দাম্পত্য জীবনে নারী-পুরুষের দ্বন্দ্ব চিরকাল ধরেই ছিলো। এর ফলে বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটতে দেখা যায় অহরহ।
সিনেমায় টেড ক্রেমার একজন বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। কিন্তু দায়িত্বের চাপে সে ভুলে যায় তার স্ত্রীকে সময় দিতে। দিনের পর দিন একজন স্বামী যখন তার স্ত্রীকে সময় দেওয়া থেকে বিরত থাকে তখন হঠাৎ করেই ঘটতে পারে বিচ্ছেদ। জোয়ানা ক্রেমার সেই কাজটিই করেছিলো। সে স্বাধীন, স্বনির্ভর জীবন চেয়েছিল। তাইতো একদিন হুট করে টেডকে ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু বাড়িতে রেখে যায় তার বাচ্চা ছেলে বিলিকে। বিলি আর নতুন চাকরির চাপে বিপর্যস্ত হতে থাকে টেড। প্রতিদিনের সকালের নাস্তা তৈরির প্রক্রিয়া তার অজানা, কীভাবে একটা বাচ্চা ছেলেকে সামলে চলতে হয় তাও তার অজানা। পদে পদে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে থাকে টেড।
শুধু টেড সংগ্রামে পতিত হয় তাই নয়। বিলিও তার মায়ের অবর্তমানে নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়। প্রথম দিকে তার বাবা তার মনের কষ্ট, তার চাওয়া-পাওয়া বুঝতে পারে না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যেতে থাকে। টেড বন্ধুসুলভ হয়ে ওঠে বিলির সঙ্গে।
তবে ঘটনা শুধু সংগ্রামে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটাই চলচ্চিত্রটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সংগ্রামকে অতিক্রম করে দ্বন্দ্বে পরিণত হয় কাহিনী। দেড় বছর পর নিউইয়র্কে ফিরে আসে জোয়ানা। জোয়ানা সাত বছর বয়সী বিলিকে তার কাছে নিয়ে নিতে চায়। কিন্তু টেড সেটা মেনে নিতে পারে না। আদালতে গড়ায় বিষয়টি। এমন এক দ্বন্দ্বময় শৈল্পিক মুহূর্তের অবতারণা হয়, যা দেখে সবাই অবাক হবে। সত্যের সঙ্গে সত্যের লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত যে ফয়সালা হয় তাতেও সমাপ্তি ঘটে না চলচ্চিত্রটির। এক ঠাণ্ডা-শীতল আবেগী শেষদৃশ্যের মাধ্যমে সিনেমাটি শেষ হয়।
সিনেমার শেষ দৃশ্য সবসময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। কোর্টরুম ধারার সিনেমাতে এটা আরও আকর্ষণীয় হয়। কিন্তু এরকম পরিবারকেন্দ্রিক একটি চলচ্চিত্রে কী করে এমন দারুণ সমাপ্তি টেনেছিলেন সেটা পরিচালক রবার্ট বেনটন ভালো বলতে পারবেন। এমন সফল দ্বন্দ্বপূর্ণ পারিবারকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র হলিউডে এসময়ে দেখা ভার।
চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্যেও রবার্ট বেনটন তার দারুণ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন। অ্যাভেরি করম্যানের ক্রেমার ভার্সেস ক্রেমার উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটির চিত্রনাট্য রচিত। সিনেমাটিতে জাস্টিন হফম্যান, মেরিল স্ট্রিপ, জাস্টিন হেনরি ও জেইন আলেকজান্ডার তাদের অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
চলচ্চিত্রটিতে চিত্তাকর্ষক কোনো কিছু আনয়নের চেষ্টা চলেনি, বরং পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থার একটি বাস্তব রূপ দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। তবে এটি শুধু পশ্চিমাদের হৃদয় স্পর্শ করবে তা নয়, এটি সব সমাজের সিনেমাপ্রেমীদের মনকে নাড়া দিতে সক্ষম। পরিবারকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব নির্ভর ও কোর্টরুম ধারার সিনেমার তালিকায় এটি আরও যুগ যুগ ধরে জীবিত থাকবে।
যুগোত্তীর্ণ হওয়ার প্রায় সব উপাদানই চলচ্চিত্রটির ভেতর রয়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদের দীর্ঘশ্বাস, সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসা ক্রেমার ভার্সেস ক্রেমারকে এমন একটি উচ্চমার্গীয় অবস্থানে উত্তীর্ণ করেছে, যার স্বাদ অন্য কোনো চলচ্চিত্র দেখে উপভোগ করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
এসএনএস