স্বামী মংছেনচীং এরপর এবার শোভা রানী ত্রিপুরা পেলেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। গত ৯ ডিসেম্বর তিনি রোকেয়া পদকে ভূষিত হন।
এর আগে ২০১৫ সালে ‘গবেষনায়’ বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে পদকে (জাতীয় পুরস্কার) ভূষিত হন মংছেনচীং।
শোভা রানী ত্রিপুরা: শোভা রানী ত্রিপুরা পেশায় একজন শিক্ষিকা। শিক্ষিকা হলেও পাহাড়ি জীবনযাত্রা ছাড়াও তিনি গল্প, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমন কাহিনী লেখেন।
তার প্রকাশিত সাহিত্যপত্রের মধ্যে রয়েছে, ঝরাপাতা (কবিতা), ত্রিপুরা জাতির ইতিকথা, ত্রিপুরা জাতির রূপকথা, জাতক (বুদ্ধ), ত্রিপুরা জাতি, ত্রিপুরা জাতির ইতিবৃত্ত, আলোময়ীমা ত্রিপুরেশ্বরী, শুভ বাংলা নববর্ষ, স্বপ্নের ধূসর ছায়া (গল্প), ‘রাখাইন ও ত্রিপুরা জাতিসত্তা’, ধূসর পাহাড়ে সবুজ তারুণ্য (গল্প), ত্রিপুরা জাতির কিংবদন্তি, একুশের অপরাজিত কথামালা (নাটক), গিরি নন্দিনী (কবিতা) ও আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বৌদ্ধ বিহার ও ভদন্ত চন্দ্র মণি মহাথেরো প্রভৃতি।
শোভা ত্রিপুরা ১৯৭৩ সালে বঙ্গভবনে কৃতি যুব সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালে ঢাকা নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা আয়োজিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার লেখিকা হিসেবে সংবর্ধিত হন। শিক্ষকতায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে তিনবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ ত্রিপুরা জাতির মসী চালনায় ‘অগ্নিকন্যা খেতাব’ প্রাপ্ত হন।
এছাড়াও ১৯৮১ সালে ‘বনভূমি সাহিত্য পুরস্কার’, ১৯৮০ ও ১৯৮৫ সালে রাঙ্গামাটি উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট হতে রূপকথা পুরস্কার, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ আদিবাসী কবি পরিষদ ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পক্ষ হতে কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘সম্মাননা সনদ’, ঢাকায় ‘ছায়ানীড় স্মারক সম্মাননা’, বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসে সাহিত্য সংস্কৃতি উৎসবের ‘রাহিলা সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি সভাঘর কর্তৃক আঞ্চলিক ভাষা ও কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘কবি নজরুল স্মারক সম্মাননা ২০১৪’ দেওয়া হয়।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ‘জয়িতা’ হিসেবে পুরস্কৃত হন। শোভা ত্রিপুরা ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বরকলে জন্মগ্রহণ করেন।
শোভা ত্রিপুরা বলেন, ‘এটা আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। আমার দীর্ঘদিনের সাধনার ফল পেয়েছি। আমি সবার কাছে দোয়া চাই। যেন এভাবে লিখে যেতে পারি। ’
শোভা রানী ত্রিপুরা ১৯৭৭ সালে শিক্ষক হিসেবে চাকরি পান। বর্তমানে জেলার মহালছড়ি চৌংড়াছড়িমূখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পদে কর্মরত। ১৯৮৪ সালে বিয়ে করেন আরেক লেখক ও গবেষক মংছেনচীং মংছিনকে।
মংছেনচীং মংছিন: মংছেনচীং মংছিন। পাহাড়ের এক আলোকিত নাম। যার চিন্তা চেতনায় রয়েছে শুধুই লেখালেখি। আর লেখালেখির স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি অর্জন করেছেন জাতীয় পুরস্কার ‘একুশে পদক’। মংছিনের মূল বিষয় ছিল রাখাইন জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নিয়ে। কখনোবা উঠে এসেছে দেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবনমান নিয়ে।
১৯৮০ সালের ১ জুলাই তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থের নাম কক্সবাজার রাখাইন ছাত্র সমাজ। এবং ২০১৫ সালে ২১ বইমেলায় প্রকাশিত সর্বশেষ গ্রন্থের নাম রাখাইন ছাগা (রাখাইন ভাষার বই)।
সবমিলে তার গ্রন্থের সংখ্যা ১৭টি। তার প্রকাশিত অন্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে গবেষনামূলক গ্রন্থ ‘রাখাইন ইতিবৃত্ত’, কবিতা সংকলন ‘সৈকত নন্দীনি’, গান ও ভাষা নিয়ে ‘রাখাইন চাথ্রান’, ‘রাখাইন-বাংলা কথোপকথন’, ‘বাংলাদেশের রাখাইন পরিচিতি’, ‘রাখাইনালোক’ ইত্যাদি।
২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মংছিনসহ মোট ১৬ জনকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে পদক তুলে দেন। মংছেনচীং গবেষনায় একুশে পদক লাভ করেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মাননায় ভূষিত হলেন।
মংছেনচীং বলেন, ‘লেখালেখির স্বীকৃতি স্বরুপ আমার পর আমার সহধর্মীনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার রোকেয়া পদক পেয়েছেন। এর চেয়ে আনন্দের কি হতে পারে। আমাদের এরচেয়ে বেশি আর চাওয়া নেই। আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন। ’
১৯৬১ সালের ১৬ জুলাই কক্সবাজার জেলায় রাখাইন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। প্রয়াত বাবা-মা উ-অংচাথোয়েন ও ড-মাক্যচীংয়ের ৫ ছেলে এবং ১ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মংছেনচীং।
মংছেনচীং জানান, আমার বড় ভাই প্রয়া উথোচীং তিনি লেখালেখি করতেন। তার কাছ থেকে আমার মূল অনুপ্রেরণা। ভাইয়ের দেখাদেখি আমিও লেখালেখির চর্চা শুরু করি। ’ কক্সবাজার কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর বাইবেল বিষয়ে ডিপ্লোমা পাস করেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
এএটি