ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

৭০৯তম প্রদর্শনীতেও বাজিমাত করলো ‘কঞ্জুস’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৮
৭০৯তম প্রদর্শনীতেও বাজিমাত করলো ‘কঞ্জুস’ মঞ্চনাট্য ‘কঞ্জুস’ ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: পুরনো ঢাকার এক ধর্ণাঢ্য পরিবারে কর্তা। অনেক ধন-সম্পদ থাকলেও চুরি হওয়ার ভয়ে মানুষকে জানাতে চান না তিনি। তার কাছে পৃথিবীর সবকিছুর থেকে মূল্যবান বস্তু হলো টাকা। যৌতুকের ভয়ে তিনি মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন ৫০ বছর বয়স্ক এক বন্ধুর সঙ্গে।

আর যুবক ছেলেকে বিয়ে দিতে চান এক বিধবা নারীর সঙ্গে। আচার ব্যবহার, চাল-চলন, সামাজিক রীতিনীতি সবকিছুতেই কিপ্টেমির চরম সীমায় তার অবস্থান।

এ চরিত্রের কারণে এলাকাবাসী তার নাম দিয়েছে ‘কঞ্জুস’।

বর্ণনাটি ছিলো মঞ্চনাট্য ‘কঞ্জুস’র কেন্দ্রীয় চরিত্র হায়দার আলী খানের। শুক্রবার (০৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে মঞ্চায়িত হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এ মঞ্চনাট্যটির ৭০৯তম প্রদর্শনী।

‘মিলি মৈত্রীবন্ধনে গড়ি সংস্কৃতির সেতু’ স্লোগানে সাত দিনব্যাপী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী নাট্যোৎসব-২০১৮’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

নাটক শুরুর আগে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে দর্শকের দীর্ঘ লাইন। বাংলা নাট্যজগতে কমেডির আরেক নাম ‘কঞ্জুস’ দেখার জন্য স্পটে জমতে থাকে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়।

শুরু হওয়ার পর পুরো নাটক জুড়েই দর্শকদের দম ফাটানো হাসির রোলে ভাসতে দেখা যায়। প্রতিটি চরিত্র, প্রাণবন্ত নাট্য-আবহ ও প্রতিটি সংলাপে দর্শকরা ফেটে পড় হাসিতে।

নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘কঞ্জুস’ বা হাড়কিপ্টে চরিত্রে ছিলেন হায়দার আলী খান। তার বয়স ষাট পেরিয়ে সত্তর ছুঁই ছুঁই। ছেলে কাযিম আলী খান ও মেয়ে লাইলি বেগমকে নিয়ে তার সংসার। কোনো এককালে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে লাইলির সঙ্গে পরিচয় হয় বদিউজ্জামান ওরফে বদি মিয়ার।

প্রেমের টানে বদি মিয়া ছুটে আসেন লাইলির ঠিকানায়। তাকে পাওয়ার জন্য খাস চাকর হয়ে যান হায়দার আলী খানের। এদিকে ছেলে কাযিম আলী খান প্রেমে পড়েন পাশের বাড়ির মর্জিনা বেগমের। কাযিম ও মর্জিনার প্রেম যখন তুঙ্গে, তখন হায়দার আলীর চোখ পড়ে মর্জিনার ওপর।

ষাটোর্ধ হায়দার আলী খান মর্জিনাকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যান। নাটকটির মূল আকর্ষণ আসে বাপ-ছেলের এ প্রেম দ্বন্দ্বের কাহিনীতে।

‘গোলাপজান’ ঘটকের মাধ্যমে মর্জিনার সঙ্গে হায়দার আলীর বিয়ের কথাবার্তা গোপনে এগোতে থাকে। কাযিম বিষয়টি জানতে পারলে বাপের ওপর চটে যান। তিনি জানেন তার বাপের প্রধান দুর্বলতা ‘অর্থ’; শেষে বাড়ির কাজের ছেলে লাল মিয়ার সঙ্গে এক হয়ে হায়দার আলী খানের লুকিয়ে রাখা ২০ লাখ টাকা চুরি করেন কাযিম। ভালোবাসার মানুষ মর্জিনাকে বাপের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এ টাকাকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন কাযিম আলী খান। বাপ-ছেলের এ প্রেম দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় নাটকটির কাহিনী।

নাটক দেখে ফিরে আসা রাজু আহাম্মেদ বলেন, ‘বর্তমানে মানুষ মঞ্চনাট্য বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। মঞ্চনাট্যের প্রতি আকর্ষণ তৈরির জন্য এরকম একটি নাটকই যথেষ্ট। একবার দেখার পরও আকর্ষণ থেকে গেছে নাটকের কাহিনী ও চরিত্রের প্রতি। ’

রূপান্তরিত এক নাটক কঞ্জুস। এর মূল লেখক জিন-বাপতিস পোকলিন। সপ্তদশ শতকের একজন ফরাসি নাট্যকার ও অভিনেতা। এ নাট্যকার-অভিনেতারই মঞ্চ নাম ছিলো মলিয়ের।

মলিয়েরকে তার সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ হাস্য-প্রহসন নাট্য রচয়িতা। ফরাসি ভাষায় ‘লা’ ‘ভা’, ইংরেজিতে ‘দ্য মাইজার’ আর বাংলা রূপান্তরে নামকরণ হয় ‘কঞ্জুস’। লোক নাট্যদলের প্রযোজনা ‘কঞ্জুস’।

১৯৮৭ সালে প্রথম মঞ্চস্থ হওয়া নাটকটির রূপান্তর করেছেন তারিক আনাম খান। নির্দেশনা দিয়েছেন লোক নাট্যদলের অধিকর্তা লিয়াকত আলী লাকী।

বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৮
এসএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।