয় আছে যা ছেলেদের জন্য CURSED (অভিশপ্ত)। সব ছেলেরা এখানে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়...। এই যে কার্স (curse), হেক্স (HEX), স্পেল (SPELL)— এর আগমন পেনসিলভ্যানিয়ার ডাচ থেকে। ডাকিনীবিদ্যা কেন এতো জনপ্রিয় এইসব জায়গায়, নিশ্চয় কিছু অসাধ্য সাধন হয় কিন্তু আমরা বিচারে যাব না, আচ্ছন্ন করতে পারে যে তাকে বিচার না করাই ভালো! ইনক্যান্টেশনস (ডাকিনী মন্ত্র) এর মাধ্যমে এরা নিরুদ্দিষ্ট আত্মাকে শক্তিশালী করে পুতুলে প্রবেশ করায়। রানিক অক্ষরের মাধ্যমে (RUNIC ALPHABET) এই কাজ হয়ে থাকে... এইরকমই এক প্রকারভেদ হলো শবসাধনা— নিরুদ্দেশকে উদ্দেশ্য করা (NACROMANCER)— হোমারের ওডিসিতে এর উল্লেখ আছে। ষোড়শ শতাব্দীতে অত্যাচারিত আফ্রিকান ক্রীতদাসরা ভুডুর প্রচলন করে, এক ধরনের পুরোহিত শ্রেণী তৈরি হয়, তারা আত্মা আর মানুষের সংযোগ ঘটায়, তাদের বলা হয় লেগবা, যা এখনও তীব্রভাবে প্রচলিত, হেইতি দ্বীপের উপখণ্ড এই চর্চার আখড়া, হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক অধ্যাপকের মত অনুযায়ী, এটি চূড়ান্ত ভয়ের সৃষ্টি করেছিল মানুষের মধ্যে। ওয়েস্ট আফ্রিকায় এরই পরিবর্তিত প্রথা হিসেবে জম্বির আগমন হয়, এই প্রথার স্রষ্টারা হলেন ‘BOKOR’। বলা হয় ‘ZOMBIES HAVE NO WILL THEIR OWN’ তারা বোতলবন্দি আত্মার মতো সংরক্ষিত হয়, এই ধরনের আত্মা ইমপ্লান্ট করা মৃতদেহকে নুন খাওয়ালেই নাকি তারা দুর্বল হয়, নির্দিষ্ট সময় পরে নাকি ঈশ্বর এই আত্মাকে ফিরিয়ে নেন, তাই তাদের অস্তিত্ব খুব কম।
ডারউইনের বিবর্তনবাদ পড়ার আগে যেমন আপনাকে দশজন বিজ্ঞানীর মত পড়তে হয়, সে যতোই গাঁজাখুরি মনে হোক, আপনাকে পড়তে হয় পচা ইঁদুর থেকে নাকি মানুষ সৃষ্টি, সেরকম এগুলোও না হয় ভাবলাম, তার মধ্যে এগুলো চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়েছে। বিজ্ঞান তাই একে প্যারাসাইকোলোজি দিয়ে ব্যাখ্যা করে, কিন্তু এইসব ঝেড়ে ফেলতে পারেনি। এরপর আসা যাক জিনের কথায়, তরঙ্গধর্ম এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে অবশ্যই গ্যারান্টিসহকারে নয়, ফ্রিকোয়েন্সি ম্যাচ না করলে নাকি তারা আবিভূর্ত হন আধিভৌতিক দুর্যোগের দিনে, তারপর কিছু ক্ষতি বাতলে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। হুমায়ূন আহমেদের ‘ম্যাজিক মুনশি’-তে কিছু প্রক্রিয়া বলে দেওয়া হয়েছে যার মাধ্যমে নিরুদ্দেশকে উদ্দেশ্য করাই যেতে পারে। মুশকিল হচ্ছে যেখানেই তারা ফলপ্রসূ হয়েছে প্যারাসাইকোলজি একে হ্যালুসিনেশন বলে দিয়েছে। যদিও ম্যাজিক মুনশিতে উপায় বলে তার নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া রয়েছে। সাইকিক পাওয়ার দিয়ে এক অসাধ্য সাধন করেছিলেন এক বিদেশি নারী আলেকজান্দ্রা ডেভিড নীল, যিনি আঠারো বছর বয়স থেকেই এই উদ্দেশ্যকে ফলপ্রসূ করতে আগ্রহী হন। তিব্বতে এসে এই বলে তিনি বানান এক প্রাণবত্তা টুলপা (TULPA বাতিব্বতীয় ভূত)— এ এমন এক ধরনের আত্মিক শক্তি যাকে অবলম্বন করে গ্রাহ্য দেহ, বলা হয় তারা ধীরে ধীরে নিজস্ব শক্তি সম্পর্কে সচেতন হয় যেমন আরকি রোবোটিক্স ল–এর অ্যাবনর্ম্যালিটি হলে হয়! পরে এটি নিজস্ব বলে বলীয়ান হলে ভূত জাতীয় লামাটিকে তিনি ধবংস করে দেন। ‘STATUE OF DORJE SHUGDEN’ এরকম ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে।
আসলে বাস্তবটাই উদ্দেশ্যবিহীন একটা রেচনলীলা— আগে জল পরে ঘাম, পরে বাষ্প আবার জল। চূড়ান্ত একটা শব্দের প্রহেলিকা, সিদ্ধান্ত একটা ধাঁধাঁ— ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ একটা গন্তব্যহীন জোড়! দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এই তিনটি মাত্রার বাইরে কিছু মাত্রা আছে, ESP (EXTRASENSORY PERCEPTION) যার ভেতরে ছায়া-প্রচ্ছায়া ইতি-উতি খেলছে, গঠনের বাইরের গঠন, আণুবীক্ষণিক গঠন, দৃশ্যের বাইরের দৃষ্টি এরাই গন্তব্যহীনের গন্তব্য।
নিরুদ্দিষ্ট সেইসব অস্তিত্বদের এই নিষিদ্ধনামচা, সাইকোকাইনেসিস অনুযায়ী তরঙ্গমাফিক আমরা এগোচ্ছি, এই প্রভাব অনুযায়ী ভৌতিক-আধিভৌতিক অস্তিত্ব আছে, যা হ্যালুসিনেট করি তা যদি প্রমাণযোগ্য নাও হয় তবেই কি তা বিশ্বাসযোগ্য নয়! কারণ, অনেক প্রমাণিত বস্তু বা বিষয় তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি বা তার ব্যাতিক্রমও আছে, মিথ বা মিথ্যার মোড়কে যদি কিছু সত্যি থেকে থাকে... যেমন বিভিন্ন স্বপ্ন বিশ্লেষণ বা সাইকিক ড্রিমকে মনোবিদ্যা তার দৃষ্টান্ত অনুযায়ী ব্যাখ্যা করে, যেমন বিমূর্তদের প্রভাব বা অনুভবকে অধ্যাস বা ইলিউশন বলে আবার স্পেকট্রোফিলিক অস্তিত্ব— ভৌতিক যৌন সম্পর্ককে স্লিপ অ্যাপনিয়া ইত্যাদি প্যারানর্ম্যাল আলোচনা দিয়ে বিচার করা হয়, কিন্তু যদি এর বাইরে ভাবি সেই অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ‘THE WHALEY HOUSE’, ইংল্যান্ডের ‘THE WINDSORE CASTLE’, কলকাতার ন্যাশন্যাল লাইব্রেরি, পুরোনো রেডিয়ো অফিস ইত্যাদিতে দেখতে পাওয়া সেই অস্তিত্ব যারা সময়ের অন্তরে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তাদের প্রতি সযত্নশীল হয়ে বর্তমানে যেসব ক্যামেরা আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে গ্রেইন টেস্ট করে অতি বায়বীয় নিরুদ্দিষ্টদের জানার চেষ্টা চলছে...। ভেবে দেখাই যেতে পারে, এই যে আমরা কল্পনা করি তার উপাদানগুলো কিন্তু বাস্তবই হয়, শুধু কাঠামোটা অভ্যস্ত জগতের নয় বলে তাকে কাল্পনিক বলি আমরা।
আসলে সামগ্রিক বিজ্ঞান মৃত্যুপরবর্তীতে অস্তিমান থাকাকে বিশ্বাস করতে পারে না অথচ বিজ্ঞানের অংশই একে দাবি করে যথা কোয়ান্টাম ফিল্ড থিউরি, প্যারাসাইকোলজি এবং কিরলিয়ান ফোটোগ্রাফি। এই পদ্ধতি চামড়া বহির্ভূত অন্য কিছুর প্রভাব যা কিনা অবিনশ্বর, তার প্রভাব দাবি করে। মৃত্যুর পর যখন রাইগর মর্টিস তথা পেশীর অবসাদজনিত কাঠিন্য আসে তখন মাইক্রোটিউবিউলের কোয়ান্টাম পরিস্থিতি বদলাতেই পারে কিন্তু তাতে সংরক্ষিত তথ্য কখনও মরে না।
১৯০১ সালে চিকিৎসক ডানক্যান ম্যাকডুগাল (ম্যাসাচুসেটস) বলেন, যার ভর আছে তার তো শক্তি থাকবেই, সুতরাং ভর আর শক্তির অনুপাতের বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য তিনি তার ছয়জন যক্ষ্মা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের ওজন নেন এবং মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই আবার তাদের ওজন নেওয়া হয়। দেখা যায়, ওজন হ্রাস হয়েছে। এখানে তিনি আত্মার উপস্থিতি ও অনুপস্থিতিতিকে কারণ হিসেবে নিয়ে আসেন। পরে অবশ্য তার সম্পর্কে বলা হয়, তার ব্যবহৃত জিনিস ও পদ্ধতিসমূহ সেইসময় যথাযথ ছিলো না। বিজ্ঞান যদিও সক্রেটিসের বেশ কিছু তথ্যকে নির্ভুল বলে মানেনি। পরীক্ষাগত স্বীকৃতি নিয়ে তাই বলছেন সিনসিনাটির বিশিষ্ট লেখক ও ওহিও ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জন কচুবা, তিনি অস্থির শক্তি তথা আত্মার বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করে চলেছেন বিভিন্ন উন্নত যন্ত্রের মাধ্যমে, যে যন্ত্রগুলি বর্তমানে এই অতিপ্রাকৃত শক্তির হদিশ দিতে পারছে বলে দাবি করছে। সেগুলো হল- ১. কপার রড (যা শরীরের মধ্যে ও বাইরের ঋণাত্মক শক্তিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম) ২.ই এম এফ মিটার (এটা তেজস্ক্রিয়, অতিবেগুনি, অন্যন্য ক্ষতিকর তরঙ্গ শক্তিকে নির্দেশ করে যা কখনই জীব থেকে নির্গত হওয়া সম্ভব নয়। ৩. ইউনিভার্সাল স্ক্যানার (এটি সময়ের চক্র বা তার বয়স নির্ধারণে সক্ষম) ৪. রেম পড (এটি এমন একটি শক্তিকে নির্দেশ করে যা জীবজ উপাদান থেকে উৎসারিত কিন্তু জীবন্ত নয়, আর এর শক্তির তরঙ্গদৈর্ঘ্য উচ্চক্রমের হয়)। আবার এই সূত্র ও চিন্তার ব্যাপক বিরোধিতা করেছেন বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন র্যাডফোর্ড তিনি কিছুতেই আইনস্টাইনের সূত্রকে আত্মাশক্তি প্রমাণের সূত্র বলতে নারাজ। হতে পারে কোয়ান্টাম বা কসমসের সূত্র কোনোভাবে আত্মাশক্তিকে নির্ধারণ করতে পারে কিন্তু E=mc^2 কে আত্মা শক্তির প্রভাবক সূত্র বলা সম্ভব নয় এই কারণে কিছু শক্তিও যদি আত্মাশক্তিতে রূপান্তরিত হয় তবে শক্তির ধ্রুবকত্বের সূত্র সেখানে ব্যর্থ হয়। তারা সম্পূর্ণভাবে জৈব বন্টনের মাধ্যমে শক্তির প্রসারে বিশ্বাসী। আবার এই মতকে ভুল প্রমাণ করে দিচ্ছে কিরলিয়ান ফটোগ্রাফি যা গ্যাসীয় আবহাওয়া তৈরি করে জীবন্ত ও মৃতদেহের পরীক্ষা করে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, শক্তি তথা বায়বীয় কিছু ঘন উপাদান মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই শরীর থেকে বেরিয়ে যাছে। তারা আত্মার শক্তিকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। চীনের গ্লাসটেস্টের পরীক্ষকরাও সম্পূর্ণরূপে মৃত্যু পরবর্তী শক্তি বা আত্মার কথা বলছেন। এই সময় বিজ্ঞানী রবার্ট ল্যানজা তার একটি বিশেষ বই যার নাম ‘বায়োসেন্ট্রিজম’–এর মাধ্যমে কোয়ান্টাম থিউরিকে আত্মা নির্ধারণের উপায় বলে দেখাচ্ছেন। এর আগে তিনি স্টেম সেল ও অ্যানিম্যাল ক্লোনিং গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করেছেন। এখন কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিয়ে কার্মরত। তিনি বলছেন, আমাদের সবচেয়ে বড় অসুবিধা আমরা পর্যবেক্ষণের আগেই সূত্রের ধার ধারছি আর সেখানে সবচেয়ে ভিত্তি পূর্ণ ভুল হলো সচেতন অবস্থার সচেতনতা যাতে কিনা প্রয়োগ হচ্ছে পূর্বোক্ত শেখা সূত্র। সেখানে নিজে দেখা, নিজে জানার বিষয়টা লুকিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলছেন, এই মহাবিশ্ব, আকাশ, সময় এগুলো আর আমরা— পুরোটা মিলেই আত্মিক স্তর, সচেতনতার স্তর। আর এখানে জন্ম-মৃত্যু একটা মিডিয়াম। যেমন কচ্ছপ আর তার কঠিন ক্যারাপেস। ক্যারাপেস খোলাই থাক আর বন্ধই থাক কচ্ছপ আর এর প্রাণ এখানে প্রতিমুহূর্তে রয়েছে। তেমনিই সচেতনতা, জন্ম, মৃত্যু এগুলো চিহ্নিতকরণের উপায় মাত্র। আসলে দেহ থাক বা না থাক দেহজ প্রাণ আগে ও পরে উভয়েই অস্তিমান। না হলে মৃত্যুকে ধ্রুবক মানতে হয়, আর মৃত্যুই একমাত্র সত্য হলে আর চক্রই তৈরি হবে না, সব কেবল নিঃশেষ হতে থাকবে। অথচ বাস্তবে তা হছে না। শক্তি তাকে আত্মাই বলি, প্রাণই বলি আর যাই বলি তা জন্মের আগে থেকে মৃত্যুর পর অবধি তা অস্তিমান। সে দেহ খোলাই থাক বা বন্ধই থাক। এই হলো ল্যানজার বায়োসেন্ট্রিজম–এর কিছু কথা। এখন বিশ্বের সমস্ত ব্যাখ্যা যা সম্পূর্ণ তাকে আমরা স্বাভাবিক বলি আর যা অসম্পূর্ণ তাকে অস্বাভাবিক বলি। এই সম্পূর্ণ আলোচনায় একেবারেই আত্মা যে আছে তা প্রতিষ্ঠা পায় না কারণ, এখানে পরস্পরবিরোধী বহু তথ্যই আছে। অতএব এই আপাত মৃত্যুর পংক্তিরা বাস্তব আর অবাস্তব যাই হোক এটা অনস্বীকার্য যে, মানবজীবনের ভাবনাতে এরা বেশ বাসা বেঁধে প্রভাব ফেলতে সক্ষম। তাই আমরা ভাবতেই থাকি এই জীবনই-বা কী আর মৃত্যুই-বা কী! আর এদের নো ম্যানস ল্যান্ডে যে শক্তি দাঁড়িয়ে আছে সেকথা না ভোলাই ভালো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এসএনএস/