বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সকালে ল্যাবএইডে ভর্তির পর থেকে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) ভোর পর্যন্ত তিনি ছিলেন আইসিইউতে।
সাহিত্যিক শওকত আলীর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানায়, শনিবার (৬ জানুয়ারি) তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়েছে।
পেশাগত জীবনে প্রথমে সাংবাদিকতা ও পরে শিক্ষকতায় যুক্ত শওকত আলীর জন্ম ১৯৩৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। তাঁর জন্মস্থান পশ্চিম দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ শহর, যা বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত।
বাংলাদেশের আধুনিক কথাসাহিত্যের তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের তিনি একজন খ্যাতনামা অধ্যাপক। পুরান ঢাকার জগন্নাথ কলেজেই তার শিক্ষকতার অধিকাংশ কাল কেটেছে।
শওকত আলী ৩২ টি উপন্যাস ও ৫টি গল্পগ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর বহু লেখা অপ্রকাশিত রয়েছে। 'প্রদোষে প্রাকৃতজন' তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। তবে তিনি খ্যাতির শীর্ষে আরোহন করেন তাঁর ত্রয়ী উপন্যাস দক্ষিণায়নের দিন, কুলায় কালস্রোত এবং পূর্বরাত্রি পূর্বদিন-এর জন্য। এই ত্রয়ী উপন্যাসের জন্য তিনি ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার পান।
নিজের ত্রয়ী উপন্যাস সর্ম্পকে শওকত আলী এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন,"ষাটের দশকের মানুষের মধ্যে চিন্তাভাবনার যে পরিবর্তন আসছে, সেটাই 'দক্ষিণায়নের দিন' যার মানে হচ্ছে শীতকাল আসছে। 'কুলায় কাল স্রোত' হচ্ছে পরিবর্তন যেখানে আঘাত করছে। আর 'পূর্বরাত্রি পূর্বদিন' হচ্ছে নতুন সময়টি আসার একেবারে আগের সময়টি। মূলত ষাটের দশকে আমাদের মধ্যবিত্ত এবং সমগ্র সমাজব্যবস্থায় একটা পরিবর্তন আসে। নতুন একটা চিন্তা-চেতনা দ্বারা আলোড়িত হয় পুরো সমাজ। ধ্যান-ধারণা চাল-চলন জীবনব্যবস্থায় একটা পরিবর্তনের সুর বেজে ওঠে। সেসবই উপন্যাসে আনতে চেয়েছি। "
শওকত আলীর উপন্যাসে গ্রামীণ ও নাগরিক জীবন চমৎকারভাবে মূর্ত হয়েছে। ব্যক্তির চরিত্র চিত্রণে এবং সমাজের পালাবদল তুলে ধরতে তিনি পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন। ভাষাশৈলী ও বিষয়ের বিশ্লেষণে তাঁর স্বাত্যন্ত্রিক বৈশিষ্ট্য খুবই স্পষ্ট ও উজ্জ্বল।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক সহ একাধিক সম্মাননায় ভূষিত অগ্রণী কথাশিল্পী শওকত আলী সুস্থ হয়ে পাঠকের মাঝে আবার ফিরে আসবেন, এমন প্রার্থনা ও প্রত্যাশা সকলেরই।
বাংলাদেশ সময়:২২২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৮
এমপি/জেএম