২.
ক্লাস এইট-এর পর নিয়ম করে পরীক্ষা পাশের জন্য আর কখনও ইতিহাস পড়িনি। তাই আফিম-গাথার পুরনো সূত্র ধরে বর্তমানকে খুঁজতে গিয়ে লাইব্রেরিতে রীতমতো তাঁবু খাটিয়ে বসতে হল।
লিখে আর পড়ে কেটে গেল দু’টো বছর। মাস্টারি ডকে ওঠার শামিল। এক চিলতে সময় পেলেই লিখতে বসছি। ক্লাস-সেমিনার চলাকালীন লাস্ট বেঞ্চে বসে নিজেকে আড়াল করে খসড়া লেখার ওপর কলম চালাই। নোট টুকে রাখি। অন্য অধ্যাপকরা ভাবতেন, আহা, গবেষণায় কী ঝোঁক ছেলেটার!
বিরাট বিষয় ও প্রেক্ষাপট, কমপক্ষে এক লাখ শব্দ তো লিখে ফেলতেই হবে। কিন্তু ছাপবে কে? ঘটনাচক্রে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি আমাকে চাকরির প্রস্তাব দিল এক টার্মের জন্য। এক লাফে পাণ্ডুলিপি বগলদাবা করে আমি পৌঁছে গেলাম আটলান্টিক পেরিয়ে বিলেতে। ইংরেজিতে বই ছাপানোর ব্যাপারে নানা প্রবাদ চালু আছে বাজারে। যেমন জানাশোনা না থাকলে বই বের করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। আমার বিভাগের লোকজন আর শিক্ষার্থীদের ছাড়া ইংল্যান্ডে কাউকে চিনি না। অর্থাৎ পেশাগত গণ্ডিির বাইরে আমার কোনও জানা-শোনা নেই। অতএব নিষ্ঠাবান ও সংগ্রামী লেখকের মতো প্রকাশক আর এজেন্টদের চিঠি লিখে চিড়ে ভেজানো ছাড়া উপায় কি!
গোটা সাতেক প্রত্যাখ্যানের পর একজন লিটারারি এজেন্ট ফোন করে বই পড়তে চাইলেন। ইংরেজদের এই একটি বিষয় খাসা। অন্যের মুখে নয়, স্বয়ং নিজের মুখে ঝাল খেতে চায় তারা। বই পড়ার আগ্রহের খবরেই আমি সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে কিঞ্চিত আলোর ঝলকানি দেখতে পাই। তারও সপ্তাহ দুয়েক পর আমাকে ডেকে পাঠালো হল লন্ডনে প্রকাশকের দফতরে। তখন আমার অবস্থা অষ্টাদশবর্ষীয় প্রেমিক যুবকের মতো রোমাঞ্চে টগবগে, যে জানে না তার গার্লফ্রেন্ড তাকে সত্যি ভালবাসে, না মিছিমিছি ঘোরাচ্ছে।
লন্ডনের এজেন্ট ঘণ্টা তিনেক ধরে ইন্টারভিউ নেওয়ার কায়দায় নানা প্রশ্ন করলেন, এই চরিত্র এমন কাণ্ড ঘটাল কেন, গল্পে ওই চরিত্রের ভূমিকা কী? ততক্ষণে দুপুরের লাঞ্চ জুড়িয়ে ফ্রিজ। শেষমেশ চেপে রাখতে না পেরে বাঙালিসুলভ অত্যাগ্রহে বলে ফেললাম, ‘বইটা কেউ ছাপতে রাজি হবে কি?’ যেমন, বিপদগ্রস্থ বেকাররা বলে থাকে, ‘চাকরিটা সত্যি সত্যি হবে তো স্যার?’ ইংরেজসুলভ কূটনৈতিক কায়দায় উত্তর পেলাম, ‘মনে তো হয় হবে। ’ সেই মনে হওয়াই হয়ে ছাড়ল। বছরখানেকের মধ্যেই বই প্রকাশিত হল পৃথিবীর সব ক’টি ইংরেজিভাষি দেশে। সামান্য কিছু মন্দ আর প্রচুর ভাল রিভিউ বের হল। ডাক পড়ল দেশ-বিদেশের সাহিত্য-সভায়। সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দেওয়া রপ্ত হল। আমার মতো সমাজ বিজ্ঞান ও রাজনীতির মাস্টার সাহিত্যের বিশাল উঠানের নিভৃত কোণে একটু নিজস্ব জায়গা পেল।
কিন্তু একদিক থেকে সাফল্য এলেও অন্য দিক থেকে বিপদ হাজির হল। ইতিমধ্যে বারো বছর কেটে গেছে। মধ্যে ছ’টি বই অন্যান্য বিষয়ে লিখেছি। প্রথম বইটা এখনও নানা দেশের বুক-স্টলে দেখি। পুনর্মুদ্রিত হয়েছে অনেক বার। আবার হবে এই বছর। গোটা চারেক পিএইচডি আর বেশ কয়েকটা মাস্টার্স থিসিস রচিত হয়েছে হিরণবাবুর উপাখ্যানকে জড়িয়ে তৎকালীন আর্থ-সামাজিক ও ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে। তবে এটা লিখতে গিয়ে একটা ভয়ংকর সত্য অনুভব করেছি: লেখার নেশা আফিমের নেশার চেয়েও মারাত্মক। দ্বিতীয়টির জন্য পকেটে পয়সা থাকা দরকার, কিন্তু প্রথমটার বেলায় তা নয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে সবাই যখন ঢাকার বাংলা একাডেমির একুশে বই মেলায়; আমি তখন অস্ট্রেলিয়া থেকে কানাডা ফিরছিলাম একটা সেমিনার সেরে। পথে সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্টে কয়েক ঘণ্টার ট্রানজিট। চোখ গেল অদূরে অপেক্ষমাণ এক সুন্দরীর দিকে। তার থেকে চোখ ফেরানো মুশকিল। খেয়াল করে দেখি, তার কোলে আমার প্রথম বই! কিন্তু মেয়েটির মুখ এতো ম্লান কেন? তার চোখ উদাস। তাকিয়ে আছে বটে সে, কিন্তু যেন কিছুই দেখছে। তার দৃষ্টি মনে হচ্ছে সুদূরের কোথায় আটকে আছে। বেশ সময় নিয়ে লক্ষ্য করলাম। মেয়েটি নির্বিকার। আর সহ্য করতে পারছি না। কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম:
-আর য়্যু ওকে?
-ইয়েস। অ্যাম অল রাইট। কিন্তু আমি তোমার কথাই ভাবছিলাম।
আকাশ থেকে পড়েছি বললে কম বলা হয়। আমি হতবাক। বলে কি মেয়ে! চিনি না, জানি না, দেখি নি কোনও দিন, সে কি-না আমার কথা ভাবছে! এ রকম অবাক আমি খুব কমই হয়েছি জীবনে। বাকরুদ্ধ হয়ে নিজের সিটে ফিরে এসে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটির দিকে। কিছুক্ষণ পর সম্বিত ফিরে পেলাম তার কথা শুনে। ততক্ষণে সে এসে আমার পাশে বসেছে।
-অবাক হলে তো! অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আমি তোমার বইয়ের পেছনের পাতায় লেখকের ছবি দেখেই তোমাকে চিনে ফেলেছি। তারপর থেকেই ভাবছি তোমাকে নিয়ে।
-কেন! আমাকে নিয়ে ভাবছ কেন?
-বইটি পড়েই আমার ভাবনার শুরু। কেমন দায়িত্বহীন উপন্যাস লিখে জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছো তুমি। দু’ শ বছর আগের ঔপনিবেশিক শোষণ আর নেশার সম্প্রসারণবাদকে আচ্ছা মতো ধোলাই করে তুমি বেশ বাহবা পেয়েছ। আচ্ছা, ইংরেজরা যে তোমাদের কোহিনূর হীরা নিয়ে গেছে, সেটা কি ফেরত দিয়েছে? এখন তুমি যদি শোষণ ও নেশা বিস্তারের জন্য তাদেরকে দায়ী কর, তাহলে কি তারা দায়িত্ব নেবে? ক্ষতিপূরণ দেবে? ফিরিয়ে আনতে পারবে না হারানো একটি কণাও।
শেষের কথাগুলোতে পরিস্কার শ্লেষ-মাখা। আমি পাল্টা জিজ্ঞেস করি:
-একজন লেখক ও গবেষক হিসাবে আমি কি করতে পারি? আমার তো রাজনৈতিক দায়িত্ব বা সরকারি ক্ষমতা নেই যে কাউকে জবাবদিহি করবো? লুটের মাল জব্দ করে আমি কি ভাবে ফিরিয়ে আনবো?
আমার কথায় সে কিছু ভাবলো মনে হলো। তারপর ধীরে ধীরে বললো:
-তা নেই। তবে তোমার মতো একজন লেখকের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে সমকাল, সমসময় ও বাস্তবকে তুলে ধরা। তুমি সেটা কর নি। তুমি অতীতের চশমা পরে হারিয়ে গেছো। বর্তমানকে ভুলেও স্মরণ কর নি।
মেয়েটির জ্ঞানদানের ভঙ্গিতে আমি কিঞ্চিত বিরক্ত! সে কি মহাপণ্ডিত বা প্রাজ্ঞ সমালোচক নাকি? ওর কথার ব্যাখ্যা চাই আমি:
-তার মানে? আসলে কি বলতে চাচ্ছো তুমি স্পষ্ট করে বলো?
-মানে অতি স্বচ্ছ। আমি বলতে চাচ্ছি, উপনিবেশবাদের সহযোগী হয়ে এসেছিল আফিম। ঠিক কথা। কিন্তু এখন নব্য-উপনিবেশবাদের সঙ্গী হয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোতে অবাধে আসছে হেরোইন, মারিজুয়ানা, চরস, ফেনসিডিল, ইয়াবা। তুমি তোমার বইটি লেখার বারো বছর পরে যা ঘটছে সেটা দেখতে পাচ্ছ না, উপনিবেশিক হ্যাঙওভারের মধ্যে আটকে আছ।
আমিও তাকে সোজাসুজি জানিয়ে দিই:
-আসলে তুমি কি চাও একজন লেককের কাছে?
-আমি চাই তুমি তোমার সেই দেশকে আবার দেখ। যেখানে একদা উপনিবেশবাদ আর আফিম হাত ধরাধরি করে এসেছিল। সেখানে এখন নব্য-উপনিবেশবাদ বিশ্বায়নের উদার স্রোতে নিয়ে আসছে হাজার নেশা। পশ্চিমা অর্থনীতির প্রধান দুই স্তম্ভ অস্ত্র ব্যবসা আর মাদক ব্যবসা কিভাবে তোমাদেরকে আক্রান্ত করছে, সেটা দেখ এবং লিখো।
আমার বিস্ময়ের ঘোর না কেটে বরং বেড়ে যেতে লাগল। বারো বছরে আমার বইটি নিয়ে কত প্রশংসা ও নিন্দার আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। অথচ কেউ তো এই মেয়েটির মতো সাজেশন দেয় নি। জিজ্ঞাসু চোখে আমি তার দিকে অপলক চেয়ে রইলাম। সে সম্ভবত বুঝতে পেরেছে, আমি ওর কথা আরও শুনতে চাচ্ছি। আমার চোখে চোখ রেখে জানতে চাইল:
-ইতালির নেপলস গিয়েছ কখনও?
-নেপলস কেন?
-তুমি যদি আজকের প্রেক্ষাপটে নেশা, রাজনীতি, অস্ত্র ব্যবসা, সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে লিখতে চাও, তাহলে তোমাকে শুরু করতে হবে নেপলস থেকে।
আমি নেপলস সম্পর্কে কম জানি না। বললাম:
-নেপলসকে ইতালিয়ানরা ডাকে নাপোলি। নাপোলি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি কিছুদিন পড়িয়েছি। আমি যখন প্রথম নাপোলি যাই, কাছের অপূর্ব সুন্দর কাপ্রি দ্বীপে বেড়াতে গিয়েছিলাম। নাপোলির রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ওই শহরে সোফিয়া লোরেন অভিনীত একাধিক ছবির কথা মনে পড়ত। সোফিয়া কোমর দুলিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, পাড়ার ফচকে ছেলেরা নানা রকম কুপ্রস্তাবমূলক মন্তব্য ওর দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে, আর অদম্য সোফিয়া তার উত্তরে যেসব দুর্দান্ত মন্তব্য করতে করতে দৃপ্তভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তার মর্মার্থ হচ্ছে, ওসব কুকাজ তোদের মা-বোনদের সঙ্গে করগে যা! সেই নেপোলিতে কাহিনীর শুরু হবে কিভাবে?
আমার বিবরণ শুনে বেশ শব্দ করে খিলখিলিয়ে হাসল মেয়েটি, যে মেয়ের নাম ও দেশ আমি জানি না। দিব্যি জেনে গেলাম, হাসলে ওর সৌন্দয্য চুল থেকে চিবুক বেয়ে সারা শরীরে তরঙ্গায়িত হয়। হাসি মুখেই সে বললো:
-আমাকে হাসালে তুমি। বেশ মজা পেলাম সোফিয়া লোরেনের রিভিউ শুনে। তুমি যে নেপোলির চিত্র জান, সেখানে তোমার গল্পের তথ্য নেই। তোমাকে নেপোলি শহরের প্রাচীন অংশের নোংরা ও সঙ্কীর্ণ গলিগুলোকে ঘুরতে হবে। তোমাদের পুরান ঢাকা কিংবা উত্তর কলকাতার সাদৃশ্য পাবে সেখানে। নেপোলির সেই নিষিদ্ধ ও অন্ধকার অংশে আন্তর্জাতিক অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সম্রাট কুখ্যাত-নৃশংস মাফিয়া ডন কামোরা-র রাজত্ব। তার অপরাধের জাল বিস্তৃত রয়েছে সারা বিশ্বে। কাবুল বা মেক্সিকো সিটির কোনও অস্ত্র বা মাদকের চালানের মূল নিয়ন্ত্রা সে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তার বিরুদ্ধে বলে বটে, কিন্তু তাকে দিয়েই সব কুকর্ম করিয়ে নেয়। তোমাদের দেশের গুণ্ডা-বদমাশরা ওর কাছে দুধের শিশু। নেপোলির গলিতে বড় হওয়া ইতালীয় লেখক রোবের্তো সাভিয়ানো এই মাফিয়ার বীভৎস কার্যকলাপ ও পদ্ধতির উপর ‘পোমোরা’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। যার ভিত্তিতে একটি বিখ্যাত সিনেমাও হয়েছে। এখন এই লেখকের ওপর ডন কামোরা ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের খাঁড়া ঝুলছে। তিনি চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশ প্রহরায় গোপনে বেঁচে আছেন। আমি জানি, এতটুকু ঝুঁকি তুমি নিতে পারবে না।
আমি মনে হচ্ছে মেয়েটির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যাচ্ছি। কিংবা মেয়েটিই তর্কে তর্কে আমাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। বললাম:
-আমার ঝুঁকির প্রশ্ন পরে। তুমিও তো হয় ইংরেজ, নয় আমেরিকান। সাম্রাজ্যবাদীদেরই দোসর। তুমি এত বড় বড় কথা বলছ কেন?
আবার হাসল মেয়েছি। এবার স্মিত হাসি। সকালে সূর্যোদয়ের মতো গোলাপি আলো সে হাসিতে চারপাশ ছড়িয়ে গেল।
-ভুল করলে তুমি। আমি সাম্রাজ্যবাদী নই। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করি। দারিদ্র্য, মাদক, মানব পাচার, যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রায়-সকল দেশেই আমাকে কাজ করতে যেতে হয়। তোমাদের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে আমি নিয়মিত যাই। বাংলাদেশও অনেক বার গিয়েছি। অতএব সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে আমাকে মেশাবে না। আর আমি ইংরেজও নই, আমেরিকানও না। আমার নাম মার্গারেট। আমি ফরাসি। এই নাও আমার বিজনেস কার্ড। তোমার কাজের ব্যাপারে কোনও তথ্যের দরকার হলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। আশা করি গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে আবার আমাদের কোথাও দেখা হতে পারে।
মার্গারেট উঠে দাঁড়াল। সময় নিয়ে হাত মেলাতে মেলাতে বললো:
-তোমাকে একটি অনুরোধ করি। সাদা চামড়া দেখলেই ইংরেজ ভেবো না। ইংরেজরা বেনিয়ার জাত। আমরা বিদগ্ধ। ওদের একজন মাত্র শেকসপিয়ার। আর আমাদের বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষর দিয়ে এক একজন বড় কবির নাম পাওয়া যায়।
মার্গারেটের প্লেনের ডাক পড়েছে। সুরের একটি অতি চেনা লহরী তুলে সে এয়ারপোর্টের অভ্যন্তরে চলে গেল। আমার জানা সামান্য ফরাসি ভাষা ভাণ্ডার থেকে মাত্র একটি শব্দই মনে পড়ল, ‘ফোরমিদাবল’-দুর্ধর্ষ সুন্দরী। (চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
জেডএম/জেডএম