ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শামসুল আরেফীনের লোকগবেষণা প্রসঙ্গে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৯
শামসুল আরেফীনের লোকগবেষণা প্রসঙ্গে ‘আস্কর আলী পণ্ডিত: একটি বিলুপ্ত অধ্যায়’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ

শামসুল আরেফীন চট্টগ্রামের সন্তান, বহুমাত্রিক লেখক ও গবেষক। লোকসাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। 

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা সদর এলাকায় ১৯৭৭ সালের ২০ নভেম্বর শামসুল আরেফীনের জন্ম। পিতার নাম আবদুল মোবিন ও মাতা  তমনারা বেগম।

পিতামহ মৌলবি সৈয়দ আবু তালেব পুঁথির অনুরাগী ছিলেন। শামসুল নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে গবেষণার কাজে যুক্ত হন।  

লোকগবেষণার কাজে যুক্ত হয়ে শামসুল আরেফীন কুড়িয়ে পেয়েছেন সাহিত্যের দুর্লভ রত্ন ভাণ্ডার। তার আবিষ্কৃত বিস্মৃতপ্রায় লোককবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন আস্কর আলী পণ্ডিত। শামসুল আরেফীন তার অনেক গান ও একাধিক পুঁথি উদ্ধার করেন। পরে সেগুলো আলোচনা ও সম্পাদনার মাধ্যমে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন।  

আস্কর আলী পণ্ডিতকে নিয়ে শামসুল আরেফীনের প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো: আস্কর আলী পণ্ডিত: একটি বিলুপ্ত অধ্যায় (২০০৬), আস্কর আলী পণ্ডিতের দুর্লভ পুথি জ্ঞান চৌতিসা ও পঞ্চসতী প্যারজান (২০১০), আস্কর আলী পণ্ডিত: ৮৬ বছর পর (২০১৩)। গ্রন্থত্রয় প্রকাশিত হয় চট্টগ্রামের বলাকা প্রকাশন থেকে।  

শামসুল আরেফীনের আবিষ্কৃত লোককবিদের মধ্যে অন্যান্যরা হলেন: ঈছা আহমেদ নক্সবন্দি, খাদেম আলী, মুন্সী আমিন শরীফ, মোরশেদ চাঁদ দরবেশ, দলিলুর রহমান পণ্ডিত, আব্দুর রশিদ, আবদুল খালেক, ক্ষেমেশ চন্দ্র রক্ষিত, হেফাজতুর রহমান খান, আবদুল জব্বার মীমনগরী, মকবুল আহমদ পণ্ডিত, শাহ্ আবদুল জলিল সিকদার, আমানুল্লাহ, আতর আলী, আবুল খায়ের নক্সবন্দি, মোজহেরুল আলম ওরফে ছাহেব মিয়া, আবদুস সবুর মাখন, গোলাম গণি চৌধুরী, সাইদ মিয়া, আবদুল আজিজ পণ্ডিত, আতিকউল্লা শাহ্, আবদুল লতিফ শাহ্, আবদুল্লাহ বাঞ্জারামপুরী, বজলুল করিম মন্দাকিনি, শেখ মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন, কাজল শীল, বাদশা আলম, ফকির ইয়াছিন শাহ্, করিম শাহা, আফতাব উদ্দিন প্রমুখ।  

তিনি আলী রজা ওরফে কানু ফকিরকে নিয়েও গ্রন্থ প্রকাশ করেন। আলী রজা আঠারো শতকের কবি। তিনি ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের আনোয়ারার ওশখাইন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। জীবদ্দশায় তিনি রচনা করেন অনেক পুঁথি।

যেমন: জ্ঞানসাগর, আগম, রাহাতুর রুহ্, তারিফে রাসুল, যোগ সাধন, তাওফায়ে মকবুল ও ফজায়েলে রাসুল, অমরসিং, ষটচক্রভেদ, ধ্যানমালা, রাগতাল নামা,  ইসলাম নামা, খাবনামা, রফিকুচ্ছালেকীন,  কিতাবে চেহেল হাদিছ ও মছায়েল, খোতবায়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা, বয়ানে শবে বরাত ও শবে ক্বদর, তনের বিচার, রাগনামা,  কিতাবে জরুরে মুকাল্লেদ, কিতাবে তাজহিজে তাকদ্বীন, আহকামুচ্ছালাত, সৃষ্টিপত্তন, হাতেম তাঈ, তাওফায়ে হেদায়তুল এজাম, আওরাদে আছানি, ছালাতুল মোক্তাদি, সিরাজ কুলুপ, যোগকালন্দর, শাহনামা (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), জ্যোতিষ নামা প্রভৃতি। এছাড়া তিনি অনেক গানও রচনা করেন।

লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরার সঙ্গে লোকগবেষক শামসুল আরেফীনমুন্সী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সংগ্রহ ও সম্পাদনায় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে আলী রজার জ্ঞানসাগর পুঁথিটি কলকাতা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রথম প্রকাশ করার পরে তিনি আঠারো শতকের শক্তিমান কবি হিসেবে বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত হন। সাহিত্যবিশারদের পরে ড. আহমদ শরীফ আলী রজার একাধিক পুঁথি সম্পাদনা করেন। পরবর্তীতে শামসুল আরেফীনই আলী রজাকে নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্ম সম্পাদন করেন। তিনি আলী রজার জীবন ও সাহিত্য নিয়ে দীর্ঘসময়ের গবেষণার ফসল হিসেবে ২০১৭ সালে প্রকাশ করেন ‘আঠারো শতকের কবি আলী রজা ওরফে কানু ফকির’ গ্রন্থ।  

লোককবি আবদুল গফুর হালীকে নিয়ে  স্থানীয় দৈনিকে শামসুল আরেফীনের ‘ড. হান্স হারডারের গবেষণায় আধ্যাত্মিক গানের সাধক আবদুল গফুর হালী’ শীর্ষক লেখা প্রকাশিত হয়। এটি পরবর্তীতে আরেফীনের ‘বাঙলাদেশের লোককবি ও লোকসাহিত্য’ (২য়-৪র্থ খণ্ড) গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১২ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের বিস্মৃতপ্রায় লোকসঙ্গীত’ (১ম খণ্ড) গ্রন্থেও হালীর দুইটি সঙ্গীতগ্রন্থ ‘জ্ঞানজ্যোতি’ ও ‘তত্ত্ববিধি’ সম্পাদনা করেন তিনি।  

শামসুল আরেফীন ‘রুবাইয়াত-ই-আরেফীন’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অফ বাংলাদেশ ওয়ার অফ লিবারেশন প্রজেক্ট, এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ’ কর্তৃক নিযুক্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তথ্যসংগ্রাহক ও গবেষক।

প্রভাংশু ত্রিপুরা: বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮
এসি/টিসি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।