ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শিল্পকলার সেরা পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৭
শিল্পকলার সেরা পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা; ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

ঢাকা: মোগল সাম্রাজ্যের সময় থেকেই ঢাকা ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে। ওই সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী শাসক ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর। তার সময়ে সুবেদার ইসলাম-খান-চিশতী সুবে বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। তিনি ঢাকার নামকরণ করেন জাহাঙ্গীরনগর।

মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘ঢাকায় রাজধানী প্রতিষ্ঠায় সম্রাট জাহাঙ্গীরের অবদান’ শীর্ষক আয়োজিত এক সেমিনারে এমনটাই জানালেন জাদুঘরের সচিব শওকত নবী। অনুষ্ঠানে ইতিহাসপ্রেমী,পণ্ডিত ও বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত হন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক মো. আব্দুল জলিল মিঞা। তিনি তার দেওয়া বক্তৃতায় বলেন, সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন এক মহৎহৃদয় সম্রাট। অতিরিক্ত ভোগ-বিলাসী না হয়ে বরং  সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন অনেক সদগুণের অধিকারী।  একই সঙ্গে তিনি ছিলেন ন্যায় বিচারক ও প্রজাবৎসল শাসক। তিনি সর্বদাই প্রজাদের কল্যাণের কথা ভেবেছেন। এসবের পাশাপাশি তিনি ছিলেন শিল্পকলার উৎসাহদাতা ও পৃষ্ঠপোষক। তার শিল্পানুরাগ, ন্যায়নিষ্ঠতা ও ন্যায়বিচারের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। সর্বদা তিনি ন্যায়বিচার  প্রতিষ্ঠা ও  প্রজানুরঞ্জনের জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করতেন। তার আমলে মুগল সাম্রাজ্য উন্নতির  শিখরে পৌঁছেছিল।  

তিনি ইসলাম খান চিশতীকে সুবে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন। ইসলাম খান চিশতী দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে রাজধানীকে ১৬১০ সালে বুড়িগঙ্গাতীরবর্তী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। তখনই ঢাকা প্রথমবারের মত বাংলার রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে বলেও জানান এ বক্তা।

গবেষক মো. আব্দুল জলিল মিঞা আরও বলেন, জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে স্যার টমাস রো নামে জনৈক ইংরেজ ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের দূত হিসেবে তার রাজসভায় আগমন করেন। তারই চেষ্টায় ইংরেজরা ভারতীয় উপকূলে বাণিজ্যের বিশেষ সুবিধা পায়। জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে পর্তুগীজ বণিকেরাও সর্বপ্রথমে আমেরিকা  থেকে ভারতবর্ষে তামাকের আমদানি করে। তিনি তার পিতার মতো বহুদিন রাজত্ব না করলেও তার ২২ বছরের শাসনকাল বহু ঘটনায় পূর্ণ ছিল।

অধ্যাপক ড. আয়েশা বেগম বলেন, সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন ন্যায় বিচারের অনুরাগী। প্রকাশ্যে প্রত্যহ ন্যায়বিচার পরিচালনাকে তিনি একটি পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করতেন। তার রাজ্যের সবাই (হিন্দু-মুসলমান) যেন ন্যায়বিচার পেতে পারে, সেজন্য তিনি নানাবিধ ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। সকলকেই তিনি সমান দৃষ্টিতে দেখতেন। প্রজাদের অভিযোগ শ্রবণ ও প্রতিকার করার উদ্দেশ্যে তিনি আগ্রা দূর্গের স্বীয় খাস-কামরায় এক তোড়া ঘন্টার সাথে একটা স্বর্ণ-শৃঙ্খল প্রাসাদের বাইরে স্থাপন করেন। এসব সদগুণ ও ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য তাকে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন অধ্যাপক ড. আয়েশা বেগম, ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিক, মো. ইদ্রিসুর রহমান, মহসিন হোসাইন, ড. মো. আলমগীর, এইচ এম সিরাজ ও নাসির হেলাল।    

বক্তাগণ সম্রাট জাহাঙ্গীরের অবদান আগামী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য ইতিহাসের ব্যাপক চর্চার প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৭/ আপডেট ১৭৫৮
এইচএমএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।