শুক্রবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকী (বাইশে শ্রাবণ) উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘সমুখে শান্তি পারাবার’ স্মরণানুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কামাল লোহানী বলেন, আজকে শাস্ত্রীয় সংগীতের কি দুর্দশা।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কবিগুরু ছাড়া আমরা কোনোদিনও বাঁচতে পারবোনা। কবিগুরু শুধু আমাদের গানে, কবিতায় কিংবা উপন্যাসে নয়, তিনি আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম ও প্রাত্যহিক জীবন যাপনেও আছেন। একথা মনে রেখেই আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে স্মরণ করতে হবে।
স্মরণানুষ্ঠানের শুরুতেই দেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতগুরু ও বাংলা খেয়ালের স্রষ্টা ড. আজাদ রহমানকে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা’র পক্ষ থেকে স্মারক সম্মাননা দেওয়া হয়। সঙ্গীতগুরু আজাদ রহমানের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বরেণ্য সাংবাদিক কামাল লোহানী।
এসময় সঙ্গীতগুরু আজাদ রহমান তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ভাষাতেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, ভাষা ছাড়া মানুষের আছে কি? ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই এদেশের জন্ম। শুধুমাত্র শব্দ প্রকাশের জন্য আমরা রক্ত দেইনি। আমরা বহু প্রাণ বিসর্জন দিয়েছি ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। বন্দুক-বোমা-কামান সবকিছুই হেরে গেছে মায়ের ভাষার হৃদয়ের সুরের কাছে।
‘আমার কোনো গানে কোনো বিশেষ ধর্মের কথা বলিনি। সবসময় মানবতার কথা বলেছি। যারা আমাকে সম্মান দিয়েছেন, তারা বাংলা ভাষাকে সম্মান দিয়েছেন। সম্মান দিয়েছেন ৫২ ও ৭১ এর বীর শহীদদের। মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান দেওয়াই আমাদের সবার কর্তব্য। ’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সম্মাননা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই অনুষ্ঠানটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার সহ-সভাপতি মকবুল হোসেন এবং সভাপতির বক্তব্য রাখেন সংস্থার সভাপতি ও কণ্ঠশিল্পী তপন মাহমুদ।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মরণানুষ্ঠানের প্রথম দিনের সূচনা হয় ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ সমবেত সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে।
প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে সংস্থার অর্ধশতাধিক শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন গান পরিবেশন করেন। এছাড়াও ছিল বেশ কয়েকজন আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পীর কণ্ঠে গান ও কবিতা আবৃত্তি।
প্রথম দিনে একক সংগীত পরিবেশনায় অংশ নেন- সালমা আকবার, রাবিতা সাবাহ, সীমা সরকার, দীপা চৌধুরী, মাহজাবীন রহিম মৈত্রী, মিতা দে, তনুশ্রী ভট্টাচার্য, আঁখি হালদার, মীরা মণ্ডল, সুবাহ আকবর, রুমঝুম বিজয়া রিসিল, সুমা রায়, সাজেদ আকবর, গোলাম হায়দার, জয়ন্ত আচার্য্য, শফিকুর রহমান, বিষ্ণু মণ্ডল, নকুল চন্দ্র দাস, জীবন চৌধুরী, অভিক দে, আবদুর রশিদ, কাজল মুখার্জি, সাগরিকা জামালী, মতিউর রহমান, রমা মণ্ডল, খোকন দাস, বনানী দত্ত, তন্বী সাহা প্রমুখ।
একের পর এক পরিবেশিত হয়- আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা, তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে, তুমি নব নব রূপে এসো, মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, আমার প্রাণের পরে, কতোবার ভেবেছিনু, জীবন মরণের সীমানা, শ্রাবণ বরিষণ পার হয়ে, দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়, নিবিড় ঘন আঁধারে, ভরা থাক স্মৃতির সুধায়, ওগো তুমি পঞ্চদশী, আসা যাওয়ার পথের ধারে, পথের শেষ কোথায়, মাটির বুকের মাঝে, আমার এ পথ চাওয়াতেই আনন্দ, আমি বন্ধু বাসনায়, লহো লহো তুমি লহো, আমার যাবার বেলায়সহ আরও অনেক গান।
আগামী শনিবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় দ্বিতীয় দিনের মতো এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিনই হবে অনুষ্ঠানের শেষ দিন। যেটি সবার জন্য উন্মুক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৯
আরকেআর/এসএ