বহুকাল ধরে আমরা কথায়, সুরে, রেখায়, রঙে, কাঠে, পাথরে এ মহান মানুষটির ইমেজ গড়ে চলেছি। তবে শিল্পী শেখ আসমান হেঁটেছেন একটু অন্যপথে।
এ শিল্পী শুধু জাতির পিতার মুখাবয়ব নয়, এঁকেছেন তার আত্মীয়-পরিজনকেও। রয়েছে ৭ মার্চের তর্জনী উদ্ধত মুজিব, যুদ্ধাহত দেশে প্রত্যাবর্তন মুহূর্তে বেদনাহত মুজিব, ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে হাস্যোজ্বল মুজিব, সন্তানের পাশে পিতা হিসেবে, বাবার পাশে, স্ত্রীর পাশেসহ সহযোদ্ধা হিসেবে রাজনীতিকদের সঙ্গে মুজিব ইমেজকে কাঠ খোদাই করে তুলে এনেছেন শিল্পী শেখ আসমান। কাঠের আঁশের বৈচিত্র্যে শিল্পকর্মগুলোয় মুজিবের অভিব্যক্তি যেন পেয়েছে আলাদা এক রূপ।
নিজের শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকেই মূলতো এ প্রদর্শনী করা। মহান এ মানুষটিকে নিয়ে এর আগে বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ হলেও কাঠচিত্রে তাকে নিয়ে কোনো কাজ হয়নি। তাই একটু ভিন্ন আঙ্গিকে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এ প্রদর্শনীতে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি অঙ্কনে শিল্পী হিসেবে যে ঝুঁকিটা পোহাতে হয়েছে, তা হলো তার চরিত্রের নানামুখী স্ফুরণ, যা তার ভরাট চেহারায় সততই প্রকাশিত। শুকনো প্লাইউডের বুকে বুরিন চালিয়ে তার ছবি খোদাই করার সময় আমাকে যতটা মূলানুগ থাকতে হয়েছে, তার থেকে বেশি বিবেচনায় রাখতে হয়েছে তার চরিত্রের ওজস্বিতা। একই সঙ্গে সচেতন থাকতে হয়েছে বাংলাদেশের জনমানুষের অন্তরে বঙ্গবন্ধুর যে ছাপটি রয়েছে তার ঔজ্জ্বল্য সম্পর্কে।
শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে প্রদর্শনীতে বাংলানিউজের কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক ড. সুশান্ত কুমার অধিকারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, চিন্তা ও দক্ষতায় বাঙালির ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের বীর প্রতীক শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ঘটনা এভাবে উপস্থাপন করাটা অনন্য। আর মুজিবকে নিয়ে কাঠ-খোদাই শিল্পের এ শিল্পকর্ম এটাই প্রথম।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) প্রদর্শনী ঘুরে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অসাধারণ ও নিখুঁত কাজের পরিচয় এ শিল্পকর্মগুলো। নতুন প্রজন্মের মধ্যে শেখ মুজিবের আদর্শকে ধারণ করতে এসব শিল্পকর্ম বিশেষভাবে আমাদের সাহায্য করবে।
মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব যেন প্রেরণা বীজ হয়ে অঙ্কুরিত হয়েছেন শিল্পীর মনে। সে ধ্যান-ধারণারই ফসল যেন পুরুষোত্তম প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া শিল্পীর ৪৫টি শিল্পকর্ম।
১০ জানুয়ারি এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রদর্শনী চলবে আগামী ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী উন্মুক্ত সবার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
এইচএমএস/এএ